জিয়া-খালেদা-তারেকের বিএনপি থাকবে না, ভিন্ন কিছু হবে

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন
| আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:৩৬ | প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:০৮

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কী ঘটেছিল? এর প্রেক্ষাপটে যে বিপ্লব, প্রতি বিপ্লব হয়, তার কুশীলব কারা ছিলেন? এর সুফল পেয়েছেন কে? জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ তখন কেন সরকারে আসতে পারলো না? অভ্যুত্থানের অগ্রনায়ক কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম কেন ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে ছিটকে পড়লেন? দেশের ইতিহাসের গোলযোগপূর্ণ সেই সময় খুব কাছ থেকে দেখেছেন তখনকার জাসদ নেতা, এখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। ঢাকাটাইমসের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে উঠে এসেছে অনেক অজানা তথ্য। এর তৃতীয় ও শেষ পর্ব প্রকাশ হলো আজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ।

সৈন্যরা তখন কী করল?

সৈন্যরা বিভ্রান্ত হয়ে তাকে রেখে ফিরে আসে। পরে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সৈনিকরা গিয়ে তাকে টু ফিল্ড আর্টিলারিতে রেখে আসে। যখনই সৈন্যরা দুপুর দেড়টার দিকে এলিফেন্ট রোডের ৩৩৬ নম্বর বাসায় এলো, আমিও ছিলাম সেখানে। তখন তাহের প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘হোয়ার ইজ জিয়া?’ তখন তারা বলল, ‘স্যার সব ঠিক আছে। তাকে মুক্ত করে টু ফিল্ড আর্টিলারিতে রেখে এসেছি।’ তখন কর্নেল তাহের খুব ধমক দিলেন সৈন্যদের। বললেন, ‘তোমাদের ওপর কী নির্দেশ ছিল?’ তখন তারা জিয়াউর রহমানের কথাগুলো শোনাল।

সব শুনে কর্নেল তাহের কী বললেন?

তাহের আমাদের বললেন, ‘আমরা বোধ হয় নিয়ন্ত্রণটা হারিয়ে ফেলব। পরে তিনি, হাসানুল হক ইনু, আমার বড় ভাই আবু ইউসুফ তিনজন ক্যান্টনমেন্টে গেলেন। তখনও তিনি দেখলেন, ডানপন্থিরা তাকে ঘিরে আছে। মীর শওকত আলীসহ অন্যরা।

জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরকে দেখে কী বললেন?

তখনও জিয়া কর্নেল তাহেরকে বলেছে, তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছ। জাসদ আমার জীবন বাঁচিয়েছে। তোমরা যা বলবে তাই করব। কয়েকদিন করেছেও। সে কারণেই জেলখানা থেকে মেজর জলিল, রব এরা মুক্তি পেয়েছে। পাশাপাশি জিয়া ডানপন্থিদের অনেককে মুক্তি দিয়েছে। ব্যালেন্সড করার জন্য। তবে আরেকটি জিনিস আমরা করতে পারিনি।

কী করতে পারেননি?

পরিকল্পনা ছিল সৈন্যরা যে যতগুলো পারে অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে আসবে। এখানে জাসদের সংগঠিত জনতা, শ্রমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। তাহলে এটা সৈনিক-জনতার বিপ্লব হবে। এই কাজের দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল তারা কিছুই করতে পারল না। পোস্তগোলা, তেঁজগাওয়ে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ভর্তি ছিল জাসদ ছাত্রলীগে। কিন্তু তা হলো না।

না হওয়ার কারণ?

দীর্ঘদিন কোনো কর্মকা- নেই। জড়তা ছিল। দ্রুত সব ঘটে যাচ্ছে যোগাযোগ করার উপায় কম। যে কারণে সত্যিকার অর্থেই সৈনিক জনতার অভ্যুত্থান হতে পারেনি।

জিয়াউর রহমানের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে, বুঝলেন কীভাবে?

জিয়াউর রহমান পরে জনসভাতেও আসেনি। অন্যদিকে তার ওপর চাপটাও রাখা গেল না। অন্যদিকে ঘোষণাও হয়ে গেল। মানুষ জানতেও পারল না ওই অভ্যুত্থানটা জাসদ করেছিল। এভাবেই প্রতিবিপ্লবটা জয়ী হলো। আমরা পরাজিত হলাম। কর্নেল তাহেরকে জীবন দিতে হলো। এ কারণেই কিন্তু ৭ নভেম্বর নিয়ে ধোঁয়াশা। সত্য ঘটনা প্রকাশিত হতে এত বাধা।

বর্তমান পরিস্থিতির কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

৪৪ বছর তো হলো। আমার মনে হয়, ইতিমধ্যে অনেক সত্য প্রকাশিত হয়েছে। হাইকোর্টের রায় আমরা পেয়েছি। সেখান দিয়ে বহু ঘটনা ঘটে গেছে। একসময় জিয়াউর রহমান যে বিজয়ের বরপুত্র ছিলেন, এখন আর তিনি তা নন। আমাদের নতুন প্রজন্ম পড়াশোনা করছে। তারা কিন্তু জিয়ার আসল স্বরূপ জানতে পারছে। জিয়াউর রহমান যে জাতির জনকের হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত তা সেই সময় জানা যায়নি। যদি সেটা জানা যেত তাহলে তাহের তার সঙ্গে ওই ঐক্যটাও করতেন না। তখন প্রকাশিত হয়নি। এখন তো তা প্রকাশিত।

৭ নভেম্বর এবং বিএনপির বর্তমান রাজনীতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানের নামে কোনো রাজনীতি চলবে না। ভিন্ন নামে হয়ত ডানপন্থি রাজনৈতিক গোষ্ঠী কাজ করবে। কিন্তু জিয়াউর রহমানের নামে, খালেদা জিয়ার নামে কিংবা তারেক রহমানের নামে এখানে বিএনপি থাকবে না। বিএনপি ভিন্ন নামে কিছু একটা হবে।

এটা কীভাবে সম্ভব হবে?

মুক্তিযুদ্ধের শক্তি যতবেশি শক্তিশালী থাকবে তত বেশি সত্য প্রকাশিত হবে। এখন যে ১৪ দলীয় সরকার আছে। এই সময় কিন্তু পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রিট করা গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, হচ্ছে। তাদের যে অর্থ সম্পদ আছে সেগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ হচ্ছে। ৫০ বছর পরে এসেও তো মোনায়েম খানের সম্পদ থেকে অন্তত ১০ কাঠা জমি তো উদ্ধার হয়েছে। মীর কাসেম আলীর সম্পদের ওপর যদি নিয়ন্ত্রণ আসে তাহলে আস্তে আস্তে এদেরকে শুকিয়ে মারা যাবে।

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি এখন আদালতে আছে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?

খুব বেশি সময় নেওয়া হচ্ছে। এটার কারণটাও হচ্ছে শ্রেণিস্বার্থ। জামায়াতের যত অর্থ সাম্রাজ্য এগুলোর মধ্যে তো বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগ ঢুকে পড়েছে। এদের সঙ্গে আত্মীয়তা আছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাদের আত্মীয়তা। তারা যেন মিলেমিশে আছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তো হচ্ছে?

তাই এখন একমাত্র ভরসা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি শক্ত আছেন বলেই এত দূর আগানো গেছে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতেই হবে। এরা তো একটা জঙ্গি সংগঠন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতিটি রায়ে তো জামায়াতের ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ আছে।

জামায়াত নিষিদ্ধ করলে কী ধরনের সুবিধা হবে?

জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করলে বড় সুবিধা হচ্ছে তাদের অর্থ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যাবে। এটা যতদিন পর্যন্ত না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত খুবই শক্তিশালী হুমকি হয়ে থেকে যাবে। ষড়যন্ত্র চলতেই থাকবে।

‘জঙ্গির সঙ্গীকে’ বর্জন করতে বলছে জাসদ। এই দাবিটা কিসের?

ইদানীং জাসদ থেকে হাসানুল হক ইনু বারবার বলছেন, জঙ্গির সঙ্গীকে বর্জন করো। তাদেরও বিচারের আওতায় আনো। এটা কিন্তু শেখ হাসিনাও বলছেন, ‘আমরা তাদের বিচার করব।’ তাদের ছেড়ে দিলে হবে না। বিচার করতে হবে।

আপনারা কি বিএনপিকে ইঙ্গিত করছেন?

হ্যাঁ, শুধু জামায়াতের কোমর ভেঙে দিলে হবে না। কোমর ভাঙতে হবে বিএনপিরও । আমি বলি না যে, বিএনপি বিলুপ্ত হয়ে যাক। বিএনপি থেকে বিলুপ্ত করতে হবে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং জামায়েতিদেরকে। জামায়াতের করাল গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসুক। একটা দক্ষিণপন্থি দল হয়ে থাকুক। বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে বিএনপি রাজনীতি করুক। এখন যে অবস্থায় বিএনপি আছে এদেরকে পরাজিত না করলে বাংলাদেশে উন্নয়ন ব্যাহত হবে। ওরা ক্ষমতায় চলে আসবে।

জাসদের মধ্যে ভাঙন ধরেছে। কারণ কী?

এটাও তো একটা ষড়যন্ত্র। এটা কি এমনি এমনি হয়েছে? জাসদ একটা পটেনশিয়্যাল ফোর্স। জাসদের ক্ষমতা এখন হয়ত বেশি নেই। মাত্র ৫-৬টা আসন। সেখানে জাসদের বিরুদ্ধে এরা নামল কেন? কেন জাসদকে আঘাতের চেষ্টা হচ্ছে?

জাসদের ওপর আঘাতটা কীভাবে আসছে?

ভেতরে থেকে জাসদকে আঘাত করার চেষ্টা হয়েছে। যে কজন বেরিয়ে গেল এদের উদ্দেশ্য শুভ নয়। অবশ্য সৌভাগ্যের কথা হচ্ছে, মূল শক্তিটা এদিকেই আছে। তাদের কাছে মশালও নেই। নামও তারা ব্যবহার করতে পারবে না। একটু হতাশা হয়েছে। জাসদ এটা কাটিয়ে উঠবে।

[শেষ]

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কিছু জঙ্গি সংগঠন মাথাচাড়া দিতে চায়

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :