রাজধানীতে ব্রিটিশ-যুগের সাপ্তাহিক হাট

সৈয়দ অদিত
 | প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর ২০১৬, ০৮:৩৮

বিস্তীর্ণ মাঠ আর খোলা জায়গার বিভিন্ন স্থানে রংবেরঙের পলিথিন আর ত্রিপল টানানো। তার নিচে সাজানো নানা পসরা। শাকসবজি থেকে মিঠাই-মন্ডা, কাপড় থেকে পাখি, সবকিছু মিলবে এখানে। বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেচাবিক্রির ধুম পড়ে রাজধানীর এই সাপ্তাহিক হাটে।

রাজধানীতে ‘সাপ্তাহিক হাট’ কথাটা শুনে ভুরু কুঁচকে উঠতে পারে যে কারো। কিন্তু বড় বড় দালানকোঠার পাশে গ্রামীণ ঘরানার এই হাট রাজধানীর মেরাদিয়ায় নিয়মিত চলে আসছে শত বছর ধরে। নাম মেরাদিয়ার হাট। লোকে বলে ‘মেরাইদ্দার হাট’।

ব্যাগ হাতে নারী-পুরুষ খোলা জায়গায় ঘুরেফিরে সদাই করছে এই হাটে। কোথাও বাজছে গান। কোথাও বা মানববৃত্তের ভেতর চলছে ভ্রাম্যমাণ ‘ক্যানভাসারের’ মনভোলানো কথার ফুলঝুরি। পাশে নদীতে সারি সারি নৌকা-ট্রলার। সেগুলো থেকে নামানো হচ্ছে তরতাজা সবজিসহ নানা পণ্য। আবার কোনো কোনোটি বোঝাই হচ্ছে পণ্য দিয়ে। এমনই ব্যস্ততা মেরাইদ্দার হাটজুড়ে।

এই হাটের বড় বৈশিষ্ট্য হলো সতেজ শাকসবজি-ফলমুল, দেশীয় নানা জাতের জ্যান্ত মাছ, ভিন্ন স্বাদের মুখরোচক খাবার, কেজি ধরে নতুন কাপড় থেকে শুরু করে বাঁশ-বেতের পণ্যসহ মানুষের দরকারি সবকিছু মেলে এখানে।

আশপাশের এলাকাসহ দূর-দূরান্ত থেকে বিক্রেতারা ভোরে তাদের পণ্য নিয়ে আসতে শুরু করেন। কেউ আনেন গাছ থেকে সদ্য পাড়া পেঁপে, কামরাঙা, কাঁচা সুপারি; কেউ আনেন সদ্যই গাভি ‘দোয়ানো’ খাঁটি দুধ। সারা দিনই পণ্য আসে। দিনমান চলে কেনাবেচা। ভিড় লেগে থাকে সারাক্ষণ।

মুন্সিগঞ্জের ইছাপুরা থেকে সবজি নিয়ে এসেছেন মানিক মিয়া। ১২ বছর ধরে নিয়মিত এখানে সবজি নিয়ে আসছেন তিনি। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, বুধবার ভোরে ট্রলারে করে তরতাজা সবজি নিয়ে আসেন, বেচাবিক্রি শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যান।

খিলগাঁওয়ের সীমান্তে মেরাদিয়ার এই হাটে স্থানীয় লোকজন তো আসেনই, আশপাশের ত্রিমোহনী, নাসিরাবাদ, ডেমরা, বেরাইদ এলাকা থেকেও মানুষ আসে বাজার-সওদা করতে।

হাটের অন্যতম এক আকর্ষণ কেজি দরে কাপড় বিক্রি। বিক্রেতাদের দাবি, রাজধানীতে একমাত্র এ হাটেই কাপড় বিক্রি হয় কেজি দরে।

সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয নারীদের কাপড়। ক্রেতাও নারীরাই বেশি। প্রতি কেজি ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায় ৪০-৫০ টাকায়।

মিষ্টির বিশাল সমাহার এই হাটের আরেক প্রধান আকর্ষণ। দই, জিলাপি, বালিশ মিষ্টি, ছানা, রসগোল্লা, নানা লোভনীয় মিষ্টান্ন সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। ক্রেতাও বেশ।

হাঁস-মুরগির বাজারের পাশাপাশি এমনকি কবুতর কেনাবেচার জন্য আলাদা জায়গা আছে বুধবারের এই হাটে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে কবুতর কেনার জন্য।

নাগরিক মানুষের প্রিয় মেরাদিয়া হাটের কোনো নির্দিষ্ট পরিসীমা নেই। তবে বনশ্রীর জি ব্লক থেকে ফয়জুর রহমান আইডিয়াল স্কুল পর্যন্ত এর বিস্তার।

হাটটি কবে শুরু হয়েছে, কিংবা এর বয়স নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি কেউ। তবে হাটে আসা স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোট থেকে তারা হাটটি দেখে আসছেন। বাপ-দাদার কাছেও এ হাটের কথা শুনেছেন। সেই হিসাবে শত বছরের প্রাচীন এই হাট। তবে অনেকের দাবি, মেরাদিয়া হাট চলে আসছে ২০০ বছর ধরে।

প্রচলিত আছে, ব্রিটিশ শাসনামলের মাঝামাঝি সময়ে হিন্দু জমিদার জানকী বল্লভ দত্ত মেরাদিয়া হাটের গোড়া পত্তন করেন। বছর দশেক আগেও এখানে একটি বড় বটবৃক্ষ ছিল। আদিতে একে ঘিরেই বসত বাজার। পরে এটি আরো বিস্তৃত হয়।

মেরাদিয়া বাজারে যাওয়া যাবে খিলগাঁও, মাদারটেক কিংবা রামপুরা ব্রিজ হয়ে।

(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :