বইঃ আমার কথা
‘বাংলার বসন্ত’
সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘আমার কথা’। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকান্ড, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন। এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ‘ঢাকাটাইমস২৪ডটকম’ ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। বইটির আজকের পর্বে থাকছে- ‘বাংলার বসন্ত’
আজকাল প্রতিটি সভা-সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের বসন্তে অন্তরায় হচ্ছে জঙ্গিবাদ। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়া কী তা নিয়েও আলোচনা হয়। জঙ্গিবাদ এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে যে, এটা চিরতরে নির্মূল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। কেবল পুরুষ নয়, এই জঙ্গী দলে নারীও নাকি নাম লিখিয়েছে। ভারতে আবার ধরাও পড়েছে ওই জঙ্গিদের দুজন। জঙ্গিবাদ বাংলাদেশের জন্য একটা বড় সমস্যা। তবে এই সমস্যা রাতারাতি তৈরি হয়নি। মোটা দাগে বলতে গেলে, তাদের দীর্ঘদিনের অগ্রহণযোগ্য ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি থেকে বাংলার বসন্তের অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে। তাদের নির্মূল করতে হবে। উন্নয়নের যে হাওয়া বইছে এই পরিবর্তনের হাওয়াকে কাজে লাগাতে না পারলে বহু বছর ভুগতে হবে আমাদের।
আমি সরকারে থাকতে এবং সরকারের বাইরে আসার পরও বিভিন্ন সময়, আমাদের নেতৃবৃন্দকে উচ্চঃস্বরে এবং পরিষ্কারভাবে এ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম- নাগরিক সুবিধা বাড়াতে হবে। জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হবে। এটা যদি নির্মূল করা না যায় এবং সরকার যদি আরও নাগরিক সুবিধা বাড়াতে নিজেদের আমূল সংস্কার করতে সক্ষম না হয়, তাহলে নাগরিকরা তাদের ক্ষমা করবে না এবং ইতিহাস তাদেরকে রূঢ়ভাবে বিচার করবে। আমি তাঁদেরকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি- বদলে যান অথবা নিজেদেরকে যাঁরা বদলাতে চান তাঁদেরকে গ্রহণ করুন। আমি এখনও বলি, যারা অন্যদের উপকার করবে না ওইরকম নেতার কোনো দরকার নেই। দেশপ্রেমিক নেতা আনুন। তাঁরা নিজের নয়, দেশের স্বার্থে আর জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন।
আমি অনেক কিছুই আগে থেকে অনুমান করতে পারি। এটা একটা বিশেষ যোগ্যতা বলতে পারেন। তাই আমি সবসময় সবদিক খেয়াল রেখে কার্যক্রম গ্রহণ করি যেন আমার কাজের দ্বারা সরকারি নীতিমালার কোনো ব্যত্যয় না ঘটে। আমি চাই না আগামীদিনের একটি মুহূর্তও আমরা কষ্টে থাকি। আমরা যেন জনগণকে নিয়ে ভালো থাকতে পারি। অনেক সময়ই অনেক বিপদ আসে। সেটা সরকার মোকাবিলাও করছে। আমাদের পূর্বের ইতিহাস থেকে আমার শিক্ষা নিতে হবে। কোন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বা ঘটবে, সে সম্পর্কে ইতিহাসই আমাকে স্বচ্ছ ও স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে। প্রতিটি ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। প্রতিটি ঘটনাই নতুন ঘটনার জন্ম দেয়। আমি দেশের নতুন বা পুরাতন কোনো সরকারের বিচার-বিশ্লেষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হইনি। এটা ধ্রুব সত্য যে, আমি জনগণের কর্মকা-ের বিচার-বিশ্লেষণ করারও কেউ নই। তবে যেটা সত্য, সেটা বলতে হবে। মিথ্যাটাকে ধরে রাখা যাবে না। জনগণের উচিত তার অধিকার, ইচ্ছা, অনিচ্ছার কথা তুলে ধরা। সরকার যা করে গেল তার পছন্দ হলো না কিন্তু কিছু বলার সুযোগ নেই বলে মেনে নিল- বিষয়টা এমন হলে চলবে না। সবারই অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
