ঝুলে আছে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল

খুলনা ব্যুরো প্রধান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৮:১৬

শুধু স্থান নির্বাচনেই কেটে গেছে পাঁচটি বছর। আবার স্থান চূড়ান্ত হয়ে গেছে, তাও নয়। ফলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়া ঝুলে আছে।

সর্বশেষ প্রস্তাব অনুযায়ী নগরীর বয়রা বিভাগীয় কমিশনার অফিসের দক্ষিণ পাশের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের (মন্নুজান) স্কুলের সামনের ফাঁকা জায়গাটি নির্ধারণ করা হলেও সেখানে বিভাগীয় সার্কিট হাউজ নির্মাণ হবে বলে আরও এক ধাপ পিছিয়ে গেল শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়া। এখন নতুন জেলা কারাগারসংলগ্ন অথবা সোনাডাঙ্গা বাইপাসের যেকোনো জায়গায় শিশু হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জায়গা দেখছেন সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে, বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত খুলনা শিশু হাসপাতালটি সরকারিকরণের প্রক্রিয়া চলছে। এ জন্য ইতোমধ্যে সভা করে এর রেজুলেশনের কপি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ড. নমিতা হালদারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে সংশ্লি¬ষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনা শিশু ফাউন্ডেশন পরিচালিত শিশু হাসপাতাল সরকারিকরণ হলেও প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত বিভাগীয়

শিশু হাসপাতাল নির্মাণে কোনো বাধা নেই। কেননা, বর্তমান শিশু হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও রোগীর সংখ্যা বেশি বলে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করতে হয়, যা যথাযথ চিকিৎসাসেবার প্রতিবন্ধক।

খুলনা শিশু হাসপাতালের সূত্র জানায়, ৭৭ শতক জমির ওপর নির্মিত খুলনা শিশু হাসপাতালটি সরকারিকরণের জন্য যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, তাতে বর্তমান পুরো জনবলকে সরকারিকরণের দাবি জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে শিশু হাসপাতালের আরও একটি ইউনিট করা যেতে পারে এমন প্রস্তাবও রয়েছে। বর্তমানে এ হাসপাতালে মোট জনবল ২৭৮ জন।

সংশ্লি¬ষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঢাকায় দুটিসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে একটি করে বিভাগীয় পর্যায়ের বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে খুলনায় বিভাগীয় শিশু হাসপাতালের জন্য গত বছরের ১ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. আব্দুল হক স্বাক্ষরিত ১৬৪ নম্বর স্মারকে একটি চিঠি দেয়া হয়। চিঠিটি দেয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তাদের। ওই চিঠির আলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে খুলনার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরে গত ২২ ফেব্রুয়ারি আরও একটি চিঠি দেয়া হয়, যার স্মারক নম্বর-২০৩২। এ ছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরকে দেয়া চিঠির আলোকে খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১এর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ জাকির হোসেন গত ৩ এপ্রিলের এক চিঠিতে উল্ল¬খ করেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণকাজের জন্য প্রস্তাবিত সাইট প্লান তৈরি হয়েছিল।

খুলনার স্বাস্থ্য পরিচালককে দেয়া ওই চিঠির সঙ্গে যে প্রস্তাবিত সাইট প্লান দেয়া হয়, তাতে নগরীর বয়রার খুলনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (মন্নুজান স্কুল), লোকষ্ট কলোনি ও বয়রা সার্কিট হাউজের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাকে দেখানো হয়। সেখানে চার একর জমিতে ৫০ শয্যার সরকারি শিশু হাসপাতাল নির্মাণের জন্য একটি খসড়া প্রাক্কলনও সংযুক্ত করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৮ কোটি ৮৯ লাখ ২৬ হাজার ২৪২ টাকা। এর এক পাশে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অপর পাশে খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল। পাশাপাশি তিনটি হাসপাতাল হলে জনসাধারণের সুবিধা হবে এমনটি ভেবেই হয়তো স্থান নির্বাচন হয়েছিল বলে সংশি¬ষ্টরা মনে করেন।

তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে জমি অধিগ্রহণে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত গত ২১ জুলাইয়ের চিঠিতে উল্ল¬খ করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওই জমি প্রস্তাবিত সাইট প্লান অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিভাগের অনুকূলে বুঝিয়ে না দেয়ায় নির্মাণকাজের পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না।

কিন্তু গত ৪ আগস্ট বিভাগীয় কমিশনারের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত স্থান নির্বাচন কমিটির অপর এক সভায় ওই স্থানে বিভাগীয় সার্কিট হাউজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণের জন্য নির্মাণাধীন জেলা কারাগারের কাছে অথবা সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে পশ্চিম পাশের কেডিএ ময়ূরী আবাসিক এলাকার বিপরীতে অথবা বাইপাস সড়কের তৃতীয় যেকোনো স্থানে নতুন জায়গা নির্বাচনের নতুন প্রস্তাব আসে। এ ব্যাপারেও সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে গত ২১ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে জেলা প্রশাসককে নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করার অনুরোধ জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, তিনি ছাড়াও খুলনার সিভিল সার্জন এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সম্প্রতি বাইপাস সড়কের দক্ষিণ পাশের একটি জায়গা দেখেছেন, যার দক্ষিণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরে কেডিএর প্রস্তাবিত ময়ূরী আবাসিক এলাকা।

তবে বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত খুলনা শিশু হাসপাতালকে সরকারি করা যায় কি না সে ব্যাপারেও একটি প্রস্তাব রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অবশ্য খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শিশু হাসপাতালকে সরকারি করা হলেও এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত শিশু হাসপাতাল নির্মাণের কোনো সম্পর্ক নেই। একটি বেসরকারি হাসপাতালকে সরকারি করা হলেও সরকারিভাবে হাসপাতাল নির্মাণে কোনো বাধা থাকবে না। বিভাগীয় পর্যায়ে শিশু হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রয়েছে। অন্য কোনো কারণে এর নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি) খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, প্রথম দিকে তাদের এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও তারা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্যে এ প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু পরে গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখালে এটি নিয়ে এইচইডির তৎপরতা থেমে গেছে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত বিভাগীয় পর্যায়ের শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়া যেন কোনো ষড়যন্ত্রে থেমে না যায়, সেদিকে সবার নজর দেয়া উচিত। কারণ এর সঙ্গে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি জড়িত।

দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে নেয়া উদ্যোগ অন্যান্য বিভাগে বাস্তবায়ন হলেও খুলনায় না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এই নাগরিক নেতা বলেন, খুলনার জনপ্রতিনিধিদের এ নিয়ে আরও সক্রিয় হতে হবে।

ঢাকায় দুটি এবং প্রতিটি বিভাগে একটি করে শিশু হাসপাতাল নির্মাণের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইতোমধ্যে ঢাকায় দুটি শিশু হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুরে শিশু হাসপাতাল নির্মাণ কার্যক্রম চলছে। শুধু খুলনা ও চট্টগ্রামে শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়াটি বারবার হোঁচট খাচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১১ডিসেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :