কল্পনা চাকমা অপহরণ: বিচার না পাওয়ার শঙ্কায় স্বজনরা

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি
 | প্রকাশিত : ২৮ নভেম্বর ২০১৬, ০৮:২৭

বিচার ছাড়াই মামলা নিষ্পত্তি হতে পারে এমন আশংকা করছেন রাঙামাটির আলোচিত অপহৃত কল্পনা চাকমার স্বজনরা। গত ৭ সেপ্টেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। তিনি অতীতের তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে মিল রেখে বলেন, ভবিষ্যতে কল্পনা চাকমার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে বা কল্পনাকে উদ্ধার করা সম্ভব হলে যথানিয়মে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হবে। এ তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর আজ সোমবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

দীর্ঘ ২১ বছরেও তদন্তে কল্পনা অপহরণের কোনো রহস্য বের করতে না পারায় হতাশ পরিবারের স্বজন ও মানবাধিকারকর্মীরা।

কল্পনার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা ঢাকাটাইমসকে বলেন, Ôপুলিশ সুপার যে প্রতিবেদন দিয়েছেন এতে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। কল্পনার অপহরণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের নাম প্রতিবেদনে আসেনি।’ তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে যে তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর আমি অসন্তোষ জানিয়ে আসছি তা বারবার দেয়া হচ্ছে। এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধেও আমি নারাজি দেব।’

বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা বলেন, সরকার কল্পনা চাকমা অপহরণের সুষ্ঠু বিচার করতে কতটা আন্তরিক, এ অপহরণের বিচার সরকার আদো চায় কি না- এ নিয়ে সন্দেহ আছে। যারা তদন্ত করছে তারা সরকারেরই অংশ। সরকার চাইলে এ রহস্য বের করতে পারত। কিন্তু করছে না। এর চেয়ে দুঃখজনক আর হতে পারে না।

সিনিয়র আইনজীবী সুস্মিতা চাকমা বলেন, এত বছর পর্যন্ত তদন্ত চলল আর ঘুরে-ফিরে সেই একই তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে। এই ঘটনার প্রকৃত রহস্য বের করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু এর দায় যদি হাওয়ার ওপরে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে এটি রাষ্ট্রের ব্যর্থতা।

কল্পনা অপহরণ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী জুয়েল দেওয়ান বলেন, পুলিশের তদন্তের বিরুদ্ধে তারা নারাজি দেবেন এবং অধিকতর তদন্তের আবেদন জানাবেন। এ আবেদন যদি আদালত গ্রহণ না করে তাহলে বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হবে। যদি তদন্তের নির্দেশ দেন তাহলে বিচার পাবার সম্ভাবনা থাকবে।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি রাঙামাটি মুখ্য বিচারিক হাকিম যে আদেশ দিয়েছেন এর মধ্যে হলো; কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো; যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ লে. ফেরদৌস, ভিডিপি নুরুল হক ও সালেহ আহমদে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা; মামলার সাক্ষী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দী ১৬১ ধারা মোতাবেক লিপিবদ্ধ করা এবং ঘটনার প্রকৃত তথ্য ও রহস্য বের করা। কিন্তু তদন্ত চলাকালে এগুলো অনুসরণ করা হয়নি। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের পরিবর্তে তাদের কম্পিউটারে টাইপকৃত জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মামলাটি দীর্ঘদিন চলার কারণে আলামত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মামলার অন্যতম সাক্ষী কল্পনা চাকমার মা মারা গেছেন। বাকি সাক্ষীরাও বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছেন। শুধু তদন্তকাজে এভাবে সময়ক্ষেপণ করা হলে কল্পনার অপহরণের সুষ্ঠু বিচার পাবেন না তার পরিবার।

১৯৯৬ সালের ১১ জুন গভীর রাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাল্যাঘোনার নিজ বাড়ি থেকে কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়। আলোচিত এ ঘটনায় দেশে-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ঘটনার পরদিন ১৩ জুন বাঘাইছড়ি থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন কালিন্দী কুমার চাকমা। এই অপহরণ ঘটনায় সেনাবাহিনী ও আনসার ভিডিপি সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে ১৯ আগস্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়। এতে আহ্বায়ক ছিলেন ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আব্দুল জলিল, সদস্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অনুপম সেন। এই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক কল্পনা চাকমা অপহৃত হয়েছে। কিন্তু কার দ্বারা অপহৃত হয়েছে তা আমাদের পক্ষে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

১৯৯৬ সালে মামলা দায়েরের পর ২০১০ সালের ২১ মে বাঘাইছড়ি থানার পুলিশ এসআই ফারুক আহম্মদ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। এতে কল্পনার সন্ধান পাওয়া যায়নি এবং ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি উল্লেখ করে মামলাটি বাতিলের আবদেন জানান।

এ আবেদনে কালিন্দী কুমার চাকমা নারাজি আবেদন করলে আদালত সিআইডিকে পুনঃ তদন্তের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশে সিআইডি কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহর তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এ প্রতিবেদনেও অভিযুক্ত লে. ফেরদৌস, ভিডিপি প্লাটুন কমান্ডার নুরুল হক ও সালেহ আহম্মেদের নাম না আনায় বাদী কালিন্দী কুমার চাকমা নারাজি দিলে ১৬ জানুয়ারি দুই দফা শুনানি শেষে তৎকালীন রাঙামাটির অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুদ্দৌলাহ কুতুবী রাঙামাটি পুলিশ সুপারকে দিয়ে পুনঃ তদন্তের আদেশ দেন।

এ মামলার দীর্ঘ ২০ বছরে একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান ছিলেন ৩৯ তম তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি গত ৭ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। এ প্রতিবেদনের ওপর ২৮ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত।

(ঢাকাটাইমস/২৮নভেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :