শহর ফুঁড়ে মাটি তোলার পাইপ, মানিকগঞ্জে ভোগান্তি
সাধারণ মানুষ ও যানবাহনের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে শহরের প্রধান সড়কের সড়কের ওপর দিয়ে বসানো হয়েছে ড্রেজারের পাইপ। এই পাইপ ব্যবহার করেই বেউথা কালীগঙ্গা নদী থেকে মাটি তুলে নিচু এলাকা ভরাট করা হচ্ছে।
পৌরসভার কাছে একটি আবেদন করেই এই কাজটি করেছেন ঠিকাদার। তবে এখনও অনুমতি দেয়নি পৌরসভা। নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, চলাচলের অসুবিধা হলে তারা অনুমতিই দেবে না।
কিন্তু অনুমতির ধার না ধেরে এভাবে পাইপ বসিয়ে মানুষের চলাচলের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করায় বিরক্ত মানিকগঞ্জবাসী। প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় হতাশ তারা।
মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান ঢাকা টাইমসকে বলেন, দুর্যোগ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের ডোবা ভরাট করে মাঠ তৈরির জন্য সম্প্রতি কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের আওতায় ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বেউথা কালীগঙ্গা নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে মাটি তুলে নিচু এলাকাটি ভরাট করা হবে। এই কারণেই প্রধান দুটি সড়ক সহ শহরের উপর দিয়ে পাইপ বসাতে হয়েছে।
অধ্যক্ষ দাবি করেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসক জানেন। সড়কের উপর দিয়ে পাইপ বসাতে পৌর মেয়রের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে পৌর মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মাটি ভরাটের জন্য পাইপলাইন নিতে পৌরসভা বরাবর আবেদন করলেও সে অনুমতি দেননি তারা। মেয়র বলেন, ‘শহরের কোন জায়গা দিয়ে পাইপলাইন নেওয়া হবে সে ব্যপারে কথা হয়নি’। তিনি বলেন, ‘যদি রাস্তার উপর দিয়ে পাইপ লাইন নেওয়ায় নাগরিক ও যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটে তাহলে সেই অনুমতি দেওয়া হবে না’।
শনিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বেউথা এলাকার কালীগঙ্গা নদী থেকে ৮ ইঞ্চির পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এটি শেষ হয়েছে দেবেন্দ্র কলেজের নতুন ভবন পর্যন্ত। আট হাজার ফুটের এই পাইপের সারি প্রধান প্রধান সড়কসহ ছয়টি সড়কের উপর দিয়ে গেছে।
শুধু তাই নয় ড্রেজারের পাইপ বসাতে গিয়ে ভাঙতে হয়েছে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ ও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দুইটি সিমানা প্রাচীরও।
এর আগে জেলা জজ কোর্টের সীমানা প্রাচীর ভেঙে পাইপ বসানোর চেষ্টা হলেও আপত্তির মুখে তা সরিয়ে নেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী আজিজি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তিন/চার দিন আগে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহাদৎ খন্দকার কয়েকজন লোক নিয়ে আমার স্কুলে আসেন। এ সময় তারা সরকারি কাজের কথা বলে স্কুলের সীমানা প্রাচীর ভেঙে পাইপ লাইন নেওয়ার অনুরোধ করেন। নির্বাহী কর্মকর্তার অনুরোধে আমরা সীমানা প্রাচীর ভাঙতে দেই।’
এ ব্যপারে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও পরিবেশবিদ নিয়ে আন্দোলনকারী দীপক কুমার ঘোষ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মাটি ভরাট করতে বেউথা কালীগঙ্গা নদী থেকে পাইপ লাইন আনতে জমি ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। শুধু তাই নয়, জেলা শহরের প্রধান সড়কের উপর দিয়ে পাইপ লাইন নেওয়ায় নাগরিক ও যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। যেহেতু বিষয়টি প্রশাসনের নাকের ডগার মধ্যে সেহেতু তাদের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
নগর বিএনপির সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন যাদু বলেন, ‘শহীদ রফিক সড়কের উপর প্রায় চার ফুট উঁচু স্পিডব্রেকার তৈরি করে পাইপ লাইন নেওয়া অসভ্যতা। এটি দেখার দায়িত্ব পৌরসভা ও প্রশাসনের। কিন্তু যারা এই কাজ করছেন প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না।’
জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান ঢাকাটাইমকে বলেন, ‘বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের। তারা যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করে তাহলে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পাইপ লাইন নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস ঢাকা টাইমসকে বলেন, পৌরসভার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ঠিকাদারদের এই কাজ করতে বলা হয়েছে। পৌরসভার অনুমতি তারা নিয়েছেন কি না আমার জানা নেই। ওই কাজে নাগরিক ও যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ঢাকাটাইমস/১৩নভেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি
মন্তব্য করুন