এসব ঠগদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

মুনিরুদ্দীন আহমেদ
 | প্রকাশিত : ২৫ নভেম্বর ২০১৬, ১১:২৬

এক স্মার্ট যুবক আমেরিকার ভিসার জন্য ভিসা অফিসারের সামনে সার্টিফিকেট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দণ্ডায়মান। অফিসার কাগজপত্র পরীক্ষা করে যুবককে জিজ্ঞেস করলেন, আশা করি এসব আসল? যুবক সত্য কথাটি লুকালো না। বললো- নো স্যার, অল আর ফেক (না, স্যার, সবই নকল)।

অফিসার যুবকের দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে কিভাবে এসব সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে জানতে চাইলেন।

যুবক স্মার্টলি জবাব দিল, ‘ভেরি ইজি স্যার। এভরিথিং ইজ পসিবল ইন বাংলাদেশ। ইফ ইউ ওয়ান্ট আই ক্যান ইভেন ব্রিং মাই ওন ডেথ সার্টিফিকেট (খুব সহজ। বাংলাদেশে সব কিছুই সম্ভব। যদি আপনি চান তাহলে আমার মৃত্যু সনদও এনে দেবো) ।’

অফিসার বললেন, ‘রিঅ্যালি? ওকে, আই শেল কনসিডার ইওর কেস ইফ ইউ ক্যান ব্রিং ইওর ডেথ সার্টিফিকেট (সত্যি, ঠিক আছে, তুমি যদি তোমার মৃত্যু সনদ নিয়ে আসতো পারো, তাহলে তোমার বিষয়টি আমি দেখবো)।’

যুবক বললো, ‘ডেফিনিটলি স্যার। ইট ইজ নট অ্যা বিগ ডিল। ইউ উইল গেট ইট উইদিন অ্যা উইক’ (অবশ্যই, এটা কোনো ব্যাপারই না। আপনি এক সপ্তাহের মধ্যেই পেয়ে যাবেন)।

যুবক সাতদিন পর তার নিজের ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে অফিসারের সামনে হাজির। ভিসা অফিসার হতবাক হয়ে যুবকের দিকে তাকিয়ে থাকলেন অনেকক্ষণ। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে যুবককে বললেন, ‘ইউ আর অ্যা জিনিয়াস। উই নিড অ্যা ডেড লিভিং ম্যান লাইক ইউ ইন আমেরিকা । ইউ ডিজার্ভ দ্যা ভিসা। ওয়েলকাম টু আমেরিকা ইয়ং ম্যান’ (তুমি একজন লোক বটে। আমেরিকাতে তোমার মতো একজন জীবিত মৃত মানব দরকার। তুমি ভিসা পাওয়ার অধিকার রাখো। আমেরিকাতে তোমাকে সুস্বাগতম)।

এদেশে কি না হয় তার একটি মাত্র নমুনা দিলাম। বাংলাদেশের মানুষ এসব দিক থেকে বিশ্বের সেরা। আরও শুনুন। আজ ইউটিউবে এক ভিডিও ক্লিপে দেখলাম- তৃতীয় বিভাগে এসএসসি পাস করে প্রথম বিভাগের সনদ বানিয়ে দেশের এক সেরা ঠগ বিদেশ না গিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির নকল পিএইচডি সার্টিফিকেট তৈরি করে একটি অখ্যাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বনে গেছেন।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, তার পিএইচডি সার্টিফিকেট ভুয়া। জানা যায়, তার অন্যান্য ডিগ্রির সার্টিফিকেট অন্য এক কুখ্যাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেনা। টিভি সাংবাদিক খবর পেয়ে ভদ্রলোককে পাকড়াও করলেন এবং তার যোগ্যতার প্রমাণ চাইলেন। অপ্রস্তুত ফেক অধ্যাপক বার বার উত্তেজিত হয়ে পড়ছিলেন এবং সাংবাদিকদের ইংরেজিতে ধমক দেওয়াসহ পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছিলেন।

এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে মারতে উদ্যত হয়েও ক্যামেরার সামনে মারতে সাহস করলেন না। একই সংবাদে দেখানো হল- এক ভুয়া অধ্যাপক ভুয়া সার্টিফিকেট বানিয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বনে গেছেন।

ভুয়া সনদ নিয়ে নামি দামি শিক্ষক বনে গেছেন অনেকেই। কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রি করে কোটি টিকা উপার্জনের ঘটনা এদেশে নতুন নয়। এইসব সার্টিফিকেট নামের জঞ্জাল নিয়ে বহু ঠগ হয়ত প্রফেসর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ম্যাজিস্ট্রেট বনে যাচ্ছে, লোভনীয় চাকুরি জুগিয়ে নিচ্ছে, অফিস আদালতে বড় বড় প্রমোশন পেয়ে যাচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি এসব খবর জানে এবং মাঝে মাঝে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়। ২০১৪ সালে পুলিশ এক বেসরকারি ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্যকে দুই ছাত্রসহ ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রির অপরাধে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুর্নীতির মাত্রা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের চেয়ে অনেক বেশি ব্যাপক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব দুর্নীতি না রুখলেই যে নয়।

লেখক: অধ্যাপক, ক্লিনিকাল ফার্মাসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :