ফরিদপুরেও ১০ টাকা কেজি দরের চাল পাচ্ছে ‘বিত্তশালীরা’

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:৫৫ | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৪১

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ আওতায় জেলার নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই তালিকায় এলাকার স্বচ্ছ্বল বলে পরিচিত ব্যক্তিদের নাম এই তালিকায় উঠলেও যাদের জন্য এই কর্মসূচি, সেই হতদরিদ্ররাই বাদ পড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর রামনগর ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস ফকির, উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক সৈয়দ আলী, সাবেক চেয়ারম্যান কাইমুদ্দিন মন্ডল, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ  চক্রবর্তীসহ পরিবেশকরা আনুষ্ঠানিকভাবে চাল বিক্রি উদ্বোধন করেন।

উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের এক হাজার দুইজন সুবিধাভোগী পরিবারের  মধ্যে চাল বিতরণের জন্য দুইজন পরিবেশন নিযুক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন রামনগর ইউনিয়নের গজগা গ্রামের ছরোয়ার মোল্যা ও শহিদুল ইসলাম।

প্রতি মাসের শুক্র, শনি ও মঙ্গলবার সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত চাল বিক্রি করা হবে। একজন ব্যক্তি মাসে একবার চাল তুলতে পারবেন।

সরেজমিনে গিয়ে চাল বিতরণের সময় দেখা গেছে, ইউনিয়নের গজগা গ্রামের গেদা তপাদার, ওসমান খান, জলিল মাতুব্বরসহ বেশ কিছু ব্যক্তি ‘স্বচ্ছ্বল ব্যক্তি’  লাইনে দাঁড়িয়ে চাল নিচ্ছেন।

রামনগর ইউনিয়নের এক হাজার দুইজন সুবিধাভোগীর মধ্যে ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের  মনোরঞ্জন দাস,  মোসলেম কারিকর, হারুন কারিগর, বকুল পরামাণিক, কুঞ্জনগর গ্রামের সেফার মাতুব্বর, রাধানগর গ্রামের সামাদ সিকদার, গজগা গ্রামের ফারুক ম-লসহ এলাকার শতাধিক স্বচ্ছ্বল হিসেবে পরিচিত ব্যক্তির নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এদের অনেকের বাড়িতে পাকা ভবন রয়েছে, কেউ আবার ব্যবসায়ী ও অনেক জমির মালিক।

স্বচ্ছ্বলদের নাম অন্তর্ভূক্ত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুবিধাবঞ্চিতরা। ইউনিয়নের কুঞ্জনগর গ্রামের স্বামীহারা নারী রওশন আরা বেগম এবং জমেলা বেগম, গজগা গ্রামের বিধবা ছবুরন বেগম, গোপালপুর গ্রামের পিতৃহারা কুদ্দুস হোসেন, রাধানগর গ্রামের ভ্যান চালক লিয়াকত খান, রামনগর গ্রামের ভুমিহীন করিম মোল্যা,  গৌর চন্দ্র মালো, রাধানগর গ্রামের বিল্লাল ফকির, গজগা গ্রামের ভুমিহীন নুরু শেখ, মাসুদ ম-ল, জয়নাল হোসেন, গোপালপুর গ্রামের মালোসহ এলাকায় অনেকেই হতদরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও তালিকায় তাদের নাম উঠেনি।

গজগা গ্রামের ছবুরন বেগম বলেন, ‘গরিবগো জন্যি শেখের বেটি চাইল পাঠাইছে। কিন্তু রামনগরে ১০ টাকা কেজি দামের গরিবের চাইল যাইতাছে বড়লোকদের পেটে।’    

এই বিষয়ে নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের পরিবেশক ছরোয়ার হোসেন ও শহিদুল ইসলাম জানান, হতদরিদ্রদের নামের তালিকা করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস ফকির। তারা জানান, বিষয়টি নিয়ে কথা উঠলে চেয়ারম্যান সাহেব কিছু তালিকা পরিবর্তন করেন। তবে এখনো তালিকায় শতাধিক স্বচ্ছ্বল ব্যক্তির নাম রয়েছে।

রামনগর ইউপির চেয়ারম্যান কুদ্দুস ফকির এ বিষয়ে বলেন, ‘এক হাজার তালিকা করতে গেলে কিছু ঊনিশ বিশ হয়। এটা দোষের বিষয় না।’ তিনি বলেন, ‘এখন গ্রামে আগের মতো হতদরিদ্র লোক পাওয়া মুশকিল। সবাই এখন অনেকটা স্বাবলম্বী হয়ে গেছে।’ তালিকায় অনিয়মের বিষয়ে বলেন, ‘সামান্য কোনো অনিয়ম হলে সেটা আমার ইচ্ছাকৃত না। মেম্বারদের (সদস্য) নিজ নিজ এলাকার তালিকা জন্য বলা হয়েছিলা। এখন আমার পক্ষে তালিকাভুক্তদের যাচাই করা কি সম্ভব?’

নগরকান্দা উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক সৈয়দ আলী বলেন, দকোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।’

ঢাকাটাইমস/৩অক্টোবর/ডব্লিউবি