কম দামে টাটকা মাছ

ইফতেখার রায়হান, টঙ্গী (গাজীপুর)
 | প্রকাশিত : ০২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:২৩

কথায় বলে- ‘মাছে ভাতে বাঙালি।’ কবি ঈশ্বর গুপ্ত আরেক ধাপ এগিয়ে বলেন, ‘ভাত-মাছ খেয়ে বাঁচে বাঙ্গালি সকল/ধানে ভরা ভূমি তাই মাছ ভরা জল’। মাছ নিয়ে অনেক কবি সাহিত্যিক কবিতা ও গল্প লিখেছেন। ভোজনরসিক বাঙালিদের খাবারের তালিকায় মাছ না হলে চলেই না। কিন্তু হাওড়-বাওড় ও গ্রামাঞ্চলের জলাশয়গুলোতে দিনদিন মাছের পরিমাণ কমে আসায় বাজারে মাছের দাম এখন আকাশচুম্বি। নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষের কাছে বাজার থেকে টাটকা মাছ কিনে খাওয়া অনেকটা দিবাস্বপ্নের মতোই।

গ্রামাঞ্চলে মাছের দাম তুলনামুলক কম হলেও রাজধানী ঢাকায় মাছের দাম আকাশ ছোঁয়া। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রাজধানীর উত্তরার আব্দুল্লাহপুরের মাছ বাজার। এ বাজারের নাম সুলতান শাহ মৎস আড়ৎ হলেও লোকজন এ বাজারকে আব্দুল্লাহপুর মাছ বাজার বলেই চিনে। যারা এখনো যাননি এই বাজারে তারা সময় করে একবার ঢুঁ মেরে আসবেন, তখনই বুঝবেন অন্যান্য বাজারের সাথে এই বাজারের তফাৎটা কোথায়।

আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধের এই বাজারে ছোট বড় সব ধরনের মাছ পাওয়া যায়। পাওয়া যায় সামুদ্রিক মাছও। বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানসহ পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য এ বাজারে পাওয়া যায় টাটকা মাছ। সবাই ভাবেন টাটকা মানেই তো দামি। কিন্তু এ বাজারে আসলে তা নয়। এ বাজারের মাছের দাম অন্যান্য বাজারের চেয়ে ৩০% কম। টাটকা অথচ সস্তা! অবাক হওয়ার মতোই। বাজারটি মূলত পাইকারি মাছের আড়ৎ হলেও আশপাশের লোকজন সস্তায় টাটকা মাছ কিনতে ছুটে আসেন এই বাজারে। রাতভর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক ও পিকআপ বোঝাই মাছ নিয়ে আসা হয় এই বাজারে। ভোর থেকেই শুরু হয় বেচাকেনা। আর সকাল ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় মাছ বিক্রি। আশপাশের বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী ও ফেরি করে যারা বাসাবাড়িতে মাছ বিক্রি করেন, তারা ভোরেই চলে আসেন পছন্দসই মাছ কিনতে। আড়ৎদারদের হাঁকডাকে ভোর থেকেই জমে উঠে মাছ বিক্রি। দর কষাকষির তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। কারন যারা এ বাজার থেকে মাছ কিনতে আসেন, তারা সবাই জানেন অন্যান্য বাজারের তুলনায় এ বাজারে মাছের দাম কম।

মাছের দাম

ছোট, বড় ও মাঝারি সব ধরনের মাছ পাওয়া যায় এ বাজারে। মাছের সাইজের উপর নির্ভর করে দাম। দেড় কেজি ওজনের বড় সাইজের একটি ইলিশ প্রতি কেজি ১৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। আর ছোট সাইজের ইলিশের দাম কেজি প্রতি ৪০০/৫০০ টাকাতে পাওয়া যায় এখানে। বোয়াল মাছ সাইজভেদে ২৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হয়। এছাড়া বড় সাইজের রুই মাছ ৪০০ টাকা কেজি, ছোট সাইজ ১৫০-১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কাতল সাইজভেদে ১৫০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। গলদা চিংড়ি বড় সাইজ ৪০০-৫০০ টাকা, ছোট সাইজ ২৫০ টাকা কেজি। চিতল মাছ বড় সাইজ ৪৫০-৫০০ টাকা, ছোট চিতল ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তেলাপিয়া বড় সাইজ ১২০ টাকা, ছোট ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কার্পূ সাইজভেদে ১০০-১৫০ টাকা কেজি। পোয়া মাছ প্রতি কেজি ২০০-২২০ টাকা, ব্রিগেড মাছ প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা, গ্রাস কার্প প্রতি কেজি ১৫০-১৭০ টাকা, শিং মাছ সাইজভেদে প্রতি কেজি ২০০-৫০০ টাকা, কোড়াল মাছ ২৫০-৫০০ টাকা, পাঙ্গাস মাছ ১০০-১২০ টাকা কেজি, সাগরের বাইলা সাইজভেদে ২৫০-৪০০ টাকা কেজি, শোল মাছ ২৫০-৫০০ টাকা কেজি, লইট্টা ১০০ টাকা কেজি। বাজারের সবচেয়ে দামি মাছ আইড় মাছ। এই বাজারে ৮-১০ কেজি ওজনের একটি আইড় মাছ কেজি প্রতি ৮০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হয়। অন্যান্য দিনগুলোর চেয়ে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বাজার বেশি জমজমাট থাকে। তবে মাসের শেষ দিকে মাছের দাম কিছুটা কম থাকে বলে জানায় এখানকার আড়ৎদাররা।

মাছ কাটার ব্যবস্থা

ঘরের গৃহিণীদের কাছে মাছ কাটা একটি বিরক্তিকর কাজ। যাদের বাসায় এই সমস্যা আছে তারা চাইলে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন এখানে। এখানে বড়-ছোট সব ধরনের মাছ পছন্দমত কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বাজারের উত্তর পার্শ্বে ৮/১০টি বটি নিয়ে মাছ কাটার জন্য অপেক্ষমান থাকে একদল যুবক। বড় সাইজের যে কোন মাছ কাটতে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে দিতে হয় তাদের। তবে ছোট মাছের ক্ষেত্রে খরচটা একটু বেশি। ছোট মাছ যেমন, শিং, কই, শোল ইত্যাদি মাছ কাটতে ২০ টাকা করে কেজিতে দিতে হয়। শুধু বাজারে বসেই মাছ কেটে দেয় তা নয়, চুক্তি ভিত্তিতে বাসা-বাড়ি ও কমিউনিটি সেন্টারে গিয়েও মাছ কেটে দিয়ে আসা হয়।

সরেজমিনে আব্দুল্লাহপুরের মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে আড়ৎদাররা সাজিয়ে রেখেছেন তাদের মাছ। অনেকটা নিলামের মত করেই হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

এখানকার একজন পাইকারি মাছ বিক্রেতা ঢাকাটাইমসকে জানান, খুলনা, বাগেরহাট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ভৈরবসহ দেশের সব জেলা থেকে রাতভর এই বাজারে মাছ নিয়ে আসে বেপারিরা। টঙ্গী, গাজীপুর, কালীগঞ্জ, আশুলিয়া, সাভার, বাড্ডা, রামপুরা, দক্ষিনখান, মিরপুরসহ আশপাশের এলাকার বাজারের খুচরা মাছ বিক্রেতারা এই বাজার থেকে মাছ কিনে নিয়ে বিক্রি করে। কম দামে টাটকা মাছ পাওয়া যায় বলে অন্যান্য বাজারের তুলনায় এই বাজার বেশি জনপ্রিয়।

একজন আড়ৎদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, বাজার এখন মন্দা। চাহিদার তুলনায় এই বাজারে মাছের সরবরাহ অনেক বেশি। তাই কম দামে মাছ বিক্রি করতে বাধ্য হই আমরা। মাসের শুরুর দিকে দাম ভালো পেলেও মাসের শেষ দিকে বাজারে মাছের দর অনেক কম থাকে।

রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে এ বাজারে মাছ কিনতে এসেছেন জসিম উদ্দিন। দু’হাতে দুটি তাজা কার্পূ মাছ নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। জসিম উদ্দিনের সাথে কথা হয় ঢাকাটাইমস প্রতিবেদকের।

ঢাকাটাইমসকে তিনি জানান, শুক্রবার ছুটি থাকায় তাজা মাছ কিনতে খিলক্ষেত থেকে এ বাজারে এসেছি। এ বাজার থেকে অন্যান্য বাজারে মাছের দাম ৫০-১০০ টাকা বেশি। তাই তুলনামূলক কম দামে টাটকা মাছ কিনতে প্রতি সপ্তাহে ছুটে আসি এই বাজারে।

কথা হয় মাছ কিনতে আসা গৃহিনী লোপা আবেদীনের সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, পরিবারের সবাই তাজা মাছ খেতে পছন্দ করে। সব বাজারে তাজা মাছ পাওয়াও যায় না। আর ভাগ্যক্রমে যদিও পাওয়া যায়, তবে তার দাম রীতিমত হাতের নাগালের বাইরে। তাই কম দামে টাটকা মাছ কিনতে এখানে চলে আসি সবসময়।

আব্দুল্লাহপুর মৎস সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুলতান শিকদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমাদের বাজারের সবচেয়ে ভালো দিক ফরমালিন মুক্ত মাছ। ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিদিন নজরদারি না করলেও সমিতির পক্ষ থেকে আমরা খেয়াল রাখি কেউ যেনো ফরমালিনযুক্ত মাছ বিক্রি করতে না পারে। যদি কোন আড়ৎদার মাছে ফরমালিন মেশান, তবে সমিতির পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আর সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী আমরা বাজারে পাইকারি মাছ বিক্রির পাশাপাশি খুচরা মাছ বিক্রি করে থাকি। সাধারণ মানুষ কম দামে টাটকা মাছ পায় বিধায় দূরদুরান্ত থেকে মাছ কিনতে এই বাজারে ছুটে আসেন।

(ঢাকাটাইমস/২ ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :