কার্তিকের শেষে পূর্ণিমা রাতে

গাজী মুনছুর আজিজ
 | প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর ২০১৬, ১৪:৪১

কার্তিক মাসের শেষ দিন পূর্ণিমা রাতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুণ্যস্নানকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের দুবলারচরে বসে রাসমেলা। অন্যদিকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়াম-পে এবং আদমপুরের তেতইগাঁও মণিপুরি কেন্দ্রীয় ম-পে বসে রাসলীলার রাসনৃত্য। এগুলো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও কালে কালে সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা যোগ দেন এসব ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে।

দুবলারচরের পুণ্যস্নান

স্থানীয়রা একে বলেন পুণ্যস্নান বা গঙ্গাস্নান। কার্তিক মাসের পূর্ণিমা রাতের পরের দিন সূর্যোদয়ের সময় সাগরের পানিতে এ স্নান করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। আর এ স্নান করতেই সুন্দরবনের দুবলারচরে আসেন অসংখ্য সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থী। এ স্নান উপলক্ষে দুবলারচরে পূর্ণিমা রাতে মেলাও বসে। এ মেলার নামই রাসমেলা। তবে রাসমেলাকে কেন্দ্র করে পুণ্যস্নান নয়, পুণ্যস্নানকে কেন্দ্র করেই রাসমেলা বসে। সনাতন ধর্মাবলম্বী না হয়েও সনাতন ঐতিহ্যের খোঁজে কয়েক বছরই আমি উপস্থিত হই পুণ্যস্নানের এ উৎসবে। ২০১৪ সালের উৎসবে যোগ দেই ইকো-ট্রাভেলার্সের কর্ণধার আবু বক্করের আমন্ত্রণে। মেলা বসে ৬ নভেম্বর, আর পুণ্যস্নান হয় ৭ নভেম্বর। কমলাপুর থেকে রাতের ট্রেনে রওনা দিয়ে সকালে আসি খুলনা। সেখান থেকে লঞ্চে রওনা দেই দুবলার চরের উদ্দেশে। সবুজ সুন্দরবন দেখতে দেখতে সন্ধ্যায় আসি দুবলারচর।

দুবলারচরটি মূলত সাগরের মধ্যে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ বা চর। বছরের বেশ কিছুটা সময় এ চরে জেলেরা বসবাস করেন এবং তারা শুঁটকি উৎপাদন করেন। কয়েক দশক ধরে এ চরে আনুষ্ঠানিকভাবে রাসমেলার আয়োজন করেন মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) জিয়া। চরে একটি ছোট্ট মন্দির আছে। অনেকটা অস্থায়ী। নাম ভগবান শ্রীশ্রী কৃষ্ণের রাসমন্দির। রাসমেলার সময় কাপড় বা রঙিন কাগজ দিয়ে মন্দিরটি সাজানো হয়। মন্দিরে পূর্ণিমা রাতে ভক্তরা আসেন, পূজা করেন, প্রসাদ দেন, মানতের টাকা দেন। রাসমেলার জন্য মন্দিরে পুরোহিতও বসেন। এছাড়া মন্দিরে যারাই পূজা করতে আসেন, তাদের সবার হাতেই মন্দিরের পুরোহিত প্রসাদ তুলে দেন; কপালে লাগিয়ে দেন তিলক। মন্দিরে থাকে বিভিন্ন দেব-দেবী, রাধা-কৃষ্ণ, বনবিবি এবং পীর গাজী-কালুর মূর্তি। অন্য দেব-দেবীর সঙ্গে পীর গাজী-কালুর মূর্তি রাখার কারণ হলো সুন্দরবন-সংলগ্ন অঞ্চলের হিন্দু-মুসলমানসহ সব ধর্মের মানুষই পরম পুণ্যের পীর বা দেবতা মনে করেন গাজী-কালুকে। এছাড়া এদেশে যেসব পীর, ফকির বা দেবতা আছেন, তাদের মধ্যে গাজী পীরকে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ বেশি স্মরণ করেন বা তিনি বেশি জনপ্রিয়। একই ভাবে গাজী পীরকে এ অঞ্চলের মানুষ বেশি আধ্যাত্মিক শক্তিরও মনে করেন। আর সে কারণেই গাজী-কালুর নামে এ অঞ্চলে মানুষ পূজা দেন, পালাগানের আসর বসান, মেলা করেন।

রাসমন্দিদের পাশেই অস্থায়ীভাবে তৈরি করা হয় রাসমেলার আনুষ্ঠানিকতার মঞ্চ। রাসমেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় সকালে পূজার মাধ্যমে। তারপর সারা দিন চলে মেলা ও নানা আনুষ্ঠানিকতা। সন্ধ্যায় উড়ানো হয় ফানুস। এছাড়া রাসের মঞ্চে রাতভর চলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। রাসমন্দিদের আশপাশেই বসে রাসমেলা। মেলায় পোশাকের দোকান, মুড়ি-মুড়কি-মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবারের দোকান, নারিকেল, সুপারি, শাক-সবজিরও দোকানও আছে। এসব দোকানদার আসেন খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা থেকে। রাতে সাগরের পারে পূর্ণিমার আলোয় জমে ওঠা গ্রামীণ এ মেলা সত্যিই অন্যরকম। রাতভর এ মেলাও সরব থাকে পুণ্যার্থীদের পদচারণায়।

পুণ্যস্নানের মূল আনুষ্ঠানিকতা হলো সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাগরের প্রথম জোয়ারের পানিতে স্নান করা। সে কারণেই সূর্য ওঠার আগেই সনাতনধর্মী পুণ্যার্থীরা সাগরের পারে সূর্যের দিকে মুখ করে বসেন প্রার্থনা করতে। কেউ বসেন একা একা, কেউ দুজন মিলে, আবার কেউ চারজন, ছয়জন, বারোজন বা তারও বেশি দলের সঙ্গে। তাদের কারও সামনে জ্বলছে আগরবাতি, কারও সামনে রাখা আছে ডাব, কারও সামনে মিষ্টি জাতীয় খাবার। যারা বেশি লোকের দলে বসেছেন, তাদের আবার একজন দাঁড়িয়ে মন্ত্র পাঠ করাচ্ছেন, আর বসে থাকা লোকজন মন্ত্রের সঙ্গে প্রার্থনা করছেন।

সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যখন জোয়ার শুরু হয় এবং সে জোয়ারের পানি পুণ্যার্থীদের গায়ে এসে লাগলেই পুণ্যার্থীরা প্রার্থনা শেষ করে নামেন সাগরে স্নান করতে। অনেকে পুণ্যস্নানের সঙ্গে মানত করেন। মানত করে কেউ কেউ স্নানের সঙ্গে সঙ্গে ছাগল, মুরগি, ডাব, ফলমূলসহ বিভিন্ন খাবারও সাগরে ভাসিয়ে দেন মনের বাসনা পূরণের আশায়। স্নানে অংশ নেন নানা বয়সের নারী-পুরুষ। আর এ স্নান বা গোসলের সঙ্গে তাদের সব পাপ মোচন হয়ে যায় বলে বিশ্বাস করেন তারা।

পুণ্যস্নানে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার এসেছেন সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের প্রায় ৬০ বছর বয়সী কালাচাঁদ বিশ্বাস। তার মুখে শোনা হলো ইতিহাসের পাতায় লেখা রাসমেলা ও পুণ্যস্নানের কথা। শোনা যায়, ১৯২৩ সালে হরিচাঁদ ঠাকুরের বনবাসী ভক্ত হরিভজন এ মেলা শুরু করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবী শ্রীকৃষ্ণ শত বছর আগে কার্তিকের পূর্ণিমা রাতে পাপমোচন ও পুণ্যলাভের আশায় গঙ্গাস্নানের জন্য স্বপ্নে আদেশ পান। তখন থেকেই এ মেলার শুরু। আবার অনেকে মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণ বনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসলীলা করেছিলেন এ কার্তিকের পূর্ণিমা রাতে। সে উপলক্ষেই এ মেলা বসে।

পুণ্যস্নান ছাড়া এ সফরে হিরনপয়েন্ট, টাইগারপয়েন্ট, কটকা, কচিখালী, জামতলা, করমজলসহ বেশ কয়েকটি স্থানও দেখি। এবার মেলা শুরু হয়েছে ১৪ নভেম্বর।

মণিপুরি রাসনৃত্যে রাধা-কৃষ্ণের আখ্যান

পরিষ্কার আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। সে চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়ছে গোটা মাঠে। মাঠের এক কোণে গোলাকার ম-প। সেই ম-পের মাঝখানে চলছে রাসনৃত্য। রাসলীলা উপলক্ষে কার্তিক মাসের পূর্ণিমা রাতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আদমপুরের তেতইগাঁও মণিপুরি কেন্দ্রীয় ম-পে বসে এ রাসনৃত্যের আসর। রাসপূর্ণিমার এ রাসনৃত্য মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রধান বার্ষিক উৎসব। স্থানীয় বন্ধুদের আমন্ত্রণে একাধিক বছর রাসলীলার এ উৎসবে যোগ দেই এবং সারা রাত জেগে রাসনৃত্য দেখি।

তেতইগাঁও ছাড়াও বাংলাদেশে রাসনৃত্যের সবচেয়ে বড় আসর বসে কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়াম-পে। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, মণিপুরি রাজ্যের বাইরে ১৮৪২ সালে মাধবপুর জোড়াম-পেই প্রথম রাসলীলার সূত্রপাত হয়। সেই থেকে এখনো প্রতি বছর এখানে রাসনৃত্যের আসর বসে। তবে তেতইগাঁওয়ে রাসনৃত্যের আসর বসে তিন দশক ধরে।

রাসনৃত্যের ম-পটি সাজানো কাগজের ফুল ও কাপড় দিয়ে। ম-পের চারপাশে কৃত্রিম আলো জ্বলছে। আর ম-প ঘিরে বসে আছেন নানা বয়সের নারী-পুরুষ। তাদের সবার চোখ ম-পের মাঝখানে নৃত্যরতদের প্রতি। নৃত্য করছে ১৫ থেকে ২০ জনের মণিপুরি কুমারী মেয়ে। ম-পের এক কোণে বসে ৫ থেকে ৬ জন বৃদ্ধ নারী-পুরুষ বিশেষ বাজনা ও গান গাইছেন। সে গান ও বাজনার তালেই চলে এ নৃত্য।

নৃত্য দেখছেন যারা, তারা মাঝেমধ্যে নৃত্যশিল্পীদের উদ্দেশে বাতাসাসহ শুকনা মিষ্টি জাতীয় খাবার ছুড়ে দেন। কেউ কেউ নৃত্যশিল্পীদের পায়ে প্রণাম করে নগদ টাকাও দেন। কেউ আবার টাকার মালা বানিয়ে তা নৃত্যশিল্পীদের গলায় পরিয়ে দিয়ে আসেন। এ নৃত্য চলে সারা রাত।

রাসলীলা উৎসবের শুরুটা হয় গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য দিয়ে। একই ম-পে এ নৃত্য হয় সকালে। যারা রাখাল নৃত্য করে তারা প্রথমে ম-পে গোল হয়ে গোপী ভোজন করে। গোপী ভোজন হলো বিভিন্ন সবজি দিয়ে রান্না করা তরকারি ও ভাত। এ খাবার খেয়েই রাখাল নৃত্য শুরু করে শিল্পীরা। সকালে শুরু হয়ে রাখাল নৃত্য একটানা চলে বিকাল পর্যন্ত। মণিপুরি শিশু-কিশোর এ নৃত্য পরিবেশন করে। যারা নৃত্য করে তারা এক ধরনের বিশেষ পোশাক পরে। ঝলমলে এ বিশেষ পোশাকের নাম ‘পলয়’। এ পোশাকের পরিকল্পনা করেছিলেন রাজা ভাগ্যচন্দ্র। রাখাল নৃত্যের মূল বিষয়বস্তু হলো কৃষ্ণ ও তার সঙ্গীদের নিয়ে। গোলাকার ম-পে কখনো একক, কখনো দ্বৈত এবং কখনো দল বেঁধে এ নৃত্য পরিবেশিত হয়। রাখাল নৃত্যের পাশাপাশি দিনভর চলতে থাকে মণিপুরিদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকা-।

সন্ধ্যার পর শুরু হয় রাসপূর্ণিমার রাসলীলার রাসনৃত্য। রাসনৃত্য পরিবেশন করে মণিপুরি কুমারী মেয়েরা। রাসনৃত্যের সময়ও পলয় পরা হয়। পলয় পোশাকের মাথার উপরি ভাগের নাম ‘কোকুতম্বি’। এ পোশাকের মুখের ওপর পাতলা স্বচ্ছ আবরণ থাকে। তার নাম ‘মাইমুখ’। গায়ে থাকে সোনালি ও রুপালি চুমকির কারুকাজের ঘন সবুজ বেলভেটের ব্লাউজ। পরনে থাকে ঘন সবুজ রঙের পেটিকোট, যা শক্ত বক্রমের দ্বারা গোলাকৃতি ও ভাঁজমুক্ত করা হয় এবং অজস্র চুমকি ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয়না দ্বারা কারুকাজ করা থাকে, যা সামান্য আলোতেও ঝলমল করে ওঠে। পলয়ের এ অংশের নাম ‘কুমিন’। জরির কারুকাজ করা পেশোয়ান খাওন, খবাংনপ পলয়ের অংশ। এছাড়া পলয়ের সঙ্গে কলথা, খবাংচিক, খুঁজিসহ ইত্যাদি স্বর্ণালংকারও নৃত্যশিল্পীরা পরেন।

রাসনৃত্য গোলাকার ম-পে কখনো একক, কখনো দ্বৈত এবং কখনো দলবেঁধে পরিবেশিত হয়। রাসনৃত্যের মূল বিষয়বস্তু হলো রাধা ও তার সখাদের নিয়ে। এ নৃত্যে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের শুরু, মান-অভিমান এবং শেষে মিলন দেখানো হয়।

মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র ১৭৮৯ সালে ভারতের মণিপুর রাজ্যে রাসপুর্ণিমায় রাসলীলার প্রবর্তন করেন। তিনি স্বপ্নে দেখতে পান রাধা ও কৃষ্ণের রাসলীলা। তারপর তিনি স্বপ্নের আলোকেই উপস্থাপন করেন রাসলীলার রাসনৃত্য। তিনি কয়েকজন কুমারী মেয়ে দিয়ে স্বপ্নের মতো রাসলীলা করালেন। তার নিজ কন্যা কুমারী বিশ্বাবতীকে শ্রীরাধা এবং মন্দিরের শ্রীগোবিন্দকে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকায় অবতীর্ণ করে রাসলীলা করেন এবং তিনি নিজেই ওই রাসে মৃদঙ্গবাদক ছিলেন। তাতে তিনি নিজস্ব তাল ব্যবহার করেন। তার সেই তালই এখন পর্যন্ত চলছে।

মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র কেবল রাসলীলা প্রবর্তনই করেননি, রাসলীলায় বিভিন্ন আঙ্গিক পদ্ধতির বিষয়ে বইও লিখেছেন। তার তিরোধানের পর মহারাজ চন্দ্রকীর্তি এ উৎসবকে আরও বেশি জনপ্রিয় করার জন্য কাজ করেন এবং উৎসবকে মণিপুরিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন।

রস থেকেই রাস শব্দের উৎপত্তি। রাস হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের সর্বোত্তম মধুর রস। আর লীলা মানে খেলা। অর্থাৎ রাসলীলার মানে শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাধা ও তাদের সখা-সখীদের লীলাখেলা। মণিপুরি সমাজে রাসনত্যৃ আবার ছয়টি ভাগে ভাগ করা। এগুলোÑমহারাস, বসন্তরাস, নিত্যরাস, কুঞ্জরাস, গোপীরাস ও উদখুলরাস। এর মধ্যে মহারাস হচ্ছে বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।

রাসলীলা উপলক্ষে মণিপুরিরা বিভিন্ন সবজি, ডাল, গাছের লতাপাতা দিয়ে উতি, পাকাউরা, সৈবুম, ইরোলবা নামের বিশেষ খাবার তৈরি করেন। ম-পে সবাই একসঙ্গে বসে কলা পাতায় এ খাবার খান। এছাড়া মণিপুরি মেয়েরা রাসলীলা উপলক্ষে নিজেদের তাঁতে বোনা শাড়ি পরেন। এসব শাড়ির নকশা হয় কালো রঙের পাড় এবং সবুজ, খয়েরি, ছাইসহ বিভিন্ন রঙের লম্বা চেকের মাধ্যমে। এছাড়া পুরুষরা পরেন সাদা ধুতি ও পাঞ্জাবি, আর গলায় থাকে ওড়না।

রাসলীলা উপলক্ষে ম-প প্রাঙ্গণে গ্রামীণ পণ্যের মেলাও বসে। এছাড়া অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে মণিপুরিরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিÑ তলোয়ার নৃত্য, মশাল নৃত্য, মার্শাল আর্ট, নাচ, ঢোলক নৃত্যসহ বিভিন্ন নাচ-গান পরিবেশন করেন।

মণিুপরি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হামোম তনুবাবু বলেন, মণিপুরিদের হলেও এখন রাস উৎসবে যোগ দেন স্থানীয় শ্রেণি-পেশার সব ধর্মের মানুষ। এছাড়া উৎসবে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকে সংস্কৃতিপ্রেমীরাও ছুটে আসেন প্রতি বছর।

বাংলাদেশে মণিপুরি সম্প্রদায়ের অধিকাংশ বসবাস করছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায়। এছাড়া সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকায়ও রয়েছে মণিপুরিদের বসবাস। বাংলাদেশে মণিপুরি সম্প্রদায়ের বসবাস ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে। এদেশে তাদের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। ভারতের মণিপুর রাজ্য থেকে তারা আসেন বাংলাদেশে। মণিপুরিদের তিনটি গোত্র রয়েছে। এগুলো হলোÑ মৈতেই, বিষ্ণপ্রিয়া এবং মৈতেই পাঙ্গাল। বিষ্ণপ্রিয়া ও মৈতেই গোত্রের লোকেরা সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী। এরা গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ভুক্ত। এছাড়া মৈতেই পাঙ্গালরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। তবে সব মণিপুরিরই প্রধান বার্ষিক উৎসব রাসপূর্ণিমায় রাসলীলা।

১৯২৬ সালের নভেম্বর মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটের মাছিমপুর ভ্রমণে এলে তার সম্মানে মণিপুরি রাসনৃত্যের আয়োজন করা হয়। কবিগুরু এ নৃত্যের ভাবরস দেখে বেশ অভিভূত হোন। পরে তিনি ত্রিপুরা রাজ বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুদ্ধিমন্ত সিংহকে মণিপুরি নৃত্যের শিক্ষক হিসেবে শান্তিনিকেতনে নিয়োগ করে মণিপুরি নৃত্যকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করে তোলেন। ১৪ নভেম্বর মাধবপুরে ১৭৪তম এবং আদমপুরে ৩১তম এবারের রাসলীলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ছবি : লেখক

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :