অবৈধ দখলে ছাগলমারা খাল এখন নোয়াখালীর দুর্ভোগ
নোয়াখালী শহরের পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম ছাগলমারা খাল দখল করে গড়ে উঠেছে ভবন ও স্থাপনা। সংকীর্ণ হয়ে পড়া প্রায় রুদ্ধ খালের আবর্জনা আর জলাবদ্ধতায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে শহরজুড়ে। অবৈধ দখলের কারণে ছাগলমারা খাল এখন শহরবাসীর জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু দায় নিচ্ছে না কেউ। না পৌরসভা, না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পৌরসভা বলছে, খালটি তাদের কাছে হস্তান্তর করেনি পাউবো। ফলে তাদের কিছু করার নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর বাজারের সম্মুখ, হরিনারায়ণপুর, বিশ্বনাথ স্বর্ণকার, ফকিরপুর, সুলতান কলোনিসহ অন্তত ১০টি এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছাগলমারা খালের পাড় দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল মার্কেট, আবাসিক ভবন ও বসতবাড়ি। এসব ভবনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খালে। দখল আর আবর্জনায় খালের আকার ছোট হয়েছে। কমেছে গভীরতা। পানিপ্রবাহ রুদ্ধ।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, খালটির উৎপত্তিস্থল ও শেষাংশ মিশে গেছে সমতলে। এতে বর্ষা মৌসুমে নোয়াখালী শহরের পানি নিষ্কাশনে দেখা দিচ্ছে বিপত্তি।
খালের এই দুর্গতি চলছে দিনে পর দিন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি খালটির মালিক পাউবো। এমনকি খালটি সম্পর্কে কোনো ধরনের তথ্য দিতে পারেনি সরকারি সংস্থাটি। তথ্য দিতে পারেনি নোয়াখালী পৌরসভাও।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নোয়াখালী পৌরসভার সাবেক এক সার্ভেয়ার জানান, ১৯১৬ সালে রেকর্ড হওয়ার পর ১৯২২ সালের নকশায় ‘ছাগলমারা খাল’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় এটি। ওই সময় বর্তমান জেলা শহর ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে নোয়াখালী মৌজায়। কিন্তু নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর ১৯৪৮ সালের দিকে পুরনো শহর স্থানান্তর হয় বর্তমান স্থানে, যা নোয়াখালী পৌর শহর বা মাইজদী শহর হিসেবে পরিচিত।
ওই সার্ভেয়ার আরো জানান, খালটি শহরের বিভিন্ন অংশে আঁকাবাঁকা করে খনন করা হয়। ফলে এর প্রস্থ একেক স্থানে একেক রকম ছিল। তবে সর্বনিম্ন প্রস্থ ২৫ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ ফুট পর্যন্ত ছিল। নতুন শহর স্থানান্তরের পর খালটি ছিল শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের বড় মাধ্যম। বর্ষায় শহরের পানি ছাগলমারা খাল হয়ে নোয়াখালী খালে ও নোয়াখালী পৌর বাজার হয়ে মাইজদী বাজার অতিক্রম করে গাবুয়া খাল হয়ে এ পানি যেত মালেক খালে।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নোয়াখালী পৌর শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে শহরের বিভিন্ন অংশে এ খাল খনন করা হয়েছিল। খালটির শেষ অংশ দত্তেরহাট এলাকা হয়ে নোয়াখালী খালের সঙ্গে যুক্ত হয়। তাই বর্ষা মৌসুমে শহরের সিংহভাগ পানি ড্রেনের মাধ্যমে ছাগলমারা খাল হয়ে নোয়াখালী খালে গিয়ে পড়ে। যত দিন খালটির অবস্থা ভালো ছিল, তত দিন শহরে জলাবদ্ধতা ছিল না। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরে জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
তারা বলছেন, দিন দিন খালের পাড়ে ভবন নির্মাণের কারণে বর্তমানে খালটি পরিণত হয়েছে সরু ড্রেনে। এ জন্য পাউবো ও পৌরসভার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়ী করছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছাগলমারা খালের দিকে পৌরসভা যেমন নজর দিচ্ছে না, তেমনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পাউবো।
নোয়াখালী পৌরসভার ফকিরপুরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেবল হক (৬৫) বলেন, শুরু থেকেই শহরের পানি এ খাল হয়ে বাইরে যেত। বিভিন্ন মহল্লার ড্রেনের পানিও ছাগলমারা খাল হয়ে নোয়াখালী খালে গিয়ে পড়ত। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ও অবৈধভাবে খালের পাড় দখল হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা থাকে নোয়াখালী শহরে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, পাউবো এখনো ছাগলমারা খালটি পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করেনি। তার পরও পৌর শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালের পাড় দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/৩ডিসেম্বর/মোআ)
মন্তব্য করুন