বালিয়াকান্দিতে চালের কার্ড স্বচ্ছলদের ঘরে, দরিদ্রদের ক্ষোভ

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০১৬, ১৮:৫২

শহীদুল ইসলাম হিরণ, ঢাকাটাইমস

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজির চাল এলাকার প্রভাবশালী লোকজন হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কারসাজির মাধ্যমে কার্ড হাতিয়ে নেয়ায় বিক্ষোভ করেছেন বঞ্চিত হতদরিদ্ররা। এসময় ন্যায্য কার্ড ফিরিয়ে দেবার দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, ৯নং ওয়ার্ডের বাঘুটিয়া গ্রামে ১০টাকা কেজি চালের কার্ড পেয়েছেন এলাকার স্বচ্ছল ব্যক্তিরা। এমনকি একই পরিবারের একাধিক সদস্যদের নামে এই কার্ড রয়েছে। 

৯নং ওয়ার্ডের ১১৮টি কার্ডের মধ্যে বেশিরভাগই গিয়েছে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের হাতে। কার্ড জালিয়াতিতে এলাকার কাউন্সিলর (মেম্বার) আরব আলী সেখ জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন অস্বচ্ছল মানুষেরা।

বাঘুটিয়া বাইতুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুস সালাম ও তার স্ত্রী রূপালী বেগম দুজনের নামেই রয়েছে কার্ড। এছাড়াও একই গ্রামের স্বচ্ছল ব্যক্তি হানিফ আলি মৃধা নিজে ও ছেলে বাবলু দুজনই মাদ্রাসার নাম ভাঙিয়ে নিয়েছেন ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড। অথচ তাদের বসত বাড়িটি ৪৫ শতাংশ জমির ওপরে। এমন অনেক স্বচ্ছল ব্যক্তিদের লোভ ও কারসাজির কারণে বঞ্চিত হয়েছেন  গ্রামের হতদরিদ্ররা।

৯নং ওয়ার্ডের বিধবা তারা বিবি (৬০) জানান, তিনি অন্যের জমিতে ছাপরা ঘর করে থাকেন। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অনেক দিন আগেই মারা গেছেন। এখন বড় অসহায়ভাবে তিনি খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। সরকারের দেয়া ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড তিনি পাননি। মেম্বারের কাছে অনেকবার চেয়েও চালের কার্ড মেলেনি। কিন্তু এলাকায় যারা স্বচ্ছল তারা ঠিকই কার্ড পেয়েছে।

৭০ বছরের বৃদ্ধ গোলাপ ম-ল জানান, তিনি বর্তমানে অচল হয়ে পড়েছেন। তার আয়ের কোনো পথই নেই। তবুও বঞ্চিত হয়েছেন নায্য মূল্যের ১০ টাকার চাল থেকে।

এলাকার বাঘুটিয়া বাইতুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুস সালামের প্রতিবেশী পারভীন বেগম জানান, মাদ্রাসার শিক্ষক স্বচ্ছল ব্যক্তি হওয়া সত্তেও নিজে ও স্ত্রীর নামে দুটি কার্ড নিয়েছেন। সাহায্য করেছেন অন্যদের কার্ড নিতে।
এলাকার মেম্বার মো. আরব আলি সেখ দলের পক্ষপাতি করে চালের কার্ড বিতরণ করেছেন। এর ফলে অসহায় দুঃস্থ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ সবার।

অভিযোগের ব্যাপারে বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নে বাঘুটিয়া বাইতুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুস সালাম জানান, কার্ড দিয়ে যে চাল পাওয়া গেছে তা দিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের খোরাকি হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিবানন্দ দাস ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাশেদুল বিশ্বাস জানান, এলাকার মধ্যে সরকারের দেওয়া ১০টাকা কেজি চালের কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। কার্ড বিতরণ কমিটি তাদের পছন্দমত ব্যক্তিদেরকে কার্ড দিয়েছে। এতে প্রকৃত অসহায় মানুষরা বঞ্চিত হয়েছে। অবিলম্বে এ অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত অসহায় মানুষেরা যাতে কার্ড পায় সে দিকে তারা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এদিকে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আরব আলী সেখ জানান, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়। তিনি নিয়ম মেনেই কার্ড বিতরণের চেষ্টা করেছেন। তবে যদি স্বচ্ছল ব্যক্তিরা কার্ড পেয়ে থাকে তা খতিয়ে দেখে পরিবর্তন করে গরীরদেরকে দেয়া হবে।

বহরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম জানান, ৯নং ওয়ার্ডে কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের কথা তিনি শুনেছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি কার্ড কর্তৃপক্ষের কাছে পরিবর্তনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অবশ্যই অসহায়রা তাদের ন্যায্য কার্ড পাবেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, ১০ টাকা কেজি দরের চাউল বিতরণের কোনো প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতির প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। যদি কেউ দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

(ঢাকাটাইমস/০৬নভেম্বর/প্রতিনিধি/ইএস)