মহানন্দায় পাথর-জীবনের লড়াই

প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:৪২ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:৫৫

এস কে দোয়েল, পঞ্চগড়

পঞ্চগড়ের সীমান্তঘেঁষা নদী মহানন্দায় পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের জীবন যেন পাথরেরই জীবন। দিনভর কঠিন শ্রমে তারা নদীর বুক থেকে তুলে আনে ঝুড়ি ঝুড়ি পাথর। সন্ধ্যায় মহাজনের কাছে বিক্রিলব্ধ অর্থে আহার জোটে স্ত্রী-সন্তান, পরিবার-পরিজনের। মহানন্দার এই পাথরে এভাবেই জীবন নির্বাহ হচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিকের।

কিন্তু জীবিকার এই লড়াইও নিরবচ্ছিন্ন থাকে না ওপারের বিএসএফের কারণে। প্রতিবেশী ভারতের সীমান্ত টহলদার বাহিনীর বাধা, তাড়া, মারধরের ঘটনা ঘটে। কখনো বা তাদের গুলি করে কেড়ে নেয় শ্রমিকদের কারও জীবন।

গত ২২ অক্টোবর বিএসএফ হঠাৎ করেই মহানন্দা থেকে শ্রমিকদের পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। অভিযোগ, সীমান্তের জিরোলাইন অতিক্রম করে পাথর তুলছেন শ্রমিকরা। এ ছাড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য ও গরু-মহিষ পাচারকে কেন্দ্র করেও বিভিন্ন সময় বন্ধ করে দেওয়া হয় পাথর উত্তোলন। আর তখন থমকে যায় শ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহের পথ।

শ্রমিকদের ভাগ্য বয়ে চলা উত্তরের এই মহানন্দা ভারতের  ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের তেঁতুলিয়ায় প্রবেশ করে ২০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে আবার ঢুকে গেছে ভারতে।  এর মূল উৎপত্তি ভারতের দার্জিলিংয়ের ২০৬০  মিটার উঁচু মহালিদ্রাম পাহাড়ে। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নদীর তীব্র ¯্রােতে ভেসে আসে ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের নুড়িপাথর। এই পাথরেই জড়িয়ে গেছে এ উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জীবন।

উপজেলার ১০ কিলোমিটার জুড়ে শ্রমিকরা দল বেঁধে বাতাসে ফুলানো গাড়ির চাকার টিউব, লোহার চালনি, পাথর শনাক্তের  জন্য লোহার রড নিয়ে কোথাও এক বুক, কোথাও বা হাঁটুপানির নিচ থেকে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করছেন। প্রতিদিনই চলে পাথর সংগ্রহের কাজ।  এসব পাথর কয়েক হাত ঘুরে সরবরাহ হয় সারা দেশে।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা দিনে একজন শ্রমিক গড়ে ২৫-৩০ সিএফটি পাথর তুলতে পারেন, যার বাজারমূল্য ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।

মহানন্দার পাথরের এই বিপুল কর্মকা-ে নারীরাও খুঁজে পেয়েছেন কর্মসংস্থান। তারাও পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি পাথর চালুনির কাজ করেন। পাথর নেটিং, ভাঙা, লোড-আনলোড কিংবা মাথায় ঢাকিতে করে স্তূপ করছেন তারা। তবে এসব নারী শ্রমিকের আঁচলে আসে দিনে দুই থেকে আড়াই শ টাকা।

শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো শ্রমে উত্তোলিত পাথরে শহরে শহরে গড়ে উঠছে আলিশান ভবন কিংবা বাড়ি। কিন্তু পাথরশ্রমিকদের ভাগ্যে সুফল মেলে এর সামান্যই।

মহনন্দার পাথর, বালু আর সিলিকা বালিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারলে বদলে যেতে পারে অর্থনীতির চাকা। তাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটবে হাজার হাজার বেকারের।

উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহিন বলেন, এই পাথর ও বালি কাজে লাগানোর জন্য সরকারিভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে শ্রমিকরা খুব লাভবান ও তাদের কর্মসংস্থানের সুবিধা হতো। আর এই নদী মহানন্দা হাজার হাজার মানুষের জীবিকার সন্ধান দিয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার খেটে খাওয়া মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে এ নদীর স্রোতে ভেসে আসা ছোট ছোট পাথর।

(ঢাকাটাইমস/২৯অক্টোবর/মোআ)