পেশা বদলাচ্ছে সিরাজদিখানের মৃৎশিল্পীরা

সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
| আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০১৬, ১৭:০৮ | প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর ২০১৬, ০৮:১৮

বংশপরম্পরায় চলে আসা পেশার আয় দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পেশা বদল করছেন মৃৎশিল্পীরা। তারা এখন জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্য পেশায় আগ্রহী হয়ে পড়ছে।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় মাটির তৈরি হাড়ি পাতিলের চাহিদা ক্রমেই কমে আসছে বলে জানান এলাকার একাধিক কুমার শিল্পী। এক সময় এ পেশায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পীরা। হরেক রকম মাটির জিনিস তৈরি করতেন। পুরুষের পাশাপাশি এ কাজ করছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও। কাজ চলছে কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত। তবে আধুনিকতার আগ্রাসনে এখন এ কাজে তেমন লাভ নেই। পেটের দায়ে এবং বাপ-ঠাকুরদার দীর্ঘদিনের পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এখনও এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন তারা।

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ১৭৮টি গ্রামের চিত্র এটি। এ গ্রামে মৃৎ শিল্পের ইতিহাস শত বছরের এক সময় এখানকার কুমারদের সুনিপুণ হাতে তৈরি মাটির জিনিসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাশের জেলাগুলোর হাটবাজারেও বিক্রি হতো এখানকার তৈরি জিনিসপত্র। কিন্তু কালের বিবর্তনে মাটির তৈরি হাড়ি পাতিলের চাহিদা কমতে থাকে। তার জায়গা দখল করে নেয় অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক-মেলামাইন ও সিলবারের সামগ্রী। এক সময়ের রান্নাঘরের হাড়ি, কড়াই, বদনা, ঢাকুন, ফুলের টব, কলস, পিঠার ছাচ, মুড়ি ভাজার সামগ্রী তৈরি করে গৃহস্থালির চাহিদা মেটানো সেই সব কুমারের অধিকাংশেরই চাকা (মাটির সামগ্রী তৈরি করা যন্ত্র) বন্ধ হয়ে গেছে। এসব পরিবারের শতাধিক সদস্য এখনও মাটির তৈরি জিনিসপত্র নিজ হাতে বানিয়ে বাজারে বিক্রয় করে সংসার চালায়। তবে প্লাস্টিকের তৈরি আধুনিক জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কদর কমেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের। তাই বেকার হয়ে পড়েছে মাটির কারিগররা। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কুমারদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে ফেলেছে। এখন তাদের কেউ স্বর্ণের কাজ, বিদেশে, কেউবা কামারের কাজ করছে।

জানা যায়, এ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে দিনরাত ঘুরছে কুমারের চাকা। কেউ মাটিতে পানি মিশিয়ে কাঁদা নরম করছে, কেউ মাটির তৈরি জিনিস রোদে শোকানোর কাজ করছে। আবার আনেকের মনোযোগ পোড়ানো জিনিসপত্রে রং-তুলির কাজ করছে।

উপজেলার একাধিক কুমারের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ পেশায় তাদের পূর্বপুরুষরা কর্মরত ছিলেন তারাও পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য কাজ এখনও জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে চৈত্র- বৈশাখ এ দুই মাসে রোদের তেজ বেশি থাকায় তাদের কাজও বেশি হয়। তাই বেকার না থেকে পাশাপাশি অন্য কাজ করার চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

মন্টু পাল দুঃখ প্রকাশ করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, এ পেশায় এখন আর লাভ নেই। অন্য কোনো কাজ জানি না। তাই বাপ দাদার পেশাকে কে নো রকমের আঁকড়ে ধরে আছি মাত্র। তবে সরকার যদি আমাদের মাটির কাজকে একটু প্রাধান্য দিয়ে মাটির তৈরি জিনিসের দামটা একটু বাড়তো এবং প্লাস্টিকের পণ্যকে কমিয়ে বাজারে স্থান দিতো তাহলে এই মাটির শিল্পটি বাংলাদেশে টিকিয়ে রাখা যেতো।

(ঢাকাটাইমস/০২নভেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :