হাঁটতে অনীহা; ঝুঁকিতে কোটি মানুষ
ঘটনাস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন। সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু রিকশা। আসলে থাকে অনেকগুলোই, কিন্তু মুহূর্তেই যাত্রী পেয়ে যায় বলে জটলা বাঁধে না তেমন।
মামা রোকেয়া হল যাবেন?’-যাত্রী নিয়ে আসামাত্র একজন রিকশা চালককে বললেন এক তরুণী।
আধা কিলোমিটারেরও কম পথ। রিকশাচালক চাইলেন ১৫ টাকা। আর তরুণী রিকশা নিয়ে চলে গেলেন।
রাজধানীতে স্বল্প দূরত্বের পথেও প্রায়ই গাড়ি বা রিকশায় চেপে যেতে দেখা যায় মানুষকে। হাঁটার প্রবণতাই কমে আসছে দিনে দিনে। চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন, কিন্তু বিপদটা মানুষ টের পাচ্ছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রায়ই নগরবাসী এ জন্য হাঁটার জন্য ভালো পথ না থাকার কথা বলেন। কিন্তু দেখা গেছে যেখানে চওড়া এবং ভালো ফুটপাত বা গাড়ি চলে না খুব বেশি-এমন এলাকাতেও হাঁটার বদলে রিকশায় করে যেতেই পছন্দ করছে সামর্থবানরা।
রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে টিএসসির পথে কিলোমিটার খানেক পথে দুই পাশের ফুটপাতই বেশ চওড়া। যে কোনো এক পাশের ফুটপাত ধরেই নির্মল পরিবেশে হেঁটে যাওয়া-আসা যায়। কিন্তু এই পথে চলে শত শত রিকশা। বরং হেঁটে চলা মানুষের সংখ্যাই কম।
কলাভবনের পাশ ঘেঁষা সূর্যসেন হল থেকেও বাণিজ্য অনুষদ বা কলাভবনে রিকশায় করে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যাও নেহায়েত কম না।
মানুষের হাঁটতে অনীহার কারণে রাজধানীর পাড়া মহল্লা, অলি-গলি আর মূল সড়কে হাজারো রিকশার ছড়াছড়ি। কিন্তু যাত্রীর অভাব পড়ে না কখনও। আয়ও নেহায়েত কম না। তাই অন্য কাজ ছেড়ে রিকশা চালানোকেই পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষদের একাংশ। কেউ কেউ আবার নিশ্চিত আয়ের সুযোগ থাকায় সীমিত সময়ের জন্য রিকশা চালাতে ঢাকায় আসেন। এরা ১০ থেকে ১৫ দিন রিকশা চালিয়ে বেশ ভালো একটি অংক নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
চিকিৎসকরা বলছেন, পাঁচ মিনিট বা ১০ মিনিটের পথ মানুষ হাঁটার বদলে যানবাহনে চলার প্রবণতা স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করছে মানুষের জন্য। মানুষ মুটিয়ে যাচ্ছে, পরিশ্রম করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলছে, এতে আবার শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ।
চিকিৎসকরা বলছেন, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা উচিত। কিন্তু সহজলভ্য রিকশার কারণে মানুষ হাঁটছে না বেশি।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বিবিএ প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার থাকেন রোকেয়া হলে। তার ক্লাস হয় বাণিজ্য অনুষদে। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘সবসময় রিকশা দিয়ে আসা যাওয়া করি।’
আধা কিলোমিটার রাস্তায় কেন হাঁটেন না- এই প্রশ্নের জবাবে উত্তর পাওয়া গেলো, ‘সময় কম লাগে আর দ্রত আসা যায়।’
শাহবাগ থেকে টিএসসি মোড় পর্যন্ত রিকশা ভাড়া করা বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামও বললেন তাড়ার কথা। তিনি বলেন, ‘টিএসসিতে জরুরি একটি মিটিং আছে। হাতে আর বেশি সময় নেই। তাই রিকশায় করে যাওয়া।’
হাঁটলে যেসব সুবিধা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এনামুল করিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটার ১০ বড় ধরনের রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভব। হাঁটার সময় হৃদপি- শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করে। ফলে প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ সুস্থ ও সবল থাকে।
এই চিকিৎসক বলেন, অনেকক্ষণ ধরে হাঁটলে একটু পর পর পানি পান করা ভালো। তিনি জানান, সবচেয়ে উপযোগী হল সকালে হাঁটা। এ সময় বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাওয়া যায়। আর বিশুদ্ধ অক্সিজেন হৃদপি-কে সবল রাখে।
যারা স্বল্প দূরত্বে রিকশায় করে চলেন তাদের প্রায় সবাই তাড়ার অযুহাত দেখান। তবে চিকিৎসা বিশারদরা জানিয়েছেন, এই তাড়া আদতে মানুষের উপকারই করতে পারতো।
চিকিৎসক এনামুল করিম বরেন, ‘দ্রত হাঁটা সবচেয়ে ভাল। এতে করে দ্রুত ঘাম বেরোবে এবং দ্রুত চর্বি বের হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, কিছুক্ষণ হাঁটার পর দুই এক মিনিট বিরতি নিতে হবে। তারপর আবার হাঁটা শুরু করতে হবে। এর ফলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত হাঁটা হবে।’
না হাঁটার বিপদ
ব্যবসা ছেড়ে অবসরে গেছেন আজিজুল হক খোকন। যখন তার ব্যবসা ছিল তখন সেভাবে হাঁটা হতো না। কিন্তু এর মধ্যে তাঁর শরীরে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস। ঢাকাটাইমসকে আজিজুল হক বলেন, ‘আগে ওষুধ খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতাম। গত কয়েকবছর ধরে হাঁটার অভ্যাস করছি। এখন যদি কোন কারণে ডায়বেটিস অনেক বেড়ে যায় তাতেও সমস্যা হয় না। দ্রুত হেঁটে ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক এনামুল করিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, নিয়মিত না হাঁটলে শরীরে অনেক রোগ ধরা পড়ে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস রোগীদের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম।
ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খান জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ৭৫ লাখের বেশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তিনি বলেন, জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে ডায়াবেটিস রোগী বাড়ছে। এর একটি হলো হাঁটতে অনীহা। ডায়াবেটিক ছাড়াও হাঁটতে অনীহার কারণে হৃদরোগ, রক্তে চর্বি জমে যাওয়াসহ নানা সমস্যা হয় বলেও জানান তিনি।
ঢাকাটাইমস/৮ডিসেম্বর/এসএ/ডব্লিউবি