বাংলা সাহিত্যে ড. দীনেশচন্দ্রের অবদান আকাশছোঁয়া: অর্থমন্ত্রী
বাংলার লোক-সাহিত্যে অবদানের জন্য ময়মনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক ও সম্পাদক অধ্যাপক ড. রায়বাহাদুর দীনেশচন্দ্র সেনের প্রশংসা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
তিনি বলেছেন, এক সময় বাংলার লোক-সাহিত্য ও লোকগীতি হারিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় ড. দীনেশচন্দ্র সেন গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে প্রাচীন বাংলার পুঁথি সংগ্রহ করেন এবং বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করেন। গ্রাম বাংলার লোক সাহিত্য বিশ্ব দরবারে ঠাঁই করে দিয়েছেন ড. দীনেশচন্দ্র সেন। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান আঁকাশছোয়া বলে মনে করেন আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
আজ বৃহস্পতিবার বিকালে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মানিকগঞ্জের কৃতি সন্তান আচার্য ড. দীনেশচন্দ্র সেনের সার্ধশততম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জতিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন ও মানিকগঞ্জ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন গবেষক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ।
এসময় মানিকগঞ্জের মানুষের বিভিন্ন দাবির প্রতিক্রিয়ায় আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল করে দেয়ার জন্য প্রস্তুত। সেই লক্ষে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যেহেতু মানিকগঞ্জ ড. দীনেশচন্দ্র সেন, অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত সেনসহ অনেক মানিকের জন্মস্থান,তাই অন্যসব জেলার চেয়ে এই জেলার আবেদন আলাদা। যত দ্রুত সম্ভব ২৫০ শয্যা হাসপাতালের লোকবল নিয়োগ দিয়ে সেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস, জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন, পৌর মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিম, সিভিল সার্জন ডা. ইমরান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার তোবারক হোসেন লুডু ও মানিকগঞ্জ সাত্যি ও সাংকৃতিক পরিষদের সভাপতি আজহারুল ইসলামসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
অতিথিদের বক্তব্য শেষে সন্ধ্যায় এক মনোজ্ঞ সাংকৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
দীনেশচন্দ্র সেন ১৮৬৬-এর ৩রা নভেম্বর মানিকগঞ্জের বগজুড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি সুয়াপুর, ধামরাই, ঢাকা। পিতা মানিকগঞ্জ আদালতের উকিল ঈশ্বরচন্দ্র সেন। দীনেশচন্দ্র সেন মাত্র বারো বছর বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৮৯৬ সালে দীনেশচন্দ্রের পুথিসংগ্রহ, পুথিপাঠ এর সময় তাঁর কর্মজীবনে এবং গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন পর্বের সূচনা হয়। তিনি উপাচার্য স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আহবানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হন।
প্রথমে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ পরীক্ষার বাংলা বিষয়ের পরীক্ষক (১৯০৫), পরে রীডার পদে (১৯০৯) নিযুক্তি লাভ করেন। ১৯১০ সালে মনোনীত হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য। ১৯১১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর History of Bengali Language and Literature গ্রন্থ। এ গ্রন্থের জন্য তিনি পাশ্চাত্যের গবেষক ও সাহিত্য-সমালোচকদের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘রামতনু লাহিড়ী রিসার্চ ফেলোশিপ’ পেয়ে (১৯১৩) তিনি মৈমনসিংহ-গীতিকাসহ পূবর্ববঙ্গ-গীতিকা (চার খন্ড, ১৯২৩-১৯৩২) এবং এর ইংরেজি ভাষ্যে Eastern Bengal Ballads (চার খন্ড, ১৯২৩-১৯৩২) সংকলন ও সম্পাদনা করেন।
বাংলাদেশের সমৃদ্ধ লোকসাহিত্য বিলুপ্তি থেকে উদ্ধার এবং এ সাহিত্য বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপনের লক্ষ্যে গ্রন্থ প্রণয়নে তিনি অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর এসব সাহিত্যকর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তোলে এবং তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়।
১৯২০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য’ নামে একটি নতুন বিভাগ খোলা হলে দীনেশচন্দ্র সেন এ বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন। এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি প্রয়োজনীয় পাঠ্যগ্রন্থও প্রণয়ন করেন। বারো বছর তিনি যোগ্যতার সঙ্গে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করে ১৯৩২ সালে অবসর নেন।
সৃজনশীল লেখক হিসেবেও দীনেশচন্দ্র সেন পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলা সাহিত্য বিষয়ে গবেষণামূলক ও ইতিহাসধর্মী গ্রন্থ প্রণয়ন, পৌরাণিক আখ্যান রচনা, লোকসাহিত্য সম্পাদনা ও বাঙালির ইতিহাস প্রণয়নের পাশাপাশি তিনি রচনা করেন কবিতা, উপন্যাস ও গল্প। সব মিলে তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা ৬০।
(ঢাকাটাইমস/২৭অক্টোবর/প্রতিনিধি/ইএস)
মন্তব্য করুন