যখনই কোনো সমস্যা তৈরি হয়েছে, তখনই তা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার জন্য নিজেকে ইতিহাসের পাতায় অনুসন্ধানে নিয়োজিত করেছি। আমার প্রিয় নেতৃবৃন্দ ও নায়কগণের জীবনী পড়েছি। অনেক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি এবং কী ঘটতে যাচ্ছে, সে সম্পর্কে খোলাখুলি আলোচনা করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করেছি। তিনি আমার সব কথাই আগ্রহ সহকারে শুনতেন ও বিশ্বাস করতেন। কিন্তু দলের নেতাদের মধ্যে কয়েকজন আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাঁরা আমাকে সহ্য করতে পারতেন না। আমি নেত্রীর স্নেহভাজন বলে তারা আমাকে মারাত্মক ঈর্ষা করতেন। এই কারণে দলের ভিতরে আগাগোড়া আমার একদল শত্রু গড়ে উঠেছিল। তাঁরা আমার বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু আমি দেশের জন্য কাজ করেছি। সরকারের প্রতি আমার অনেক আন্তরিক পরামর্শ ছিল। এতে আমার ব্যক্তিগত কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আমি অন্তর থেকে আমাদের জনগণের কল্যাণ চাই।
সরকারি কর্মকর্তাদের বলেছি, আপনাদের অবশ্যই আমূল পরিবর্তনের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জনগণের জন্য এ আমূল পরিবর্তন অবশ্যই প্রয়োজন। সরকারি কর্মকর্তাদের উচিত জনগণকে কিছু দেওয়া এবং দেওয়ার চেষ্টা করা। জনগণের একমাত্র চাওয়া একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবন। সরকারি কর্মকর্তাগণ ইচ্ছা করলে তা দিতে পারেন। তাঁদের উচিত জনকল্যাণে নিবেদিত থাকা এবং জনগণকে এমন কিছু প্রদান করা যা আপনাদের পক্ষে করা সম্ভব। সরকারি কর্মকর্তাদের জেনে রাখা উচিত, আমাদের উন্নয়নের পথে জঙ্গিবাদ একটি অন্তরায় এবং সেটা নির্মূল করাও জরুরি।
“গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় আমি গভীরভাবে বিশ্বাসী। তবে যে গণমাধ্যমে আক্রোশবশত কার্টুন ছাপে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রিপোর্ট করে আর যে গণমাধ্যমে মিথ্যে রিপোর্টিং করা হয়, আর যাই হোক ওইসব গণমাধ্যমে আমার কোনো আস্থা নেই। কারণ, আমি মিথ্যাটাকে সহ্য করতে পারি না। আমাকে নিয়ে কত মিথ্যা কথাই-না সংবাদমাধ্যমগুলো প্রকাশ করেছে। এর কোনো জবাবদিহি আছে! সেটা তো নেই।”
জঙ্গিরা মনে করে, তাদের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বিদ্যমান। কেউ জনগণকে এক বছর অথবা দুই বছরের জন্য বোকা বানাতে পারে, তবে চিরদিন তাদের বোকা বানিয়ে রাখা যায় না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জঙ্গিরা নিজেরাই জানে না যে, তারা সবচেয়ে বেশি বোকামির মধ্যে আছে। তারা গণমাধ্যমের ওপর বলপ্রয়োগ করে, যাতে গণমাধ্যম সব ব্যাপারে ইতিবাচক খবর পরিবেশন করে। আর তারা এসব খবরের ওপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখতে চায় এবং এমন এক ঘোলাটে পরিবেশের সৃষ্টি করে যেন দেশে কোনো সমস্যা নেই। বলে রাখা ভালো, সামাজিক গণমাধ্যমের দ্রুত বিকাশ হচ্ছে, এর মাধ্যমে বহু সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়ছে। জনগণের ধৈর্যশক্তি কমে যাচ্ছে। বিস্ফোরণ অনিবার্য হয়ে পড়ছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় আমি গভীরভাবে বিশ্বাসী। তবে যে গণমাধ্যমে আক্রোশবশত কার্টুন ছাপে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রিপোর্ট করে আর যে গণমাধ্যমে মিথ্যে রিপোর্টিং করা হয়, আর যাই হোক ওইসব গণমাধ্যমে আমার কোনো আস্থা নেই। কারণ, আমি মিথ্যাটাকে সহ্য করতে পারি না। আমাকে নিয়ে কত মিথ্যা কথাই-না সংবাদমাধ্যমগুলো প্রকাশ করেছে। এর কোনো জবাবদিহি আছে! সেটা তো নেই।
আমি দেশের নতুন বা পুরাতন কোনো সরকারের বিচার-বিশ্লেষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হইনি। এটা ধ্রুব সত্য যে, আমি তাদের, জনগণ ও বিপ্লবের বিচার-বিশ্লেষণ করারও কেউ নই। তবু যেটা করলে জনগণের উপকার হবে, আমার অভিজ্ঞতায় যা দেশের জন্য, মানুষের জন্য কল্যাণকর মনে হবে- তা আমি অবশ্যই করব এবং বলব। আমার একমাত্র ইচ্ছা বা আকাক্সক্ষা, জনগণের জন্য স্থিতিশীল, নিরাপদ, শান্তি এবং অগ্রগতিপূর্ণ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের জন্য কাজ করে যাওয়া। একমাত্র সততা ও ভালবাসা দিয়ে, জনগণের কল্যাণে কাজ করে মানুষকে জয় করা যায়, পৃথিবীকে জয় করা যায়। যে ব্যক্তি সততা ও সদিচ্ছা নিয়ে কাজে নামে, তার কোন কাজই অসম্ভব বলে মনে হবে না। সরকারের বেলাও একই কথা প্রযোজ্য। আমার জীবনের অভিজ্ঞতায় আমি এ সত্য বুঝেছি।
জনগণ চায়, সরকার যেন তাদের ভালো স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বাসস্থান, বিচার এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেয়। তারা সত্যিকারের আর্থনীতিক উন্নয়ন চায়। আর এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য, যখন আমরা সরকারি কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিই। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার এসব অর্জনের জন্য নীতি গ্রহণ না করবে ও ওয়াদাবদ্ধ না হবে, ততদিন অশান্তি, বিশৃৃঙ্খলা এবং সংকট চলতেই থাকবে।এই বইয়ের শুরুতে আমি উল্লেখ করেছিলাম, জনগণের শান্তি ও কল্যাণের জন্য সরকারের কাজ করা উচিত। নানা সীমাবদ্ধতা ও ভুল-ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও আমাদের নেতৃবৃন্দেরও একটাই লক্ষ্য ছিল এবং সেটি হচ্ছে জনগণকে সুখে ও শান্তিতে রাখা। এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাঁরা বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। হয়তো শতভাগ সফলতা অর্জন হচ্ছে না, কিন্তু যা অর্জিত হচ্ছে তা কিন্তু ফেলনা নয়, নানা কারণে তা উল্লেখযোগ্য। তাই এত বিশাল জনগোষ্ঠীর ছোট ভূমি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিশ্ব-অর্থনীতিতে অনেককে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণের উচিত সরকারকে ভালো কাজে সহায়তা করা। তাহলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে এবং নেতৃবৃন্দেরও কর্তব্য অধিক সংখ্যক জনগণকে রাষ্ট্রীয় কাজে সম্পৃক্ত করার কৌশল খুঁজে বের করা। জনগণের জন্য কাজ করা। মানুষের শ্রেষ্ঠ কাজ হলো ভালো কাজ করা। দেশের সুবিধা-বঞ্চিত লোকদের জন্য কাজ করা, শিক্ষার জন্য কাজ করা। মহৎ কাজ, ভালো কাজ কখনো হারিয়ে যায় না।
আগামীকাল কাল থাকছে - “বিনিয়োগ” আরও পড়ুন -‘সময়, শ্রম ও অধ্যবসায়’ ‘আমার আদর্শ আমার নায়ক’ , ‘ধৈর্য পরীক্ষা’, ‘খেলাধুলা ও বাংলাদেশ’ ‘অধ্যয়ন, লেখালেখি ও নেতৃত্ব’ ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ’, ‘সাফল্যের স্বর্ণদ্বার’ , ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তি সাফল্যের মেরুদণ্ড’ ‘পদ্মা সেতু’, `বিজয়চিহ্ন 'V' প্রকাশে ভিন্নতা', ‘উন্নয়ন ও অগ্রাধিকার’ , ‘ইতিবাচক ভাবনা সাফল্যের চাবিকাঠি’ , ‘ভবিষ্যতের সরকার কেমন হবে’ ‘মাতৃভাষার প্রতি মমতা’, ‘সুখ ও শান্তি : আমাদের করণীয়’ , ‘নেতৃত্বের শক্তি’, ‘আদর্শ জীবন গঠনে মূল্যবোধ’, ‘আমার প্রাত্যহিক জীবন’, 'আমার অনুভব'।
মন্তব্য করুন