কাশেমের পাঁচ দশকের যাযাবর জীবন

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০১৬, ১১:৩৫ | প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর ২০১৬, ০৮:৩২

দেখতে দেখতে পাঁচ দশক পার করে ফেলেছেন তিনি। চুলে পাক ধরেছে সেই কবে। কৈশোর থেকেই আনন্দ খুঁজেছেন ঘুরে বেড়ানোতে। জীবন সায়াহ্নে চলে এসেছেন। কিন্তু ক্লান্ত হননি। যৌবনকালের মতোই এখনো চলে যেতে চান এখানে সেখানে।

তার নাম কাশেম। পুরো নাম?-জানতে চাইলে বলেন, বাকিটা কী ছিল এখন আর মনে নেই। দেখা হলো রাজধানীর ইস্কাটন এলাকাতে। বেশভূষাটাই কেমন যেন। তাই আগ্রহ করেই কথা বলতে গেলাম তার সঙ্গে।

এই ব্যক্তিটির সঙ্গে কথোপকথনের শুরুটা ছিল এমন:

-আপনি কোথায় থাকেন?

-‘আমার আবার থাহা। এই রাস্তাতেই আছি। পানির পাম্পে গুমাই।’

-কেন বাড়িঘর নাই? দেশের বাড়ি কই?

-ময়মনসিং।

-এভাবে ঘুরছেন কেন?

-ঘুরতে ভালো লাগে, আনন্দ পাই।

নাম বললেন কাশেম। তার সঙ্গে বেশ দীর্ঘ সময়ই কথা হলো। জানালেন, সব সময় একা থাকতে চেয়েছেন। বিয়ে করেননি। পারিবারিক সম্পত্তির দিকেও মোহ নেই। গ্রামের বাড়িতে থাকেন না। ঘুরে বেড়ানোই তার জীবনের একমাত্র বাসনা। নির্দিষ্ট কিছু করেনও না। একটি টিনের কৌটা দিয়ে একতারা বানিয়ে মনের আনন্দে গান গান।

খাওয়া দাওয়া কোথায় করেন?

-গান গাই, খুশি হইয়া কেউ একটাকা, দুই টাকা দেয়, এইটা দিয়েই চলে যায়।

-কী গান করেন?

-লালন।

কাশেম জানান, তার বয়স যখন আট তখন ময়মনসিংহের বাড়ি থেকে বের হয়ে যান তিনি। এই বয়সে তার মনে হলো, একা থাকার মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ রয়েছে। পরিবারে থাকতে গেলে তাকে মানতে হবে কিছু নিয়ম-কানুন যেটা তার মোটেই ভালো লাগতো না। কারো কথা শুনার পাত্র ছিলেন না তিনি। মা-বাবা অর্থাৎ পরিবারের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। পাড়ি জমান ঢাকায়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ার সময় পকেটে করে নিয়ে আসেন মাত্র ৭০ টাকা। প্রথমেই এসে উঠেন শাহবাগের ফুটপাতে। এরপর থেকে যাযাবরের মত আজ শাহবাগে তো কাল কাওরান বাজার পরশু ফার্মগেট। অচেনা শহরে তার পরিচিত কেউ ছিলো না। বেঁচে থাকার সংগ্রামে প্রায়ই বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিলো তাকে।

ঢাকাটাইমসকে কাশেম জানান, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় পণ করেই বের হয়েছিলেন যত সমস্যাই আসুক ফিরে যাবেন না পরিবারে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা কাশেমের বয়স তার ভাষায় ৬০ কোটা ছুঁইছুঁই করছে। এখন বসবাস করেন ইস্কাটনের পাইপ লাইনের পাশের ফুটপাতে।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ার পর আর কখনো ফিরে যাননি তার মা-বাবা ও প্রিয় জন্মস্থান ময়মনসিংহে। নিজের মা-বাবা, পরিবার ও জন্মস্থান ছেড়ে একাকি বসবাস করার মধ্যে যে আনন্দ সেটাই নাকি তার কাছে স্বাধীনতা। রঙ্গোলাল এর ভাষায়-

-‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়’ স্বাধীনতা হীনতায় বাঁচতে নারাজ কাশেমের এ কেমন স্বাধীনতা!

ঢাকাটাইমস/২০নভেম্বর/এনআই/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :