এক্সিম-অন্যদিন সাহিত্য পুরস্কার বিতরণ

হুমায়ূন মানুষকে ভালোবাসতে পেরেছিলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০১৬, ২১:৩৭ | প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০১৬, ২০:৫৫

‘মানুষের বয়স হলে আবেগ কমে যায়। চোখের জলও শুকিয়ে আসে। অশ্রুপাত করা সম্ভব হয় না। আমার বয়স হয়েছে।’ বাংলা গল্পের রাজপুত্র হাসান আজিজুল হক যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন পুরো হলরুমে নীরবতা। অথচ কানায় কানায় পূর্ণ দর্শকে, শ্রোতাতে। দৃষ্টি এড়ায়নি। বললেন, ‘এই ঘরভর্তি সকলের প্রতি শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’

শনিবার এক্সিম ব্যাংক অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৬ দেয়া হয়েছে। আয়োজন ছিল বাংলা একাডেমিতে। এবার পুরস্কার পেয়েছেন দুজন। সামগ্রিক সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। তরুণ লেখকের পুরস্কার এসেছে কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের ঘরে। তার উপন্যাস ‘কালকেউটের সুখ’ এনেছে এ সম্মান।

‘পুরস্কারের জন্য কেউ লেখে না’ তখনও মঞ্চে বক্তা টেবিলে দাঁড়িয়ে হাসান আজিজুল হক। ‘পুরস্কারকে সামনে রেখে যিনি লেখেন, তাকে আমি লেখক বলতে পারি না।’ ১৯৬০ সালে যিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লেখক হবেন, তিনি আরও বললেন, ‘মানুষের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা না থাকলে ভালো লেখক হওয়া যায় না। হুমায়ূন আহমেদ তা পেরেছিলেন।’

প্রসঙ্গ টানলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ‘মানিক বলতেন, আমার বইয়ের প্রকাশকের কাছ থেকে বইয়ের প্রশংসার পাওয়ার দরকার নেই। আমি তার কাছ থেকে পারিশ্রমিকই আশা করি।’

অন্যদিন যে সাহিত্য পুরস্কারের আয়োজন করেছে, তার মূলে আছে কথাসাহিত্যের প্রবাদপুরুষ হুমায়ূন আহমেদের নাম। সেখানে তাঁর সম্পর্কে না বললে যে অপূর্ণ থেকে যায়। হাসান আজিজুল হক বললেন, ‘হুমায়ূনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা কোনোদিন হয়নি। তবে হুমায়ূন সম্পর্কে আমার স্মৃতি আছে। কারণ আমি বরাবর মফস্বলেই থাকি। হুমায়ূনের সঙ্গে দেখাটেখা হতো একমাত্র ঢাকাতে এলে।’ তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন তখন নাম করেনি। কেবলমাত্র নন্দিত নরক বেরিয়েছে। আহমদ শরীফ সাহেব উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। ওই যে মানুষটা আহমদ ছফা, তিনি ‘নন্দিত নরক’ বইটা বের করার জন্য প্রকাশকের কাছে গেছেন। সম্ভবত খান ব্রাদার্সের কাছে।’

স্মৃতি হাতড়ে বললেন, ‘আশ্চর্য মানুষ আহমদ ছফা। আমার তৃতীয় বই যেইটা ‘জীবন ঘঁষে আগুন’, সেটা উনি আমাকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে প্রকাশককে বললেন, এই বইটা আপনি বের করবেন। আদেশের মতো।’

জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে জীবনবোধের চিন্তাও ছড়িয়ে দিলেন আমন্ত্রিতদের মাঝে। ‘মানুষের জীবনের অর্থহীন। মানুষ জানতে চায় এই জীবনের মানে।’ হাসান আজিজুল হক বলেন। ‘সক্রেটিস তার জীবনের মানে জানার চেষ্টা করেছিলেন। লেখক একমাত্র মানুষ যারা বাঁচতে চায়। মনে করে, আমাকে বাঁচতে হবে।’

তিনিই বলেই চলেন, ‘যখন মানুষ আমাকে সম্মান দেয়, লেখার প্রশংসা করে তখন ভেতরে ভেতরে লজ্জাবোধ হয়। ভাবি, অতিসামান্য দিয়ে এতো বেশি প্রাপ্য কী করে হয়। এও ঠিক, পৃথিবীতে একমাত্র লেখকরাই মানুষকে ভালোবাসতে পারে।’ পুরস্কারে তিনি খুশি নন। তবে সম্মানিত হয়েছেন, হুমায়ূন আহমেদের নামাঙ্কিত এই পুরস্কার তার জীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে- জানালেন বক্তৃতার প্রান্তে এসে। হাস্যরস আছে মানুষটার ভেতরে। বললেন, ‘পুরস্কার পাওয়ার পর ডাকা হলো কেমন লাগল বলার জন্য। আমার কি আর কেমন লাগলো বলা হলো? নাকি দেখ কতবড় বক্তৃতা দিলাম।’

তরুণ কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার পর ডাকা হলো, কিছু বলার জন্য। বললেন, ‘কালকেউটের সুখ লেখার পর কোনো এক কারণে আমি দেশ ছাড়তে চেয়েছিলাম। তখন হাসান আজিজুল হক আমাকে বললেন, লিখতে এসেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তাহলে মাথাটা বন্ধক রেখে লিখতে হবে। লিখতে হলে তোমাকে দেশেই থাকতে হবে।’ কী সেই কারণ? লেখক নিজেই বললেন, ‘তোলা রইল। অন্য কোনো দিন হয়তো বলব।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। সাহিত্যপ্রেমী, পড়ুয়া একজন মানুষ। তার কথাতেই তো তার প্রকাশ। ‘হুমায়ূন আহমেদের যখন আত্মপ্রকাশ হয় তখন আমি দেশের ছিলাম না। বেশ কিছুদিন করাচি। তারপর যুক্তরাষ্ট্রে। মনে আছে, তার নাটক দেখে আমি আসাদুজ্জামান নূরকে দীর্ঘদিন বাকের ভাই বলে ডাকতাম। অনেক পরে জেনেছিলাম তার নাম বাকের ভাই নয়। জানার পরও নূরকে দীর্ঘদিন বাকের বলেই সম্বোধন করেছি। বাকের ভাই নাটকের শেষপর্ব দেখার জন্য আমি প্রোগ্রাম করে দেশে এসেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের আগে বই পড়া নিয়ে এত আগ্রহ তরুণদের মধ্যে খুব একটা ছিল না। তিনি রিডার্স পাবলিক গড়ে তুলেছিলেন।’

সভাপতিত্ব করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই ছিলেন প্রয়াত কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ। ‘হুমায়ূনের নামে আজকের এই অনুষ্ঠান বেদনা ও আনন্দ দুটোই সঞ্চার করেছে। হুমায়ূন দীর্ঘজীবন পাননি। কিন্তু যা দিয়ে গেছেন দেশের মানুষ আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।’

হুমায়ূন আহমেদের ছোটোভাই কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমরা এখনও মানুষের কাছে হুমায়ূনের ভাই, হুমায়ূনের বোন, হুমায়ূনের পাঠক হয়েই বেঁচে আছি।’

হুমায়ূন আহমেদের সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘এই রকম আয়োজনে হুমায়ূনের আহমেদের পরিবারকে একসঙ্গে পাই। আমার ভালো লাগে। এছাড়া তো সবাইকে একসঙ্গে পাওয়ার সুযোগ হয় না।’

অনুষ্ঠানে আরও কথা বলেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। হাসান আজিজুল হকের ওপর প্রসংশাবচন পড়েন, অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। পুরস্কার বিতরণী এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেয়ার পর্বে ছিলেন, এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হায়দার আলী, অন্যদিন পত্রিকার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।

সামগ্রিক সাহিত্যে অবদানের জন্য হাসান আজিজুল হককে একটি ক্রেস্ট, সনদ, উত্তরীয় এবং পাঁচ লাখ টাকার চেক দেয়া হয়। তরুণ সাহিত্য বিভাগে স্বকৃত নোমানকেও একটি ক্রেস্ট, সনদ, উত্তরীয় এবং এক লাখ টাকার চেক দেয়া হয়। সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়েছে পুরস্কার পাওয়া দুই লেখকের জীবন-কর্মের ওপর। শেষে ছিল শিল্পী সেলিম চৌধুরীর কণ্ঠে হুমায়ূন আহমেদের লেখা গান, তাঁর প্রিয় গান।

হুমায়ূন আহমেদের ৬৮তম জন্মদিন উপলক্ষে আগামীকাল রবিবার থেকে পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে একক মেলার আয়োজন করা হবে। চলবে সাতদিন।

(ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/এইচএফ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের বিচার

এক হাতে ইফতারের পানির বোতল, আরেক হাতে যান চলাচলের ইশারা ডিসির

এলিফ্যান্ট রোডে বাসা থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ঢাকাস্থ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

অসুস্থতার যন্ত্রণা সইতে না পেরে ছুরিকাঘাতে রিকশাচালকের আত্মহত্যা

রাজধানীর ধোলাইপাড়ে পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’

বুধবার থেকে এক ঘণ্টা বাড়ছে মেট্রোরেল চলাচলের সময়

ঈদকে সামনে রেখে ডিবি-সাংবাদিক পরিচয়ে অপহরণের ফাঁদ

ভবিষ্যৎ নগর উন্নয়নে জাইকা ও ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের সঙ্গে রাজউকের সভা

২৭ মার্চ থেকে রাত ৯টার পরও চলবে মেট্রোরেল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :