সাহস নিয়ে অংশ নিয়েছি, শেষ পর্যন্ত থাকব
২২ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে এখন বইছে ভোটের হাওয়া। প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তবে সবার নজর দেশের প্রধান দু্ই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীর দিকে। দলে কোনো পদ-পদবি না থাকলেও এ নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আইনজীবী নেতা সাখাওয়াত হোসেন খান। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও গত মেয়াদের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে।
সাখাওয়াত হোসেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি। নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলায় আইনজীবীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। দুটি মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবীও তিনি। সাত খুনের ঘটনার পর আন্দোলন করতে গিয়ে আলোচনায় আসেন সাখাওয়াত হোসেন। এর আগে ২০০৯ সালে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহ করে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির পৃথক কমিটি গঠন করে প্রথম আলোচনায় এসেছিলেন। পরে বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আইনজীবী সমিতিতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এবার সিটি নির্বাচনে দলই তাকে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। শনিবার ঢাকাটাইমসের সঙ্গে নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন সাখাওয়াত হোসেন খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক বোরহান উদ্দিন।
ঢাকাটাইমস: নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা কেমন চলছে?
সাখাওয়াত হোসেন খান: নারায়ণগঞ্জের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ধানের শীষের প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। আমাদের দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আছেন তাদের সঙ্গে। আমরা চাই নির্বাচন নিয়ে দেশে যে খারাপ নজির ছিল, তা নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ধুয়েমুছে সামনের দিকে এগিয়ে যাক। আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা প্রমাণের একটি সুযোগ দিয়েছি। আশা করি কমিশন ও সরকার সুযোগটি গ্রহণ করবে। প্রতিটি ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, প্রার্থীরা যাতে খোশ মেজাজে সব ধরনের বাধাবিঘ্নের ঊর্ধ্বে উঠে আইন অনুযায়ী সমানভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু অন্তরায় ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। আমি খবর পাচ্ছি, অনেক জায়গায় আমাদের পোস্টার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে, খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ধরনের প্রবণতা সরকারি দলের মধ্যে লক্ষ্ করছি।
ঢাকাটাইমস: প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নামার ঘোষণাকে কীভাবে দেখছেন?
সাখাওয়াত হোসেন খান: আপনারা দেখেছেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সাহেব নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলেছেন। যেহেতু তিনি সংসদ সদস্য সেহেতু নির্বাচন নিয়ে তিনি কোনো কার্যকলাপ করতে পারেন না। যে বক্তব্য দিয়েছেন তাও আইনসিদ্ধ নয়। আমি চাই নারায়ণগঞ্জে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।
ঢাকাটাইমস: নির্বাচনী পরিবেশ কেমন দেখছেন?
সাখাওয়াত হোসেন খান: এখন পর্যন্ত যা দেখছি তাতে পুরোপুরি মনঃপুত না হলেও মন্দের ভালো বলব। আমি এখন পর্যন্ত পরিবেশ মন্দের ভালো হিসেবে মেনে নিচ্ছি। তবে আমি মনে করি, সামনের দিনগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত পরিবেশ ভালো থাকল, কিন্তু নির্বাচনের দিন যদি সরকারি দল বলপ্রয়োগ করে, নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সরকারের পক্ষে কাজ করেন, তাহলে লাভ কী।
ঢাকাটাইমস: নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে কি ওই দাবি থেকে সরে আসছেন, না অটল আছেন?
সাখাওয়াত হোসেন খান: সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো ভোটাররা কী বলে সেটা দেখা। আপনারা ভোটারদের সঙ্গে কথা বলুন, সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে তাদের মতামত পরিষ্কার হবে। আমি সাহস নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। শেষ দিন পর্যন্ত সাহস নিয়ে থাকব। আমার প্রত্যাশা এখানকার মানুষ সব ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে ধানের শীষে ভোট দেবেন। এর মাধ্যমে সরকারের সব অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে রায় ঘোষিত হবে।
আমি ইতিপূর্বে বলেছি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। এ জন্য অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য নির্বাচনের সাত দিন আগে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করতে হবে।
ঢাকাটাইমস: প্রচার-প্রচারণায় বিএনপি ও ২০ দলের শরিকদের আপনার পাশে পাচ্ছেন?
সাখাওয়াত হোসেন খান: সবাই নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে। বিএনপি ও ২০ দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ধানের শীষের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। সবাই সক্রিয় আছেন। সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও ধানের শীষ প্রতীক জনপ্রিয়। শুধু বিএনপি নয়, দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের মানুষ তাদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে পারেননি। এই নির্বাচনে এর একটি জবাব দেবেন তারা। সবার মধ্যে নির্বাচনে ভোট দেয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকাটাইমস: সদ্য সাবেক মেয়রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজেকে কোন অবস্থানে দেখছেন?
সাখাওয়াত হোসেন খান: আমি নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে তুলনা করব না। তবে সাবেক মেয়র নারায়ণঞ্জকে ময়লা-আবর্জনার শহরে পরিণত করেছেন। সব জায়গাতেই দেখবেন ময়লার স্তূপ। শুধু তাই নয়, তার বাবার নামে চুনকা পাঠাগার তৈরি করছেন, যার নির্মাণকাজ ১১ বছর ধরে চলছে। এর ঠিকাদাররে ব্যাপারেও অনেক প্রশ্ন আছে নারায়ণগঞ্জের মানুষের। এই কাজ সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কাজ শেষ হয় না। এটা হলো মুলা ঝুলিয়ে রাখার মতো। যিনি নিজের বাবার নামের প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতেই এত দিন নষ্ট করছেন, তার ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের মানুষ কী সিদ্ধান্ত নিবে তা নির্বাচনের দিন বোঝা যাবে।
ঢাকাটাইমস: আপনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কী?
সাখাওয়াত হোসেন খান: অনেক পরিকল্পনাই আছে আমার। আমি নির্বাচিত হলে একটি মাস্টারপ্লানের মাধ্যমে শহরের সরু রাস্তাগুলো প্রশস্ত করব। জনগণের ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসব। শীতালক্ষ্যায় সেতু নির্মাণের দাবি বহুদিনের। সেটি নির্মাণ করে দুই পারের মানুষের সেতুবন্ধ তৈরি করব। সাবেক মেয়রের (আইভী) এই সেতুসহ অনেক প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু তিনি কোনো প্রতিশ্রুতিই পূরণ করতে পারেননি।
এ ছাড়া জিএস পুকুর, যেটা হিন্দুদের দেবোত্তর সম্পত্তি,সাবেক মেয়রের পরিবার এটি দখল করে রেখেছে। এটা উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেব।
বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জ নানা কারণে উত্তপ্ত হয়েছে। তাই সন্ত্রাস ও মাদক প্রতিরোধ করব সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে।
ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।
সাখাওয়াত হোসেন খান: ঢাকাটাইমসকেও ধন্যবাদ।
(ঢাকাটাইমস/১২ডিসেম্বর/মোআ)