নরসিংদীতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সরকারি ওষুধ

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০১৬, ১২:২২

এম লুৎফর রহমান, নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদী জেলার ফার্মেসিগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সরকারি ওষুধ। হাসপাতালের একশ্রেনির কর্মচারী এসব ওষুধ বাইরে পাচার করছেন। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা ওষুধ পান না। অথচ খোলা বাজারে এসব সরকারি ওষুধ বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
হাসপাতালের ওষুধ মানুষ যাতে সহজে চিনতে পারে সে জন্য সরকার ওষুধের গায়ের রং পরিবর্তন করে সবুজ ও লাল করেছে। পাশাপাশি ওষুধের প্যাকেটের  গায়ে ‘সরকারি সম্পদ বিক্রি করা দ-নীয় অপরাধ’ লেখা হয়েছে। কিন্তু থামছে না এর অবাধ বিক্রি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি ফার্মেসিতে কম-বেশি সরকারি ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। তবে সবার কাছে নয়, ক্রেতা বুঝে এসব ওষুধ গছিয়ে দেন দোকানিরা।
কবির হোসেন হাসপাতাল থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে ফার্মেসিতে ওষুধ আনতে পাঠালেন তার স্ত্রীকে। ওষুধ আনার পর তিনি দেখেন এগুলো সরকারি ওষুধ।
রফিকুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা জানান, এক ফার্মেসিতে স্যালাইন চাইলে তিনি সরকারি হাসপাতালের স্যালাইন ধরিয়ে দেন। সরকারি হাসপাতালের ওষুধ চিনে ফেলায় ফার্মেসির বিক্রেতা তার কাছ থেকে দাম কম রাখেন। তিন টাকা করে ১০ প্যাকেট স্যালাইন কেনেন রফিকুল ইসলাম।
তবে সরকারি ওষুধ বিক্রির কথা অস্বীকার করেছেন এসব ফার্মেসির মালিকরা।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ওষুধ পাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়সহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিতরণযোগ্য প্রোভেরা ইজেকশনসহ বিক্রয় নিষিদ্ধ ভারতীয় ওষুধ পেরিয়াকটিন, গাইনোকোসাইড, কুইন ভ্যাক্সিন, টিটাগাম, সিয়ালিস, টেট্রাক্স, ওনাগ্রা, হটেগ্রা, টারগেট, ডানো টিটি ভ্যাক্সিন, ম্যাক্সম্যান নামীয় বিপুল পরিমাণ ওষুধ এবং ঘনচিনিসহ মোট ২১ ধরনের ওষুধ বিক্রি হয় অনেক ফার্মেসিতে।
পাশাপাশি বিক্রয় নিষিদ্ধ গরু মোটাতাজাকরণ ও যৌন উত্তেজক ওষুধসহ বিভিন্ন ভারতীয় ওষুধও অবাধে বিক্রি হচ্ছে ফার্মেসিতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ দেশের জন্য যে পরিমাণ স্বাস্থ্যসেবা থাকার কথা, তা আমরা অর্জন করতে পারিনি। এর পেছনে মূল কারণ আমাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও অনৈতিকতা। প্রায়ই দেখা যায়, সরকারি ওষুধ পাচারকালে বিভিন্ন হাসপাতালের লোকজন ধরা পড়ছে। এসব ওষুধ সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দিতে পারলে তাদের অনেক সুবিধা হয়।’ তবে সবাই এখন সচেতন হচ্ছে এবং পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালোর দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
বিভিন্ন ফার্মেসিতে সরকারি ওষুধ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য-প্রমাণ এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হয় না।’ তিনি আরো জানান, লোকবল সংকটের কারণে সব সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত  পরিচালনা সম্ভব হয় না তাদের পক্ষে।
(ঢাকাটাইমস/১অক্টোবর/মোআ)