অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথেই দারিদ্র্য বিমোচন

মোহাম্মদ জমির
| আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৬, ১৭:৫০ | প্রকাশিত : ২৮ নভেম্বর ২০১৬, ১৭:৪৭

সাম্প্রতিক অতীতে আমরা বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রগতি লক্ষ্য করেছি। অর্থনীতির সূচকগুলো দেখলেই তা আঁচ করা যায়। এই অগ্রগতি কিন্তু দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখছে। অন্ধকার পেরিয়ে আমরা আলোর পথে হাঁটছি। একসময়ের যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির উদীয়মান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছি। সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি, যা আমাদের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) পূরণের মধ্যেই প্রতিফলিত হয়েছে।

গত ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ ৭ দশমিক ১১ শতাংশ, যা গত ছয় বছরের জিডিপি বিবেচনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উজ্জ্বল এক নিদর্শন। আগের দুই অর্থবছরে অর্জিত জিডিপি ছিল যথাক্রমে ৬.৬ এবং ৬.৫৫ শতাংশ। ২০০৬-০৭ অর্থবছরের পর প্রথমবারের মতো জিডিপি ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। একই সঙ্গে জানা যায়, গত আর্থিক বছরে মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলার, যা পূর্বানুমানের চেয়ে মাত্র ১ ডলার কম। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনে করছে বিনিময় হারের পার্থক্যের কারণে এই পার্থক্য। চলতি বছরের এপ্রিলে মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৭৮ দশমিক ১৫ টাকা, যা বর্তমানে ৭৮ দশমিক ২৭ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৩১৬ ডলার।

পরিসংখ্যান ব্যুরো স্থির মূল্য বিবেচনায় এই ধরনের আরও অনেক মজার তথ্য জানিয়েছেন। যেমন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ০৯ শতাংশ, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সেবা খাতে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, যা এক বছর আগে ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

একজন অর্থনীতি বিশ্লেষকের মতে, নির্দিষ্ট কিছু কারণে এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ (ক) সেবাখাত বিশেষ করে প্রশাসন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে বেতন বৃদ্ধি এবং (খ) উৎপাদন, অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন। অন্যদিকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুর্বল যোগাযোগ অবকাঠামোয় ভোক্তারা আস্থা রাখতে পারছিলেন না। সে কারণে শিল্প খাত ভোগান্তির মধ্যে ছিল।

এছাড়া বিবিএসের তথ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ওঠে এসেছে। মার্কিন ডলার মূল্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শিল্পখাতে প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি। গত বছরে বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু এবং ফ্লাইওভারের নির্মাণসামগ্রী আমদানি করা হয়। এছাড়া শিল্পখাত বিশেষ করে পোশাক ও টেক্সটাইল কারখানা প্রসারের কারণেও বেড়েছে মূলধনী যন্ত্রাংশের আমদানি।

অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিশ্ববাজারে মূলধনী যন্ত্রাংশের মূল্য হ্রাসের কারণে নতুন ধারণা নিয়ে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছেন। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও তাদের চলমান ব্যবসা প্রসারে নতুন ধারণা নিয়ে আসছেন। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে আবাসন, ভাড়া এবং ব্যবসা প্রসার সংক্রান্ত কার্যক্রম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া সম্পদের মূল্য পুনরায় নির্ধারণ এবং গৃহঋণের সুদ হ্রাসও এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

আজকের বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু অর্থনীতিবিদের বিচ্ছিন্ন সংশয় থাকলেও ক্রয়ক্ষমতার সমতা (পারসেচিং পাওয়ার প্রায়োরিটি) এবং অন্যান্য পরিসংখ্যান মতে, বিশ্ব অর্থনীতিতে ৩৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে আরও দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে যদিও দেখা যায়, মানব উন্নয়ন সূচকে উন্নতি সত্ত্বেও বৈশি^ক ক্ষুধা সূচক (জিএইচআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিউটের (আইএফপিআরআই) জরিপে ১১৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯০তম। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩২ দশমিক ৪ পয়েন্ট। বর্তমানে ২৭ দশমিক ১ পয়েন্ট নিয়ে স্কোরের কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো নেপাল (৭২), মিয়ানমার (৭৫) এবং শ্রীলঙ্কার (৮৪) চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। যদিও আমরা ভারত (৯৭), পাকিস্তান (১০৭) এবং আফগানিস্তানের (১১১) চেয়ে এগিয়ে রয়েছি। পুষ্টিহীনতা, শিশু মৃত্যুর হার কমানো ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে জিএইচআই স্কোর নির্ধারিত হয়। এটি নিশ্চিত যে, আমরা ক্রমেই উন্নতি করছি। তবে উন্নতির এই প্রচেষ্টায় শুধুমাত্র আন্তরিকতাই যথেষ্ট নয়, বরং তৃণমূল পর্যায়কে আরো সম্পৃক্ত করতে হবে। বিশেষ করে রংপুর বিভাগকে।

১৬ অক্টোবর জেনারেল ইকোনোমিক ডিভিশন (জিইডি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, মাথাপিছু আয় বাড়া সত্ত্বেও এখনো তিন কোটি ৭৬ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার সাড়ে ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে এক কোটি ৯৪ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র। তবে এই পরিসংখ্যান আরও জানায়, ২০০৯ সালের চেয়ে বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটেছে। সেই সময়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল পাঁচ কোটি এবং অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৮০ লাখ।

আগে বুঝতে হবে যে, দরিদ্রতার রয়েছে অনেকগুলো চিত্র, যা সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক উপাদানের সঙ্গে জড়িত। মূলত, দরিদ্রতা মানুষের পছন্দ এবং সুযোগের সামর্থ্য এবং মর্যাদা নষ্ট করে। ফলে সামাজিক কল্যাণকর কর্মকা-ের সুযোগ কমে যায়। এর অর্থ হচ্ছে একটি পরিবারে পর্যাপ্ত খাদ্য ও পোশাক নেই, সেখানে শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ নেই। খাবার উৎপাদনের মতো প্রয়োজনীয় জমি নেই এবং তাদের কোনো চাকরিও নেই। সুতরাং তাদের ঋণ গ্রহণেরও কোনো সুযোগ নেই। ফলে অনিরাপত্তা ও শক্তিহীনতার কারণে পরিবার, সমাজ ও ব্যক্তির কাছে হেয় হতে হয়, যা ব্যক্তিকে বিপথে যেতে প্রভাবিত করে। অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিরাপদ পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধা পায় না। দরিদ্রতার সঙ্গে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুবিধা এবং শিক্ষার সুযোগ না পাওয়ার বিষয়টিও জড়িত। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের অভাব, অপর্যাপ্ত শারীরিক নিরাপত্তা, নিজের পর্যাপ্ত চাহিদা বুঝে না পাওয়া, অপর্যাপ্ত সক্ষমতা এবং সুযোগ তাদের উন্নত জীবনের সুযোগ করে দেয় না।

মানুষের ন্যূনতম চাহিদায় ঘাটতির ক্ষেত্রে অতি দরিদ্র, চরম দরিদ্র কিংবা অতি চরম দরিদ্রের মধ্যে একটি শর্তযুক্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চাহিদা বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, শিক্ষা এবং তথ্যের সুবিধা। এটি শুধুমাত্র উপার্জনের সঙ্গে নয় বরং পরিসেবাগুলোর উপলব্ধির সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাক নামারা ‘চরম দরিদ্র’ এবং ‘অতি চরম দরিদ্র’কে একই অর্থে ব্যবহার করেছেন। তিনি চরম দরিদ্রকে বর্ণনা করেছেন, ‘একটি শর্ত যা পুষ্টিহীনতা, অশিক্ষা, অসুখ, দারিদ্র্যপীড়িত পরিবেশ, উচ্চহারে নবজাতকের মৃত্যু এবং কম আয়ুষ্কার দ্বারা পরিবেষ্টিত, যা মানুষের স্বাভাবিক শিষ্টাচারগুলোকে তলদেশে নিয়ে যায়।’

দরিদ্রতার কারণে সামাজিক অবস্থান, সামাজিক সম্পর্কও হেয় হয়। একই সঙ্গে সামাজিক অনুষ্ঠান সমাজে বসবাসরত অন্যদের সঙ্গে দরিদ্র ব্যক্তির সহাবস্থান গড়ে ওঠে না। সমাজের মূল চালিকা থেকে এভাবে বিতাড়িত হওয়ার সঙ্গে দারিদ্র্যের যোগসূত্র রয়েছে। জাতীয় সম্পদের সুষম বণ্টন এবং দারিদ্র্যের কারণে বিতাড়িতদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার দরিদ্রতা দূর করতে পারেন।

দেশ থেকে দরিদ্রতা দূরীকরণে বাংলাদেশ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শহর এবং গ্রামের পার্থক্য দূরীকরণ।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জে. ওয়াই. কিম গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা পরিদর্শনে এসে এই বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি দরিদ্রতা দূরীকরণে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং জবাবদিহিতার প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণের পদক্ষেপ নিয়েছে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে এবং জ¦ালানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সুশাসনের উন্নয়ন ঘটেছে। একই সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপেরও প্রশংসা করেছেন তিনি। তার মতে, এসবের ফলে বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নতি হয়েছে। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, বিনিয়োগ অবকাঠামো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, অভিযোজন এবং প্রশমনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দোদুল্যমানতার চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠছে বাংলাদেশ। এসব বিষয়ই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ দরিদ্রতার ফাঁদ পেরিয়ে এসেছে। তার এমন মন্তব্য অবশ্যই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

অবশ্যই ২০১৬ অর্থবছরের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে খবর আসছে সেগুলোকে আমরা স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে আমরা বাংলাদেশে চীনের আড়াই হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রকল্পকেও স্বাগত জানাই। চীনের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি করেন। একইভাবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের নজরে আসাকেও আমরা স্বাগত জানাই। এসবই আমাদের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত।

এসব কারণে ওইসিডি (জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন সূচক) র‌্যাংকিংয়ে আমরা ভালো অবস্থানে যেতে পারি। সেই সঙ্গে শিক্ষা, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এবং স্বাস্থ্যসেবায় উন্নয়নের মাধ্যমে রেমিটেন্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রপ্তানি আয়, নির্ভরতা হ্রাস, মানব উন্নয়নে সফলতা এবং সামাজিক নিরাপত্তা অর্জন করতে পারি।

এটি স্পষ্ট যে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। যদিও খাদ্য নিরাপত্তা এবং অতি দরিদ্রদের জীবন-মানের উন্নয়নে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম, বরিশাল, চাঁদপুর এবং জামালপুর জেলার ভুরুঙ্গামারী, চর রাজিবপুর, চিলমারী, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, উলিপুর, বাকেরগঞ্জ, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ এবং দেওয়ানগঞ্জের মতো উপজেলার নাম এখানে উল্লেখযোগ্য। শহরাঞ্চলের সঙ্গে আয়ের বৈষম্য দূরীকরণেও কাজ করতে হবে। যদি আমরা এটি করতে পারি, তাহলে অবশ্যই ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব হবে।

মোহাম্মদ জমির : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও প্রধান তথ্য কমিশনার

[email protected]

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :