দুর্নীতির টাকায় কোটিপতি, অতঃপর বরখাস্ত
সাধারণ গ্রাহকদের নিঃস্বার্থভাবে বিদ্যুৎ পেতে সহায়তা করাসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বরগুনা এলাকার পরিচালক নির্বাচিত হয়েছিলেন মো.সালেহ উদ্দিন চুন্নু। কিন্তু ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারী পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে গ্রাহতদের সহায়তার বদলে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও উৎকোচ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
গ্রাহকদের কাছ থেকে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় গত বুধবার তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।তবে ততক্ষণে দুর্নীতির টাকায় সাধারণ ঠিকাদার থেকে কোটিপতে বনে গেছেন চুন্নু।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরগুনা-পটুয়াখালী অঞ্চলের জিএম মনোহর কুমার বিশ্বাস ঢাকাটাইমসকে চুন্নুর বরখাস্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচিত হওয়ার আগে বিদ্যুৎ নিয়ে গ্রাহকদের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে যুক্তিসঙ্গত দাবি তুলে ধরবেন। সুবিধা বঞ্চিত এলাকায় বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান তো দূরে থাক টাকা ছাড়া কোন কাজই করেননি চুন্নু।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে কয়েকশ গ্রাহকের কাছ থেকে গত দুবছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই পরিচালক।
অভিযোগ আছে, ২০১৫ সালে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরগুনা এলাকার পরিচালক নির্বাচনের আগে আগে সাধারণ গ্রাহকদের নাম ব্যবহার করে ঘরে বসে পল্লী বিদ্যুত সমিতির সিল প্যাড ব্যবহার করে জাল ভোটার আইডি কার্ড বানান তিনি। পরে নির্বাচন এলে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী রাজনৈতিকের ছত্রছায়ায় নানা অপকৌশলের মাধ্যমে নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন।
নির্বাচিত হওয়ার পরই শুরু করেন অনিয়ম দুর্নীতি আর উৎকোচ বাণিজ্য। কখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া,খাম্বা সরবরাহ, মিটার নামিয়ে দেয়া, সাইডলাইন দেয়ার কাজে গ্রাহকদের কাছ থেকে উৎকোচ নিতেন সালেহ উদ্দিন চুন্নু। এছাড়াও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ নানা ফন্দিফিকির করেও হাতিয়ে নিয়েছেন অনেক টাকা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরগুনার ডিজিএম আনোয়ারুল ইসলাম কিছুদিন আগে যোগদান করেছেন বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন,মোঃ সালেহ উদ্দিন চুন্নুর অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে আমার বিস্তারিত জানা নেই। তবে পটুয়াখালী আঞ্চলিক অফিসে একটি সভায় তার অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জেনেছি।
আর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরগুনার সাবেক ডিজিএম (বর্তমানে পিরোজপুরে কর্মরত) মোঃ সাইফুল আলম জানান, সালেহ উদ্দিন চুন্নুর বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পর তা খতিয়ে দেখতে ঢাকা থেকে পাঠায় পল্লী বিদ্যুতায়ন (আরইবি) বোর্ড একটি তদন্ত কমিটি পাঠানো হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে বোর্ডের উপ-পরিচালক মাসুদ রানার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি বরগুনার বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়।
তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত বুধবার পরিচালক আবু সালেহ চুন্নুকে বরখাস্ত করে চিঠি দেয়া হয়।
বরগুনা-পটুয়াখালী অঞ্চলের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মনোহর কুমার বিশ্বাস চুন্নুর বরখাস্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, কী কী অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে তা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে যোগাযোগ করলে জানা যাবে। কারণ বিষয়টি তাদের এখতিয়াভুক্ত।
তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত পরিচালক মোঃ সালেহ উদ্দিন চুন্নু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এ সংক্রান্ত কোন চিঠি আমি এখনো পাইনি।’
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক এমদাদুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বরগুনা এলাকার পরিচালক মোঃ সালেহ উদ্দিন চুন্নুর বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অপসারণ করা হয়েছে।’
(ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/প্রতিনিধি/বিইউ)