চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর দাপটে ‘অসহায়’ অন্যরা

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:১০ | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৬, ১১:৫৯

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ থেকে

মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারী আব্দুল করিমের কারণে অতিষ্ঠ চিকিৎসকসহ কর্মকর্তারা। তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তারা। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারীকে সরাতে গিয়ে গলদঘর্ম হয়ে উঠেছেন অন্যরা।

ভুক্তভোগীরা জানান, ঊর্ধ্বতন চাকুরেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, চাঁদা দিতে বাধ্য করা এমনকি হাসপাতালের টাইলস নিজের বাড়িতে ব্যবহার করার অভিযোগ আছে এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয় না অজ্ঞাত কারণে।  তার ‘হয়রানি’র কারণে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক শাহ আলমের কাছে অভিযোগও করেছেন হাসপাতালের কর্মীরা।

২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সদর হাসপাতালের পিয়ন (এমএলএসএস) শহীদকে সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বদলি করে সেখানকার পিয়ন আব্দুল আলীমকে সদর হাসপাতালে বদলি করে আনা হয়। এরপর থেকেই তার ‘যন্ত্রণা’ শুরু হয়। ওই বছরের নভেম্বরই ২৫০ শয্যা হাসপাতালের টাইলস থেকে ১৮০ টি নিজের বাড়ির বাথরুমে লাগানোর অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।

সদর হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন থেকে মাসে একশ থেকে দুইশ টাকা করে কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বেতন কাঠামোর ফিকশেসন বাবদ একেক জনের কাছ থেকে তিনি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা করে আদায় করেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এই হিসাবে হাসপাতালের ১০০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকে আব্দুল করিম আদায় করেছেন প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা।

হাসপাতালের একজন ওয়ার্ড বয় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রতিমাসে বেতন তুলতে গেলে করিমকে একশ টাকা দিতে হয়। যদি না দিতে চাই, তাহলে নানাভাবে হয়রানি হতে হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন একজন সেবিকা বলেন, ‘আব্দুল করিমের জ্বালায় হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অতিষ্ঠ। এই করিমের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেও লাভ হয় না।’

হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকও একই কথা জানিয়েছেন। তারা জানান, শুধু বেতন থেকে টাকা কেটে রাখা নয়, করিমের বিরুদ্ধে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কাছ থেকে ওভার টাইমের ৩৫ শতাংশ টাকা কেটে রাখার অভিযোগ রয়েছে।

হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, পরিস্কার, পরিছন্নতা বাবদ বছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে বাজেট আসে তার প্রায় পুরোটাই আত্মসাত করেন আব্দুল করিম। আর এর একটি ভাগ চলে যায় হাসপাতালের একজন কর্মকর্তার পকেটে।

আব্দুল করিম নিজেকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের সাবেক এপিএস শামসুল আলমের নিকটাত্মীয় বলে পরিচয় দেন। তার বাবা আব্দুল রহমত আলী এক সময় সদর হাসপাতালের পিয়ন ছিলেন। প্রায় দেড় যুগ আগে তিনি মারা গেলে ওই পদে আব্দুল করিমকে চাকরি দেওয়া হয়। পড়ে তাকে কর্মস্থল দেওয়া হয় দৌলতপুর হাসপাতালে। পওে সেখান থেকে প্রেষণে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে চলে আসেন তিনি। এরপর প্রধান অফিস সহকারী হয়ে ওঠেন তিনি।

চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হয়েও চিকিৎসকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আছে করিমের বিুরদ্ধে। এক বছর আগে চিকিৎসক এস এম মাসুদ ও হেলাল উদ্দিনের রোগী দেখার কক্ষ তালাবদ্ধ করে দেন তিনি। এ সময় হাসপাতালে রোগী দেখা বন্ধ হয়ে যায়। পড়ে হাসপাতালের সিভিল সার্জন ও আবাসিক মেডিকেল  অফিসার বিষয়টি মীমাংসা করে দেন।

আব্দুল করিম অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে অপপ্রচার বলছেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘এক শ্রেণির ডাক্তার ও কর্মচারীদের নানা অনিয়ম প্রচরয় না দেওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।’

মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) লুৎফর রহমান বলেন, ‘ আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন ইমরান আলী বলেন,  আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তার কাছে কেউ করেনি। তবে বিষয়টি এর আগে লোকমুখে তিনি শুনেছেন। তিনি বলেন ‘এর আগেও পত্র পত্রিকায় আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে নিউজ হয়েছে, নিউজের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘আমার প্রশ্রয় পেয়ে হাসপাতালের কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী অনিয়ম, দুর্নীতি করবে এমন দুঃসাহস কারও নেই।’

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন বলেন, ‘এ বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সিভিল সার্জনের। সিভিল সার্জন দেখছেন কি না তা আমরা ক্ষতিয়ে দেখবো। প্রধান অফিস সহকারী আব্দুল করিম যদি কোন অন্যায় করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঢাকাটাইমস/২৮অক্টোবর/ডব্লিউবি