বিকল্পহীন শেখ হাসিনা

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৬, ১৬:৪৪ | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:৩৬

আরিফুর রহমান দোলন

অবাক হই। যখন শুনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় নিয়মিতই রান্না করেন। বিস্ময়ের ঘোর কাটে না, যখন জানতে পারি নাতিপুতিরা খাবেন বলে শেখ হাসিনা নিজ হাতে মাছ কাটেন। পরিষ্কার করেন। তারপর পরম মমতায় রান্না করে পরিবেশন করেন। দারুণ আলু ভর্তা করেন, পরোটা বানান, প্রিয় আচার তৈরি করেন নিজ হাতে। এখনো। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন। ফজরের নামাজ পড়ে দিন শুরু করেন। কখনো নামাজ কাজা করেন না। সাত সকালে জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রগুলো নিয়ে বসেন প্রতিদিন। প্রয়োজনীয় নোট নেন। তাৎক্ষণিক কিছু নির্দেশনাও সংশ্লিষ্টদের দেন। এভাবেই চলে সারা বছর। এই শেখ হাসিনার কি কোনো তুলনা আছে?

পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। এ যেন স্বপ্নের মতো। কেউ ভাবেনি। বিরোধীরা নেতিবাচক তালি বাজাতে চেয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসও নাকি নেতিবাচক ছিলেন এই ব্যাপারে। বহুমুখী বিরোধিতা ছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তাবৎ নেতারাও ছিলেন নিরাশ। হাল ছাড়েননি একজন। শেখ হাসিনা। বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করবেন। করে ছাড়ছেন। এই সংকল্প, এমন সদিচ্ছা, উন্নয়নের জন্য এমন অদম্য মনোভাব বাংলাদেশের আর কোনো নেতৃত্বের মধ্যে নেই। কখনো ছিল না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া। এ কারণেই শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের চেয়েও যুদ্ধাপরাধের বিচার করার কাজটি ছিল কঠিন। অনেক প্রতিবন্ধকতা, দেশি-আন্তর্জাতিক হুমকি, ধামকি ছিল। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ। অনেকেই ভাবতে পারেননি সত্যি সত্যি যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে। হয়েছে, হচ্ছে। কারণ শেখ হাসিনার অনমনীয় মনোভাব। এ ব্যাপারে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

সারা দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে চোখে পড়ার মতো। স্কুল-কলেজে নারী শিক্ষার্থী ৫০ শতাংশের ওপরে। গ্রামাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। জঙ্গি দমনে সরকার ও আওয়ামী লীগের শতভাগ আন্তরিকতায় বহির্বিশ্বও সন্তুষ্ট। দারিদ্র্য দূরীকরণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আজ বিশ্বমডেল। বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি চীনের প্রেসিডেন্ট এসে বাংলাদেশকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে গেলেন। এক সময়ের বিভ্রান্ত বিশ্বব্যাংক ভুরু কুঁচকে থাকার পর এখন বাংলাদেশের প্রশংসায় গলা ফাটাচ্ছে। বিনা আমন্ত্রণে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশে এসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে দারুণ এক বার্তা দিলেন। বোঝালেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভুল ভেঙেছে। সঠিক পথেই এগুচ্ছেন শেখ হাসিনা।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার দিয়েছে জাতিসংঘ। ওই সংস্থাই ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ দিয়ে বাংলাদেশকে অনুকরণের কথা বলছে অন্য দেশগুলোকে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় আজ বছরে প্রায় ১ হাজার চারশ ডলার। এমন অসংখ্য অর্জন বাংলাদেশের হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের ভীষণ দরকার। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে যেমন দরকার আওয়ামী লীগের, তেমনি দেশবাসীর।

শেখ হাসিনা সঙ্গীতপ্রেমী। রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীতের দারুণ ভক্ত তিনি। শুনেছি যিনি গান করেন এবং যিনি গান শোনেন কোনো খারাপ চিন্তা তাঁকে আচ্ছন্ন করতে পারে না। আসলেই তো। শেখ হাসিনা তো সারাক্ষণ কাজ করেন। লিখছেন, পড়ছেন। নীরবে-নিভৃতে অসহায় হাজারো কর্মীর, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসার দায়িত্ব নিচ্ছেন কারো না কারো। এই যেমন রাজধানীর নিমতলীতে আচমকা অগ্নিকাণ্ডেমুহূর্তেই এতিম হয়ে যাওয়া তিন মেয়েকে নিজের মেয়ের স্বীকৃতি দিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তাদের বিয়ে দিলেন তিনি। নিয়মিতই তাদের খোঁজ নেন। এমন অসংখ্য পরিবারের দায়িত্ব শেখ হাসিনার কাঁধে। তিনি বিরক্ত হন না। বরং আরো কিছু করতে না পারার আক্ষেপ করেন কখনো-সখনো। এই মানবিক নেত্রী আমরা আর কোথায় পাব!

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলা পছন্দ আমার। খেলতাম, দেখতামও। কর্মব্যস্ততায় এখন প্রায়শই দেখা হয় না, বাংলাদেশের খেলাও মাঝেমধ্যে মিস করি। কিন্তু অনন্য শেখ হাসিনা। দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও বাংলাদেশের খেলা থাকলে টেনশন করেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে খবর নেন। এমনকি মাঠেও ছুটে যান। উৎসাহ দিতে, অনুপ্রেরণা জোগাতে। এটি আসলেই বিরল ঘটনা। এমন ক্রীড়ামোদী প্রধানমন্ত্রী, রাজনৈতিক নেত্রী কখনো দেখা যায়নি। মাউন্ট এভারেস্ট জয় করলে মুসা ইব্রাহীমকে ডেকে অভিনন্দিত করেন শেখ হাসিনা। আবার ওয়াসফিয়া নাজরীন, নিশাত মজুমদারকে অভিনন্দন জানান। পটুয়াখালীর চতুর্থ শ্রেণির স্কুল শিক্ষার্থী শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের চিঠির জবাব লিখে শেখ হাসিনা আসলেই চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দেখান তিনি তুলনাহীন। শিশু শীর্ষেন্দু খরস্রোতা পায়রা নদীতে সেতু নির্মাণের আর্জি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে শীর্ষেন্দুকে লেখা চিঠির জবাব পাঠিয়ে শেখ হাসিনা বুঝিয়ে দেন তিনি দেশকে, দেশের প্রতিটি মানুষকে কতখানি ভালোবাসেন।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় সকল নদীর নাম শেখ হাসিনার মুখস্থ। কি সোমেশ্বরী, কি পায়রা। ওই প্রসঙ্গে যাব না। শেখ হাসিনাই সম্ভবত সেই প্রধানমন্ত্রী যিনি একনেকে উপস্থাপন হওয়া বিভিন্ন প্রকল্প প্রস্তাব আগেভাগে বিস্তারিত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন। গত বছরের একটি ঘটনা। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশের উত্তরাঞ্চলে বাঁধ ও সড়ক নির্মাণের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে। প্রকল্পটি একনেকের যে বৈঠকে উপস্থাপন হবে তার আগের রাতে একনেকের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান তিনি ওই প্রকল্প প্রস্তাব পড়েছেন কি না। এরপর প্রধানমন্ত্রী কনসালট্যান্টের অধিক ব্যয় প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমি পড়েছি এবং বিস্তারিত দেখেছি। আপনি একটু দেখবেন এবং আমাকে বলবেন এ ধরনের প্রস্তাব আদৌ পাস হওয়া উচিত কি না। মন্ত্রী বিস্তারিত দেখলেন, পড়লেন। নোট দিলেন। দেখলেন, প্রধানমন্ত্রী যা যা বলেছেন, প্রশ্ন তুলেছেন যথার্থ। একনেকে ওই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী নাকচ করে দিলেন। ওই মন্ত্রী গর্বভরে বলেন, এই হলেন আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী। এই হলেন শেখ হাসিনা। যিনি নিরন্তর কাজের মাধ্যমে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যাচ্ছেন।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে কার না ভালো লাগে। প্রায়শই শুনি। গত বছরের জানুয়ারিতে চ্যানেল আইয়ে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার জন্মদিন উপলক্ষে একটি লাইভ অনুষ্ঠানে তার গান শুনছিলাম। গানের ফাঁকে ফাঁকে টেলিফোনে দর্শক-শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছিলেন জনপ্রিয় এই সঙ্গীত শিল্পী। থ হয়ে গেলাম। যখন প্রশ্নকর্তা স্বয়ং শেখ হাসিনা। কোনো প্রটোকল ভাবনা নেই। সঙ্গীত শ্রোতা শেখ হাসিনা রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে তাঁর গান ভালো লাগার কথা বললেন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন। পছন্দের গান শোনানোর অনুরোধ করলেন। এমন রুচিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব আমরা আর কোথায় পাব?

আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে শেখ হাসিনা দলের নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, ৩৫ বছর। অনেক তো হলো আর কত? আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেও এই কথা বলেছেন তিনি। বলছেন। কিন্তু শেখ হাসিনার কি কোনো বিকল্প আছে? নেই। দলেও নেই। সরকারেও নেই।

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীতে হেফাজতে ইসলাম যে তাণ্ডব চালিয়েছিল এবং একে কেন্দ্র করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের যে চেষ্টা হয়েছিল তাতে অনেক বড় মন্ত্রী- নেতাও ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। অনেকেই পিছু হটেছিলেন। ঘাবড়াননি শেখ হাসিনা। একাই সব সামলেছেন। দেশকে রক্ষা করেছেন। দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, উন্নয়ন তা আসলেই চমকে যাবার মতো। এত সাহস, এত স্পৃহা আর কোনো নেতা দেখাতে পারবেন না। শেখ হাসিনা পারেন। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। আপনাকে অভিবাদন শেখ হাসিনা। আপনার জন্য অনেক দোয়া। আপনাকে থাকতেই হবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, দেশের নেতৃত্বে। আমরা আরো এগিয়ে যেতে চাই। দুর্বার গতিতে। দুর্মুখকেও বলতেই হবে, শাবাশ বাংলাদেশ। অবাক তাকিয়ে রয়। জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।
 

লেখক : সম্পাদক, সাপ্তাহিক এই সময়  ও ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর.কম