অসময়ে ভাঙছে যমুনা, সারিয়াকান্দিতে আতঙ্ক

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
| আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০১৬, ১১:৫৭ | প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর ২০১৬, ১০:৪৬

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ফের ভাঙন দেখে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে সারিয়াকান্দি বন্দর রক্ষায় কার্যকরী কালিতলা গ্রোয়েনটির উত্তর পাশের ২০মিটার স্লোব নদীগর্ভে ধসে পড়েছে। অসময়ের এই ভাঙনে সিসি ব্লক সরে যাওয়ায় গ্রোয়েনটি হুমকির মুখে পড়েছে। এর ফলে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষেদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রতি বছর যমুনা নদীর ডানপিঠ সংরক্ষণের জন্য শত শত কোটি সরকারি বরাদ্দ পেলেও ভালোমানের কাজ করে না। যতটুকু কাজ করে তা নামমাত্র। নদীপারের লোকজন জানান, যমুনার ভাঙন ঠেকাতে তাদের ব্যয় কোন কাজেই আসছে না। একের পর এক বসতবাড়ি, আবাদি জমি চলে যাচ্ছে যমুনার গর্ভে। এতে রাতারাতি হাজারো মানুষ নি:স্ব হচ্ছে। লম্বা হচ্ছে ভিটেহারা মানুষের তালিকা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তীব্র স্রোতের কারণে সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের মথুরাপাড়া বাজারের দক্ষিণ পাশ থেকে শুরু করে উপজেলার শেষ সীমানা কামালপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অব্যাহত ভাঙনে ফসলি জমি, বিভিন্ন স্কুল ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। হঠাৎ করে ওই এলাকার গ্রোয়েনটির স্লোব ধসে যাওয়ায় গ্রোয়েন সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর বসবাসকারী কয়েকশ পরিবার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, ভাঙন রোধে সারিয়াকান্দি বন্দর রক্ষায় ২০০০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রোয়েনটি নির্মাণ করেছিল। এরপর থেকে কয়েক বছর গ্রোয়েনটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হলেও জনবল সংকটের কারণে গ্রোয়েনটির ঠিকমতো তদারকি করা হয়নি। পাউবোর সিরাজগঞ্জ বিশেষায়িত (পত্তর) বিভাগের অধীনে সারিয়াকান্দি বিশেষায়িত (পত্তর) উপ-বিভাগ কালিতলা গ্রোয়েন ও দুটি হার্ড পয়েন্ট রক্ষণাবেক্ষণ করত। কিন্ত গত পাঁচ বছর ধরে জনবল না থাকায় এই উপ-বিভাগটি অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে।

গত ৩ বছরে সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কামালপুর ও বোহাইল ইউনিয়ন এলাকায় নদীর ডান তীর ভেঙে যাওয়ায় যমুনা কমপক্ষে তিন কিলোমিটার লোকালয়ের দিকে এগিয়ে এসেছে। ভাঙন রোধে পাউবো ধলিরকান্দি থেকে রৌহাদহ-দড়িপাড়া পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি প্রকল্প শুরু করেছে। একই উদ্দেশ্যে নয়টি প্যাকেজে প্রায় ১২৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এই নয়টি প্যাকেজের কাজ চলতি বছরেই শেষ হচ্ছে। এরইমধ্য চলতি বছর থেকে একই উদ্দেশ্যে ২৬২ কোটি টাকা প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্য এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

পাউবোর কর্মকর্তাদের আশা, নদীভাঙন রোধে এসব প্যাকেজ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন হলে ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

কুতুবপুর ইউনিয়নের ধলিরকান্দি গ্রামের আব্দুল খালেক, চন্দনবাইশা এলাকার জহুরুল ইসলাম, কুদরত-ই-খুদা চাঁন ও আয়েশা বেগম জানান, ভাঙন প্রতিরোধে সরকারের বরাদ্দ করা টাকা যদি পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতো তাহলে এমন দশা হতো না।

কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরান আলী বলেন, এ বছর অব্যাহত ভাঙনের কারণে ধলিরকান্দি গ্রামের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমার ইউনিয়নসহ উপজেলার অনেক জায়গা-জমি নদীর পেটে চলে যাবে।

সারিয়াকান্দির বিশেষায়িত (পওর) উপ-বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফারুক আল মামুন জানান, জরিপ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সম্প্রতি বন্যায় গ্রোয়েনটির এরিয়ায় সিসি ব্লক সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

সিরাজগঞ্জ বিশেষায়িত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহিনুজ্জামান বলেন, গ্রোয়েনটি ধসে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮অক্টোবর/প্রতিনিধি/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :