পর্যটনবর্ষের কারণে আমাদের কার্যক্রম বেড়েছে

অপরূপ চৌধুরী
| আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৬, ১৫:৪৪ | প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর ২০১৬, ১৫:২০

কিছু উগ্রবাদী হামলায় দেশের পর্যটনখাত নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে মন্দাভাব কাটাতে খুব একটা সময় লাগবে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরী। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী ও শাহাজালাল রোহান।

পর্যটনখাতের এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে কী বলবেন?

সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটনবর্ষ হিসেবে ঘোষণা করলেও আমরা তেমন সফলতা পাইনি। এটা যেমন সত্য, তেমনি এর পেছনে যৌক্তিক কারণও রয়েছে। গুলশানে ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা ও রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি হত্যাকা-ের পর দেশের পর্যটনখাতে ব্যাপক ধাক্কা লাগে। সর্বশেষ গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় এখাতে মন্দাবস্থা তৈরি হয়। অনেক বিদেশি পর্যটক তাদের সিডিউল বাতিল করেন। এ কারণে আশানুরূপ সাফল্য আসেনি।

লক্ষ্য থেকে কতটা দূরে আছেন?

লক্ষ্যমাত্রা থেকে আমরা অনেক পেছনে। সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটনবর্ষ হিসেবে ঘোষণার পর ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ লাখ বিদেশি পর্যটককে দেশে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। নিরাপত্তা শঙ্কায় বিদেশিরা তেমন আসেনি। তারা অনেকেই পূর্বনির্ধারিত সিডিউলও বাতিল করেছে। এ কারণে টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ২০১৬ সালের এই ৯ মাসে তিন লাখ বিদেশি পর্যটক এসেছে। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ। তবে বাকি দুই বছরে আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারব বলে আশা করছি।

মন্দাবস্থা কাটাতে কী করছেন? আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশকিছু ফাইভ স্টার, ফোর স্টার হোটেল করেছি। পদ্ধা সেতুর কাজ শেষ হলে সুন্দরবনের দিকে ট্যুরিজম বেড়ে যাবে। এ জন্য মংলাতে একটা ফোর স্টার হোটেল এবং খুলনা স্টেডিয়ামের পাশে একটা হোটেল করছি। এই দুটি সম্পন্ন হলে আমাদের ওই অঞ্চলগুলোতে পর্যটক বেড়ে যাবে। ২০১৬ সালকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যটনবর্ষ ঘোষণা করার পরই আমাদের কার্যক্রম অনেক বেড়ে যায়। আমরা ঢাকা ও এর বাইরে ইভেন্ট ক্যালেন্ডার করেছি, যা ধরে ধরে প্রোগ্রাম করছি।

বিদেশিদের আশ্বস্ত করা যাচ্ছে? কূটনৈতিকভাবে ও বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে আমার একটা মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করছি, বাংলাদেশ এখন নিরাপদ। যতটা তারা মনে করছে ততটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। বাঙালি জাতির একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমরা অতিথিপরায়ণ। আমাদের গ্রামের গেলে কোনো অতিথি অন্তত খালি মুখে ফেরে না। অন্তত এক খিলি পান খেয়ে আসে। আমাদের দেশ অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ এই বার্তাটি আমরা বিদেশিদের দেওয়ার চেষ্টা করছি।

পর্যটকদের নিরাপত্তায় কি উদ্যোগ আছে? নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা এখন সতর্ক। পুলিশের একজন ডিআইজির নেতৃত্বে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। আরো জনবল বাড়ানো হচ্ছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন, পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার বিষয়টি দেখেন আপনারা। দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ আছে। এ অভিযোগ আগে থাকলেও এখন নেই। ট্যুরিস্ট পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন থাকলেও আমরা যখনই চাই তখনই তাদের পাই। এ নিয়ে এখন কোনো অভিযোগ নেই বলে আমার কাছে মনে হয়।

আমরা সেন্টমার্টিনে গেলে যে খরচ হয় তা দিয়ে ভারতের দার্জিলিং ঘুরে আসা যায়। এই দিকটি নিয়ে কী বলবেন? আমাদের দুই ধরনের ব্যবস্থা আছে। কর্পোরেটদের জন্য এক রকম। নিম্ন বা মধ্যম আয়ের পর্যটকদের জন্য এক রকম। পর্যটন করপোরেশনের দুই ধরনের হোটেলের ব্যবস্থা আছে। একটা একটু দামি, অন্যটা তুলনামূলক অনেক কম। এখন সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি হোটেল সোনারগাঁও খাবেন না রাস্তার পাশে একটা হোটেলে খাবেন।

আমাদের দেশে অনেক পর্যটন কেন্দ্র আছে, যেসব মানুষ জানছে না। আমরা ৮০০টি ট্যুরিস্ট স্পষ্ট চিহ্নিত করেছি। এর সবকটিই প্রাকৃতিক। এগুলোর হাই-ডেফিনেশন ছবি থাকবে। সিলেটে অলরেডি বের হয়ে গেছে। এগুলোর সফটভার্সন বের হবে। বিভিন্ন দূতাবাসে আমরা এসব পাঠিয়ে দেব। আর দেশের বিভিন্ন জায়গায় এগুলো প্রচার করা হবে।

অনেক দেশ ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করছে। আমাদের সরকারও এ পর্যন্ত ৭০টি দেশকে অন অ্যারাইভাল ভিসা দিচ্ছে। তবে সরকার এখন এসব বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক। কারণ দেশে বেশ কয়েকটি হামলায় উদ্বেগ তৈরি করেছে। এখন ঢালাও ভিসা দিলে যে বিদেশি জঙ্গি আসবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে সরকার ই-ভিসা চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে। এটা চালু হলে বিদেশি পর্যটক বাড়বে।

পর্যটনখাতের সম্ভাবনা নিয়ে আর কী পরিকল্পনা আছে? ইতিমধ্যে সরকার পর্যটনবর্ষ ঘোষণা করেছে। সরকার এখাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। ট্যুরিজম সরঞ্জামাদি আনার ক্ষেত্রে সরকার ট্যাক্স ফ্রি করে দিচ্ছে। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েও কাজ হচ্ছে। রেললাইন যাচ্ছে কক্সবাজার পর্যন্ত, আমাদের বিমান বহরের সঙ্গে বেশকিছু প্রাইভেট বিমান যোগ হয়েছে। যোগাযোগের পথ যে সহজ হচ্ছে এগুলো সরকারের একটি বিশেষ উদ্যোগ। সব মন্ত্রণালয় এখাতে সহযোগিতা করছে। কারণ পর্যটন এমন একটা সেক্টর যেখানে ১০০ ডলার আয় করলে ১০০ ডলারই এ দেশে থাকবে। অন্যখাতে ১০০ ডলার আয় করলে ৬০ ডলারই বিদেশে চলে যায়। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীও চেষ্টা করছেন এখাতের ব্যাপক উন্নয়নের। এটা এমন একটা সম্ভাবনা সেক্টর।

ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/এসআর/এমএম/এমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :