মুছে গেছে নলকূপের আর্সেনিক সতর্কতা, পান চলছে নির্বিচার

রেজাউল করিম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:৫৩

নীরব ঘাতক আর্সেনিকোসিস, যা আসে আর্সেনিক থেকে। ভুগর্ভ থেকে গভীর বা অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠে উঠে আসে এই বিষ। প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম বা এর বেশি পরিমাণ আর্সেনিক থাকলে তা খাওয়ার অনুপযোগী হিসেবে বিবেচিত হয়।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে দেশব্যাপী আর্সেনিক জরিপের অংশ হিসেবে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার পাঁচটিতে আর্সেনিক জরিপের কাজ করা হয়। ওই সময় আর্সেনিক নিয়ে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। কিছু নলকূপে লাল দাগ দিয়ে সেগুলোর পানি ব্যবহারে সতর্কতা জারি করে দায়িত্ব শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। আর্সেনিকমুুক্ত নলকূপে দেয়া হয় সবুজ দাগ যেগুলোর পানি ব্যবহারযোগ্য।

কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় নলকূপ থেকে মুছে গেছে সেই লাল-সবুজ সংকেত। এখন আর্সেনিকযুক্ত কিংবা আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ বাছাইয়ের সুযোগ নেই। ফলে সাধারণ মানুষ নির্বিচারে সব নলকূপের পানি পান করছে। এতে আর্সেনিক নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ (সদ্য বদলি) ডা. আব্দুল্লাহ আল রতন বলেন, প্রতি লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রামের বেশি পরিমাণ আর্সেনিকযুক্ত পানি দীর্ঘদিন পান করলে এ রোগ হয়। পানি পান করার সঙ্গে সঙ্গে রোগের উপসর্গ দেখা যায় না, দীর্ঘদিন পর শরীরে এ রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। আর্সেনিকে আক্রান্ত হলে চর্মরোগ থেকে শুরু করে মরণব্যাধি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।

আর্সেনিক জরিপের পর কেটে গেছে ১৩ বছর। ২০০৩ সালের পর জেলার নতুন কোনো নলকূপের পানি আর পরীক্ষা করা হয়নি। আর্সেনিক আছে কি নেই তা না জেনেই পান করতে হচ্ছে নলকূপের পানি। সরকারি বা বেসরকারিভাবে আর্সেনিক পরীক্ষার নতুন কোনো উদ্যোগও চোখে পড়েনি।

জলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সালে আর্সেনিক প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার পাঁচটি উপজেলার শতভাগ নলকূপে আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয়। বাকি সাতটি উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা করা হয়নি। যে পাঁচটি উপজেলার আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয় তার প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওই পাঁচ উপজেলার ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭৪১টি নলকূপের পানি পরীক্ষা করে ১৮ হাজার ৬২৯টিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া যায়। তখন ওই সব নলকূপ লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়, যাতে এগুলোর পানি কেউ ব্যবহার না করে। কিন্তু এখন আর কোথাও লাল রং নেই। ফলে নির্বিচারে আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের পানি পান করছে মানুষ, যা থেকে ভবিষ্যতে আর্সেনিকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ওই সময়ে আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয়েছিল জেলার দেলদুয়ার উপজেলাতেও। উপজেলার মঙ্গলহোড় গ্রামের মহর আলী, মীর ইয়াকুব আলী, সাঈদ মিয়া, তাইজুদ্দিন, কালু মিয়া ও মো. সেলিম মিয়ার বাড়ির নলকূপে আর্সেনিক পাওয়ায় সেগুলোতে লাল রং করা হয়েছিল। সেলিম ও ইয়াকুব বলেন, তারা বাড়ির নলকূপ দুটি নিজ খরচে উঠিয়ে নতুন জায়গায় বসিয়েছেন। তবে সেগুলো পরে আর পরীক্ষা করা হয়নি। অন্যরা আগের মতোই আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে।

মহর আলী বলেন, অনেক আগে আর্সেনিক পরীক্ষা করে তার নলকূপে লাল রং করা হয়েছিল। কিন্তু পানি পান করে কোনো অসুবিধে না হওয়ায় এখন পর্যন্ত নলকূপটি আর সরানো হয়নি।

তৎকালীন আর্সেনিক পরীক্ষা প্রকল্পের দেলদুয়ার উপজেলার একটি ব্লকের সুপারভাইজার হালিম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ছিল আর্সেনিকযুক্ত নলকূপ বাছাই করে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা। এর পরে আর কোনো প্রকল্পে আমাদের ডাক পড়েনি। বাছাই করা নলকূপের জন্য কোনো পদক্ষেপও নিতে দেখিনি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলী আজগর ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি ছয় মাস হলো টাঙ্গাইলে এসেছি। লাল রং করা নলকূপের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছি কি না আমার জানা নেই। তবে নলকূপগুলো ১০০ ফুট গভীরে স্থাপন করলে আর্সেনিক থাকে না। বর্তমানে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, নতুন নলকূপ স্থাপনের সময় অবশ্যই নলকূপের পানি পরীক্ষা করে নিতে হবে। অনেকেই পরীক্ষা করে নিচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, টাঙ্গাইল একটি বৃহৎ জেলা। এই জেলার মানুষের সুপেয় পানি নিশ্চিত করার জন্য এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ ল্যাব প্রয়োজন।

এদিকে নলকূপের পানি পরীক্ষার যে সুযোগ রয়েছে, সেটা জানে না অনেকেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ না জেনেই পান করছে আর্সেনিকযুক্ত পানি। নতুন করে নলকূপের পানির আর্সেনিক পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়ে বিশুদ্ধ পানি পান নিশ্চিত করার দাবি স্থানীয় সাধারণ মানুষের।

(ঢাকাটাইমস/১৪অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :