নরসিংদীতে অবৈধ স্পিডবোটে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত

প্রকাশ | ২৬ নভেম্বর ২০১৬, ০৮:৪০

এম লুৎফর রহমান, নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদীর কাউরিয়াপাড়া নতুন সরকারি লঞ্চঘাট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, সলিমগঞ্জ, মরিচাকান্দি, শ্রীপুর, করিমপুর নৌপথে স্পিডবোটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে যাত্রীরা।  এসব নৌযান চলাচলে কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন নেই। যাত্রী যাতায়াতে স্পিডবোটগুলোতে পর্যাপ্ত  নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদীর কাউরিয়াপাড়া নতুন সরকারি লঞ্চঘাট ও পুরাতন থানাঘাট থেকে নৌপথে যাত্রী যাতায়াতের জন্য লঞ্চ ও ট্রলার রয়েছে। সম্প্রতি যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোটে যাতায়াত করছে। নৌ বন্দর বা নদীপথে এসব স্পিডবোট চলাচলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। তবে নদী পথের কিছু ক্ষমতাসীন দলের নেতাকে ম্যানেজ করে পুলিশ প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে এই রুটে স্পিডবোট চলছে হরদমে।

নরসিংদী লঞ্চঘাটের লোকজন জানায়, এ পথে মাত্র কয়েকটি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী যাতায়াত করছে। এ ছাড়া ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রী পারাপার করা হয়। তবে কয়েক বছর ধরে অনুমোদন না নিয়েই স্পিডবোট দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। অদক্ষ্য চালক দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে স্পিডবোট চালানো হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এসব নৌযানের মালিক হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। আবার সরকারি টোলও পরিশোধ করছে না সঠিকভাবে।

নরসিংদী কাউরিয়াপাড়া ঘাটের এক লঞ্চমালিক বলেন, প্রতিনিয়তই লঞ্চের যাত্রীদের জোড় করে স্পিডবোটে তোলা হয়। এতে লঞ্চের লোকজন বাধা দিলে সমস্যা হয় তাই কেউ আর বাধা দেয় না।

কাউরিয়াপাড়া সরকারি লঞ্চঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই চারটি স্পিডবোট ছাড়া বেশির ভাগ বোটেই লাইফ জ্যাকেট (পানিতে ভেসে থাকার পোশাক) নেই। ঢেউয়ের মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে এসব স্পিডবোটে যাত্রীরা যাতায়াত করছে। প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে সলিমগঞ্জের জন্য দুইশ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। যেখানে লঞ্চের ভাড়া মাত্র ১৫ টাকা। আবার ট্রলারে গেলে ভাড়া হয় ১০ টাকা।

অন্যদিকে থানাঘাট থেকে মরিচাকান্দির জন্য ভাড়া নেয়া হচ্ছে জনপ্রতি একশ টাকা করে। যেখানে ট্রলারে বা লঞ্চে ভাড়া মাত্র ১০ টাকা। অনেকটা জোড় করেই স্থানীয় সুপারভাইজার নামের দালালের মাধ্যমে তারা লঞ্চের যাত্রীদের স্পিডবোটে তোলা হচ্ছে।

ঘাটের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ মালিকেরই পাঁচ থেকে ছয়টি করে স্পিডবোট রয়েছে। এখানে কোনো নিয়মনীতি নেই, যেকোনো ব্যক্তিই বোট নামাতে পারে। তবে স্থানীয় বোট সমিতিকে ম্যানেজ করতে হবে। তারা আরো জানান, প্রতিটি স্পিডবোট সরকারি ঘাটে একশ টাকা করে টোল দিয়ে থাকে যা সমিতির নেতাদের কাছে দিতে হয়।

কিন্তু এই ঘাটের টোল আদায়কারী মো. নজরুল ইসলাম জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি স্পিডবোট থেকে ৭৫ টাকা করে নেওয়া হয়ে থাকে রশিদের মাধ্যমে। আর সমিতির নেতারা ঠিকমতো টোল দেয় না।

অপরদিকে থানাঘাট বেসরকারি হওয়ায় এখানে সরকারের ঘরে কোনো অর্থ জমা দিতে হয় না। তারপরও এই ঘাটে বোট প্রতি দুইশ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। এসব স্পিডবোট পরিচালনার দায়িত্বে গোপনে রয়েছেন সরকার দলীয় নেতারা।

স্পিডবোট পরিচালনা সমিতির সভাপতি মো. বাচ্চু মিয়াকে সমিতির কার্যালয়ে না পেয়ে তার ব্যক্তিগত মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আগে থেকেই বিশ থেকে পঁচিশটি স্পিডবোট চলতো। সম্প্রতি মাওয়া ঘাটে স্পিডবোট বন্ধ হওয়ায় এই ঘাটে আরও অনেক স্পিডবোট এসেছে।

এগুলোর কাগজপত্র বিষয়ে জানতে চাইলে বাচ্চু মিয়া বলেন, এগুলো চালাতে কোনো কাগজপত্র লাগে না। নিয়মিত সরকারের ঘরে টাকা দেই আর সমিতির নামে কিছু টাকা তুলে আমরা মালিকরাই তা পরিচালনা করে থাকি।

বিআইডব্লিউটিএর টোল আদায়কারী নজরুল ইসলাম বলেন, এখানে (সার্ভে লাইসেন্স) ও নিবন্ধন ছাড়াই স্পিডবোট চলছে। এগুলোর প্রয়োজন তারা মনে করেন না।

(ঢাকাটাইমস/২৬নভেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএ)