তাঁর মুখে হেমন্তের ঝকঝকে রোদ

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
| আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৬, ১৬:২৩ | প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:৫৯

হেমন্তের ঝকঝকে রোদ পড়েছে তাঁর মুখে। দূর থেকে কিছুটা চেনা যাচ্ছে মানুষটিকে। কাছাকাছি এলে স্পষ্ট হলো। হ্যাঁ, তিনি কবি হেলাল হাফিজই তো। মঙ্গলবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাঁর সঙ্গে হঠাৎ দেখা। শিখা চিরন্তনে তাঁকে ঘিরে আছেন কয়েকজন। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের শুটিং চলছিল। শেষ হয়েছে। চলছে মুঠোফোনে ফটোসেশন পর্ব।

সঙ্গে তাঁর বন্ধুপ্রতীম ছড়াকার আখতার হুসেন। তাকেই বলছিলেন, ‘শরীরটা খুব ভালো যাচ্ছে না। দুর্বল হয়ে পড়েছি আগের চেয়ে। ডায়াবেটিকস যার একবার হয়েছে সেই জানে।’

জবাবে আখতার হুসেন মৃদু হেসে বললেন, ‘আমার অবস্থা তো বোধ হয় জানো। ক্যান্সার শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছি।’ কেউ একজন পাশ থেকে প্রশ্ন করলেন, ‘হেলাল ভাই, বয়সে কে বড়, আপনি না আখতার ভাই?’

‘আখতার ভাই বড় হবেন বোধ হয়।’ জবাব দিলেন কবি।

ছড়াকার তাল দিলেন, ‘হ্যাঁ, তা হবো।’

‘যাই, একটু ক্লাবের (প্রেসক্লাবে) দিকে। আধঘণ্টা বিশ্রাম নিলে শরীরটা স্বাভাবিক হবে।’ সোহরাওয়ার্দীতে সারি সারি দাঁড়ানো গাছের মাঝ দিয়ে ধীর পায়ে হাঁটতে শুরু করলেন ‘যে জলে আগুন জ্বলে’র কবি। তাঁর পিছু পিছু হাঁটছি। কী মনে করে তিনি একঝলক পিছু তাকালেন।

জানতে চাইলেন, ‘তুমি কিছু বলবে?’ পরিচয় দিতে কাছে টেনে নিলেন। হাত ধরে কাছে টেনে বললেন, ‘বল কী বলবে?’

বললাম, ‘ফেসবুকে আপনাকে নিয়ে অযাচিত কীসব হয়ে গেল।’

‘ও আচ্ছা। খারাপ হয়নি। সাপেবর হয়েছে। ৫০টা টিভি অনুষ্ঠান করে হয়তো এমন ইমেজ তৈরি করতে হতো।’ ‘মন খারাপ হয়নি?’

‘একটু কষ্ট হয়তো পেয়েছি। তবে মনে কোনো উষ্মা নেই। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আমি যে হাতে লিখে এক লাইনের স্ট্যাটাস দিয়েছি, ওটা ঠিক আছে তো? সবমিলিয়ে আমার সঙ্গে যায় কি না? তুমি পড়েছ?

‘হ্যাঁ, আপনি লিখেছেন- ‘যিনি বা যারা আমাকে নিয়ে অসত্য প্রচারণা করছেন, আমি তাদেরও আন্তরিক মঙ্গঁল কামনা করি।’ ‘ওই তো। ওটুকুই। এর বেশি তো দরকার নেই।’

‘অনেকে অবশ্য আপনার হয়ে কথা বলেছেন। কমেন্ট করেছেন। স্ট্যাটাস দিয়েছেন।’

‘হ্যাঁ, ভালোই হয়েছে। সারাদেশ থেকে মানুষ কথা বলেছে। যারা আমাকে নক করেছে সবাই তো একই কথা বলছে। (হাসলেন)। চোখটা বড় অদ্ভূত বুঝলে। এই দুটোতে আলো না থাকলে পৃথিবী অন্ধকার।’

‘আপনার চোখের চিকিৎসা কেমন চলছে?’

‘এটা আমার হাতে নেই। ডাক্তাররা সব করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বলে দিয়েছেন।’ ‘দেশের বাইরে যেতেটেতে হবে?’

‘ডাক্তাররা যেভাবে বলবে সেভাবেই করব। দরকার হলে বিদেশ যেতে হবে। এটা তো আর বিলাসিতা নয়। দরকার।’

‘ও হ্যাঁ, তুমি ফেসবুকে কমেন্টের কথা বলছিলে। পড়লাম একজন লিখেছেন, কবি হেলাল হাফিজ মাত্র ৫৬টা কবিতা (যে জলে আগুন জ্বলে বইতে) লিখেছেন। আর যারা তাঁর সমালোচনা করছেন তাদের তো একেকজনের ৪০ থেকে ৫০টা বই। ৪০ থেকে ৫০ হাজার কবিতার বিপরীতে ৫৬টা কবিতা দিয়ে একজন আপনাদের মনে ঈর্ষার আগুন জ্বালিয়েছে। হা-হা-হা।’

‘ঈর্ষা করছেন কারা?’

‘তুমি জানো, আমিও জানি, পাঠকরাও জানে। বলার কী আছে? অবাক হই ৫৬টা কবিতার কবিকে নিয়ে এত ঈর্ষা!’

‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না কবিতার বইটি এবারের মেলায় আসবে?’

‘আর হচ্ছে কোথায়। অসুস্থ হয়ে পড়লাম। পরের বছর দেখি।’

‘আপনার বই বের করার জন্য কি মেলার জন্য অপেক্ষার দরকার হবে?’

‘না, তাও ঠিক। মেলা ছাড়াও হতে পারে।’

হাঁটতে হাঁটতে উদ্যানের গেটে চলে এসেছি। পিঠে হাত বুলিয়ে বিদায় নিলেন। গাড়িতে উঠতে উঠতে বললেন, ‘যোগাযোগ রেখো। কথা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৫নভেম্বর/এইচএফ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :