ওস্তাদের জামাকাপড় ধুয়ে ড্রাইভার হয়ে যায়

রমেশ চন্দ্র ঘোষ
 | প্রকাশিত : ০১ নভেম্বর ২০১৬, ০৮:১৯

সেভ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ এই দর্শন সামনে রেখে পরিবহন ব্যবসায় সক্রিয় শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সহ-সভাপতি হিসেবে দেশের পরিবহনখাতের সব কিছু নিয়েই ভাবতে হয় তাকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম গোলাম মোস্তফা।

পরিবহন ব্যবসায় সফল হওয়া যায় কিভাবে?

যেকোনো ব্যবসার মূল হচ্ছে সততা। দেশের প্রচলিত সব নিয়মকানুন মেনে ধীরস্থিরভাবে ধাপে ধাপে এগিয়ে গেলেই ব্যবসায় সফলতা আসবে। তড়িঘড়ি করলে কোনোদিন ব্যবসায় সফলতা আসবে না। অন্তত পরিবহন ব্যবসায় কখনো তা সম্ভব হবে না। নতুন যারা আসবে অনেক মূলধন নিয়ে এই ব্যবসায় আসতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিজ আর পরিবহন ব্যবসা এক নয়, দুটো ভিন্ন জিনিস। ইন্ডাস্ট্রিজ হলো কয়েকটি তলার মধ্যে সীমাবদ্ধ। দুটি দারোয়ান দিয়ে হাজার কোটি টাকা ইনভেস্ট করা যায়। অন্যদিকে পারবহনখাতে হাজার হাজার কোটি টাকা রাস্তায় থাকে। সুতরাং নতুন যারা এখানে আসবে, তারা এ পথে আসতে অনেক ভয় পায়। আমরা এই পর্যন্ত আসতে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি। চলার পথ অনেক পিচ্ছিল ছিল, দীর্ঘ চল্লিশ বছরের পথ পাড়ি দিয়ে এই পর্যন্ত এসেছি।

সড়কে চালকসহ সব পরিবহনকর্মী যাতে সতর্ক হয়ে কাজ করে, যাত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে, এ জন্য আপনারা কি করছেন?

সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য শুধু ড্রাইভার-সুপারভাইজারের ভূমিকা মুখ্য বিষয় নয়। এর সঙ্গে মালিকের দায়িত্ব আছে, সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটা ভূমিকা আছে। রাস্তা যারা তৈরি করে তাদেরও একটা ভূমিকা আছে। কোন জায়গায় রাস্তা বাঁক হবে, ডিভাইডার কোথায় দিবে। সবারই একটা ভূমিকা আছে। শৃঙ্খলার মধ্যে যারা থাকবে তাদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আর যারা উচ্ছৃঙ্খল তারাই পদে পদে বিপদে পড়ে। আমাদের বাসকর্মীদের আমরা কাউন্সিলিং করি, তোমাদেরও ছেলেমেয়ে আছে, গাড়ি ঠা-া মাথায় চালাবে। যেখানে-সেখানে ওভারটেক করবে না।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যাত্রীদের কি করা উচিত, তাদের প্রতি আপনাদের পরামর্শ কি?

‘সেভ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ এই স্লোগানটি মাথায় রাখলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। দেখুন যাত্রীরা আগের চেয়ে অনেক ভদ্র হয়ে গেছে। যাত্রীরা আগে যেমন উচ্ছৃঙ্খল ছিল, যে ড্রাইভার গাড়ি জোরে চালাত তাকে বাহবা দিত। এখন কিন্তু যাত্রীরা এই ড্রাইভারদের বাহবা দেয় না। ধীরস্থিরভাবে যে গাড়ি চালায় সেই গাড়িতে যাত্রীরা ওঠে, আর যে গাড়ি উচ্ছৃঙ্খলভাবে চালায় সেই গাড়িতে যাত্রী যেতে চায় না।

চালক, বাসকর্মী, বাসমালিক ও যাত্রীদের সম্পর্কোন্নয়নের জন্য কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

সেমিনার করা যেতে পারে, টেলিভিশনে খবরের মধ্যে বিজ্ঞাপন দেওয়া যেতে পারে। ‘সেভ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচার করা যেতে পারে। মাতলুব সাহেবের ‘একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না’ স্লোগান প্রচার করা যেতে পারে। শর্ট ফিল্ম দেখানো যেতে পারে। যেখানে দেখা যাবে, একটি দুর্ঘটনায় লোক পঙ্গু ও নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এগুলো করলে অনেক কাজে আসবে। আমরা মালিকরাও যাত্রীসেবা কত ভালো দিতে পারি, এর জন্য আমাদেরও অনেক কাজ করে যেতে হবে।

সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের আরো কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের অনেক কাজ করতে হবে। খারাপ রাস্তা, ভাঙাচোরা রাস্তাগুলো ভালো করে দিতে হবে। বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় ডিভাইডার দেওয়া, যে সব স্কুল-কলেজের সামনে বাঁক আছে সেখানে সিম্বল দেওয়া, মেইন রাস্তায় ওঠে আসার জায়গায় সিম্বল দেওয়া। দেখেন এখন ঢাকা শহরে সরাসরি কোথায় ইউটার্ন নেওয়া যায় না। মিশুক মনির যেখানে মারা গেছেন, সেখানে বাঁকটি ঠিক করে দেওয়ায় আর সেখানে দুর্ঘটনা হয় না। ব্লাক স্পটগুলোতে কাজ করলে অবশ্যই একটা সুফল আসবে।

ট্রাফিক বিভাগের সেবা নিয়ে কি বলবেন?

আমি আপনি সবাই স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কাজে আসছি। কিন্তু ড্রাইভারদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তারা ওস্তাদ ধরে এই লাইনে আসছে। ওস্তাদের জামাকাপড় ধুয়ে দিয়েছে, গাড়ি ধুয়ে দিয়েছে, এভাবেই এক সময় ড্রাইভার হয়ে গেছে। তারা ট্রাফিক আইন ঠিকভাবে রপ্ত করতে পারে না।

আমার মতে প্রতিটি জেলায় সরকারিভাবে একটি করে ড্রাইভিং ইনস্টিটিউট করা উচিত। সবাই বিবিএ, এমবিএ পড়তে চায়, কিন্তু টেকনিক্যাল পারসন বের হয়ে আসছে না। দেশের রাস্তাঘাট ভালো করছেন সরকার, ইনস্টিটিউট করলে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও ড্রাইভিংয়ে আসতে পারে। তাতে অসংখ্য কর্মসংস্থান হবে এই সেক্টরে।

সব আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ি ভাংচুরে গিয়ে ঠেকে, এ নিয়ে কী বলবেন?

এটা সামাজিক অবক্ষয়। ফুটবল খেলায় হেরে গেছে, দেখেন রাস্তায় গিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করছে। স্বামী-স্ত্রী মহল্লার মধ্যে গ-গোল লাগছে দেখেন রাস্তায় গিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করছে। আমরা সরকারের কাছে বলব, রাস্তার ধারে যেন অবৈধ হাট-বাজার না থাকে। তারপরও এই সব বিষয় সয়ে গেছে, এসবের মধ্যেই আমাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :