শেষ হলো কটিয়াদীর ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে এবারও বসেছে দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন ঢাক-ঢোলের হাট। দুর্গাপূজা উপলক্ষে কটিয়াদী সদরের পুরাতন বাজার মুক্তিযোদ্ধা অফিসের পাশে এ হাট বসেছে। প্রতিবছরের মতো এবারও পাঁচশ বছরের ঐহিত্য ঢাক-ঢোলের হাট গত বুধবার শুরু হয়ে শুক্রবার সমাপ্তি ঘটেছে।
তিন দিনব্যাপী ঢাকের হাটের শেষের দিন দুপুরে স্থানীয় সাংসদ অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব আইনউদ্দিন, কটিয়াদি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জনশ্রুতি আছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় সর্বপ্রথম তার রাজ প্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে চারিপাড়া গ্রামে ছিল রাজার প্রাসাদ। আজও রাজার আমলে খনন করা কোটামন দীঘিটির মনোরম দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। পূজা উপলক্ষে রাজাপ্রাসাদ থেকে সুদূর বিক্রমপুর (মুন্সিগঞ্জ) পরগনার বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠানো হয়। ঢাক-ঢোল বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের জন্য সে সময় নৌপথ ব্যবহার করা হতো। বাদ্যযন্ত্রীরা কটিয়াদী-মঠখোলা সড়কের পাশে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাটে পূজার দুই দিন আগে এসে পৌঁছাতেন। পরবর্তীতে পাশের মসুয়া গ্রামে বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরি কিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িতে মহা ধুমধামে পূজা শুরু হয়। সেই সঙ্গে চলে বিভিন্ন পূজার বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা। দিনদিন পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জমিদারদের মধ্যে ঢাকের হাটের স্থান নির্ধারণ নিয়ে দ¦ন্দ্ব শুরু হয়। অবশেষে যাত্রাঘাট থেকে স্থান পরিবর্তিত হয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী কটিয়াদী পুরোনো বাজারে প্রেসক্লাবের সামনে বিরাট ঢাকের হাট গড়ে উঠে।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক দুর্গাপূজার আয়োজক এই হাট থেকে পূজার দু-একদিন আগে ভাড়ায় বায়না দিয়ে বাদ্যযন্ত্রীদের নিয়ে যায়। আজও বিক্রমপুর ভাটি অঞ্চল, কুমিল্লার হাওর অঞ্চল থেকে শতশত বাদ্যযন্ত্রী এ হাটে আসেন। ঢাক-ঢোল, সানাই, বিভিন্ন ধরনের বাঁশি, কাঁসিসহ হাজার হাজার বাদ্যযন্ত্রের পসরা বসে এখানে। নাচসহ বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে বাদ্যযন্ত্রীরা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে থাকেন। সাধারণত একটি ঢাক ১০ হাজার, ঢোল ৭-৮ হাজার, বাঁশি প্রকারভেদে ছয় হাজার থেকে আট হাজার, ‘ব্যান্ডপার্টি’ ছোট ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার এবং বড় ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়। বাদ্যযন্ত্রীরা পূজাম-পে বাজনা বাজিয়ে দর্শক ও ভক্তদের আকৃষ্ট করে থাকেন। বাংলাদেশের আর কোথাও এ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের হাট নেই।
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিবছর পূজার আগে আগত বাদ্যযন্ত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নেই। ফলে নানা সমস্যায় ভুগতে হয়।
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদি-পাকুন্দিয়া) আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, পাঁচশ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট কটিয়াদী উপজেলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য একটি স্থায়ী শেড নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। শিগগির এ সমস্যার সমাধান হবে।
(ঢাকাটাইমস/৭ অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)
মন্তব্য করুন