‘রাজার হালে’ ঘুরছেন সেই সিদ্দিক মিয়া
নৌকা আর রিকসার মিশেল তার বাহনটি। সে কারণে নয়, এই বাহনের মালিক বঙ্গবন্ধু অন্তঃপ্রাণ সিদ্দিক মিয়ার নাম ছড়িয়েছে তার দলের প্রতি ভালোবাসার কারণেই। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দাওয়াত পাওয়ার কথা না অজপাড়া গাঁয়ের সিদ্দিকের। তিনি তা পানওনি। তবু ভালোবাসার টানে ছুটে এসেছেন নেত্রকোণা থেকে। আর পাঁচদিন প্যাডেল চালিয়ে তার সেই ‘নৌকা রিকসা’টি তিনি নিয়ে এসেছেন ঢাকায়।
আওয়ামী লীগের সম্মেলন চলার সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে অবস্থানকারী সিদ্দিক মিয়াকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। এর এসব প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু আর আওয়ামী লীগের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দেখা পাওয়ার বাসনা।
একবার ছোটবেলায় বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলেন সিদ্দিক মিয়া। সেই থেকে মানুষটার জন্য তার সে কী মায়া। এখনও বঙ্গবন্ধুর কথা ভেবে তিনি কাঁদেন। দলের প্রতি, বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা মুগ্ধ করেছে হাজারো পাঠককে। ঘটনাটি জেনেছেন আওয়ামী লীগের নেতারাও। জেনেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও।
সিদ্দিকের ভাষায়, টিহট (সম্মেলনে ঢুকার পাস, যাকে টিকিট ভেবেছেন তিনি) না থাকায় সম্মেলন স্থলে ঢুকতে পারেননি। কিন্তু মত মানুষের জন্য দলের কর্মসূচিতে যেতে কি আর টিকিট লাগে? সিদ্দিকের কথা গণমাধ্যমে প্রচারের পর তাই সব জায়গায় বিনা বাধায় যাওয়ার ‘টিহট’ পেয়ে গেছেন তিনি।
সিদ্দিক এখন তার ‘রিকসা নৌকা’ নিয়ে যেখানে খুশি সেখানেই যাচ্ছেন, না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, না স্বেচ্ছাসেবী, কেউ তাকে বাধা দিচ্ছে না। তিনিই ঘুরছেন ‘রাজার হালে’ই।
একজন পুলিশ সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা তাকে চিনতে পেরেছি। গতকাল প্রায় সব মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে খবর ছাপা হয়েছে। তাই আমরা তাঁর চলাচলে কোনো বাধা দিচ্ছি না।’
‘টিহট’ না থাকায় যে সিদ্দিক মিয়া আগের দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকতে পারেননি, তাকে আজ সকালে পাওয়া গেলো ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনের সামনে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে ওই এলাকায় মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রিত। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও যারা গেছেন, তারাও নির্দিষ্ট। এই তালিকায় ছিলেন না সিদ্দিক। কিন্তু তিনি অবলীলায় চলে গেছেন সেখানে।
এখানে এসে কেমন লাগছে?-জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে সিদ্দিক মিয়া বলেন, ‘অহন অনেক বালা লাগতাছে। আমারে বেক (সব) জায়গাত ডুকত দেয়।’
সিদ্দিক মিয়ার কথাতেই বোঝা গেলো, তাকে নিয়ে প্রচার হওয়া সংবাদের কারণে তার পরিচিতি এখন অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমারে দেইক্যা অনেকে কয়, চাচা আফনেরে নেয়া তো নিউজ অইছে। ফুলিশ অখন আর আমারে কিছু কয় না।’
শিশুপার্কের সামনে সম্মেলনে ঢোকার ভিআইপি গেটের কাছে সিদ্দিক মিয়ার ‘নৌকা রিকসা’থামতেই তাঁর সঙ্গে ছবি তোলার জন্য ভিড় জমে গেল। দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশ সদস্য এ সময় বললেন, ‘চাচা আপনাকে আমরা চিনতে পেরেছি। গতকাল প্রায় সব মিডিয়ায় আপনাকে নিয়ে নিউজ হয়েছে। আপনার যেখানে যেতে ইচ্ছে করে সেখানে চলে যান। তবে গেটের কাছে দাঁড়াবেন না। কারণ আপনি যেখানে দাড়ান সেখানেই ভিড় লেগে যায়। ’
পাশ থেকে কাউন্সিলর যোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘চাচা এই ছোট ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে এসেছেন ওদের তো কষ্ট হয় না?’। সিদ্দিক মিয়া জবাব দিলেন, ‘ আমার ফুলারা বড় অইয়া কইবো, আমার বাফে আম লীগের জন্য এইরম ফাগল আছিন। হেরার (তাদের) মনের মইদ্যে আম লীগ ডুহাইয়া দেয়া যায়াম।’
তবে প্রায় আট বছর ধরে যার সান্নিধ্য পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছে সিদ্দিক মিয়া, এখনও সেই বঙ্গবন্ধু কন্যার দেখা পাননি। এ ব্যপারে সিদ্দিক মিয়াকে কয়েক জনকে বললেন, ‘আপনি এখানে আছেন, প্রধানমন্ত্রী শুনলে তো ডেকে নিয়ে যাবে।’
শুনেই সিদ্দিক মিয়ার ঝলমলে চোখ খুশিতে আরও ঝলমল করে উঠলো। মুখে অকৃত্রিম হাসি। এ যেন অনেক কিছু প্রাপ্তির হাসি।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু কন্যাকে একটি বার দেখতে...
(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/জেআর/ডব্লিউবি)