আউটসোর্সিংয়ে ঝুঁকছেন নারীরা

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ১২ ডিসেম্বর ২০১৬, ২১:৪৮
ফাইল ছবি

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করছে। বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা ও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। আইটির এই যুগে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে নেই। ইন্টারনেটে আউটসোসিং এ নড়াইলের মেয়েরা ও সমানতালে এগিয়ে যেতে চাচ্ছে। আর এই কাজে সহায়তা করছে নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরি। এ সকল প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ কোর্স এবং টিম তৈরি করে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করে সদস্যদের কাজ পাইয়ে দেয়ার সহযোগিতা করছেন ডিজিটাল লাইব্রেরি নামে একতটি বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরির একদল আইটি কর্মী নিরলসভাবে গত কয়েক বছর ধরে এই কাজ করে যাচ্ছে। প্রথমে নিজেদের অর্থে কর্মকান্ড পরিচালনা করলে ও পরবর্তীতে ২০১৪ সাল থেকে স্থানীয় সংস্থা নবান্ন এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন এই কাজে সহযোগিতা করছে। এ যাবত বিনামূল্যে প্রায় শ’খানেক ছেলে মেয়ে কে এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজে লাগিয়েছে ডিজিটাল লাইব্রেরি নামের এই প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি চাকরিজীবী, বেসরকারি কলেজের শিক্ষক, গৃহিনী, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ প্রায় সব শ্রেণির মানুষই ঘরে বসে আয় করার এই কাজে অংশগ্রহণ করছে।

২০১০/১১ সালের দিকে এই অঞ্চলে আউটসোসিং এর প্রশিক্ষণ দেন মাগুরার জনৈক প্রশিক্ষক। সেখান থেকেই শুরু। শুরুতে মাত্র ১৫ জন ছাত্র প্রশিক্ষনে অংশ নিয়ে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে মফস্বল জেলা গুলোর মধ্যে নড়াইলের পুরুষেরা আউটসোসিং এর কাজে দেশের ২য় অবস্থানে আছে বলে জানা গেছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার প্রায় ৬০০ যুবক এই পেশায় জড়িত থেকে মাসে গড়ে ২৫ হাজার থেকে শুরু করে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। যার গড় হিসেবে ৪০০ আইডিতে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা করে অন্তত এককোটি টাকার সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা রেমিট্যান্স আকারে নড়াইলে ঢুকছে। এলাকার আইটি আউটসোসিং এ প্রায় ৩০ টি ছোটবড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে অন্তঃত দেড়শ ছেলে কাজ করলে ও ঐ সকল প্রতিষ্ঠানে কোন মেয়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরিতে ১০ দিন ব্যাপী আইটি আউটসোসিং কোর্স শেষ হয়েছে। এই কোর্সে ২০ জন পুরুষের মধ্যে প্রায় ৮ জন নারী প্রশিক্ষনার্থী অংশ নেয়। এদের অধিকাংশই অনার্স পাস করে বেকার ছিল। আইটি আউটসোসিং এ তাদের আগ্রহ এবং সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করায় আয়োজকরা খুশী। এই প্রশিক্ষণ ছাড়াও গত দুই বছরে প্রায় ৩০জন নারীকে আউটসোসিং প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরি।

শহরের মহিষখোলা গ্রামের আয়েশা আক্তার আশা। ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে একাউন্টিং এ অনার্স শেষ করে একটি কোচিং সেন্টারে মাসে ৪ হাজার টাকা বেতনে পড়ায় সে। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো মেয়ে হিসেবে অন্য কাজ বাদ দিয়ে আউটসোসিং এ কেন? এই প্রশ্নের জবাবে আশা’র উত্তর, আমার ভাইকে আমি দেখছি সে আউটসোসিং এর মাধ্যমে মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করছে। আর আমি মা বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের খরচ চালাই। ওদিকে ভায়ের কাছে শিখতে চাইলে সে না গড়িমশি করে তাই ডিজিটাল লাইব্রেরিতে বিনামূল্যে আউটসোসিং শিখতে এসেছি।

লায়লা পারভিন সেতু নড়াইল ভিক্টোরীয়া কলেজে অর্থনীতির চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের এই মেয়েটির আশা বাড়িতে বসে যদি রেমিট্যান্স আয় করা যায় তা আমাদের দেশের জন্য যেমন উপকারী তেমনি নিজের বেকারত্ব ঘুচানো সম্ভব। তিনি বলেন ঘরে বসে আয় করার এমন সুযোগ আরো আগে আসা উচিত ছিলো যা আমরা ডিজিটাল লাইব্রেরির মাধ্যমে পেলাম। সরকারী যুব উন্নয়ন কিম্বা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে এই ধরনের কোর্স থাকলে মেয়েদের অনেক উপকার হবে।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার প্রত্যন্ত চাকই গ্রামের মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া দিথি। নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচ এসসি পাস করেছে। শহরতলীর মামা বাড়িতে থেকে সে। দিথির বক্তব্য, লেখাপড়ার পাশাপাশি আয় করার জন্য আউটসোসিং প্রশিক্ষনে অংশ নিয়েছি। আমি বর্তমানে আপওয়ার্কের মাধ্যমে কয়েকটি বায়ারের কাছে আবেদন করেছি আশাকরছি অল্পকয়েকদিনের মধ্যে কোন একটা কাজ পেয়ে যাবো। তার ধারনা ছেলেদের থেকে মেয়েরা ধৈয্য নিয়ে ভালোভাবে এই কাজ করে আয় করতে পারবে।

নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরির প্রশিক্ষক মাসুম বিল্লাহ বাসস’কে বলেন, আমরা গত প্রায় ৪/৫ বছর ধরে আউটসোসিং নিয়ে কাজ করে আসছি। তবে গত ২ বছর যাবত এলাকার নারীরা এই কাজে আগ্রহী হচ্ছেন। বর্তমানে নারী শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আগ্রহী এবং অভিজ্ঞ, এদের ধৈর্য ও পুরুষদের চেয়ে বেশী। আশাকরছি অল্পদিনের মধ্যে নারীরা ঘরে বসে আউটসোসিং এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে।

নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরির সাধারন সম্পাদক কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, নবান্ন এবং ডিজটাল লাইব্রেরি অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই আউটসোসিং এর এই কাজটাকে বেছে নিয়েছে। এনজিও ফাউন্ডেশন এর অল্প কিছু টাকা দিয়ে কোর্সগুলো করাই। এর বাইরে আরো সরকারী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে যেমন সহজ হতো তেমনি আইটি তে আমাদের বর্তমান প্রজন্ম আরো ভালো করতে পারতো।

নড়াইল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিমা খাতুন বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত যে নড়ইলের মেয়েরা এই পেশায় এত আগ্রহী, আমি দেখেছি আউটর্সোসিং এর মাধ্যমে অনেকেই লক্ষ-লক্ষ টাকা আয় করেছেন এবং নিজেদের স্বাবল¤ী^ করেছেন, আশা করি মেয়েরার নিজেদের কর্মসংস্থান নিজে তৈরি করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবেন।

নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, নড়াইলে আউটসোসিং এর মাধ্যমে অনেক ছেলে কাজ করে। মেয়েরাও এই কাজে এগিয়ে আসছে। নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরির এই কাজ আমি দেখেছি। তাদের হাত ধরে আগামী প্রজন্ম বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। -বাসস

(ঢাকাটাইমস/১২ডিসেম্বর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

নারীমেলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা