শিক্ষামন্ত্রী এবার কী বলবেন?

মাহবুব রেজা
 | প্রকাশিত : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১২:১০

দুটি সংবাদ। প্রথমটি হলো নিরাশ হওয়ার আর দ্বিতীয়টি আশা-জাগানিয়া। প্রথমটি হলো শিক্ষা আইন কমিশনের কঠোর বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে দেশে বৈধতা পেতে যাচ্ছে কোচিং-টিউশনি। শিক্ষা আইন কমিশনে সুস্পষ্টভাবে কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনির বিরুদ্ধে ‘কড়া’ অবস্থান নেওয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কোনো এক রহস্যজনক কারণে তাদের সেই অবস্থান থেকে সরে এসে কোচিং-টিউশনিকে বৈধতা দিতে যাচ্ছে। আশা-জাগানিয়া সংবাদটি হলো, হাইকোর্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুর শরীরের ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন না করতে এবং করাতে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের সব স্কুলে ৩০ দিনের মধ্যে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। সাদা চোখে দেখলে সংবাদ দুটির মধ্যে একধরনের বৈপরীত্য লক্ষ করা যায়। শিক্ষাবিদরা বলছেন, একই সঙ্গে কোমলমতি শিশুদের শারীরিক কষ্টের ব্যাপারটি উপলব্ধিতে আনবেন আবার স্কুল সময়ের পর অতিরিক্ত সময়ে তাদের কোচিং-প্রাইভেট পড়াতে একরকম বাধ্য করাবেন−এটি কেমন কথা?

জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোচিং-টিউশনিকে বৈধতা দিতে এক অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। কোচিং-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত একটি বিশেষ মহলের যোগসাজশে মন্ত্রণালয় কোচিং-টিউশনির এ প্রক্রিয়াকে ‘ছায়া শিক্ষা’ হিসেবে তুলে ধরে এর যৌক্তিকতা দেখানোর চেষ্টা করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা আইনের চূড়ান্ত খসড়ায় কোচিং-টিউশনিকে বৈধতা দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষা আইনের চূড়ান্ত খসড়াটি দ্রুতই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উত্থাপিত হবে এবং এ বিষয়টি হয়ত অনুমোদিতও হয়ে যাবে। যদি তাই হয়, তাহলে বিষয়টি শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন সেমিনারে কোচিং-টিউশনি বাণিজ্যের ব্যাপারে তার কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করে আসছেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশে এখন ৩২ হাজার কোটি টাকার কোচিং-বাণিজ্য চলছে। আমরা চাই, আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলের বাইরের সময়টুকু মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়াক। কিন্তু কোচিং-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এই নব্য বেনিয়ারা আমাদের শিশু-কিশোরদের সেই সময়গুলো নানা প্রলোভন দিয়ে ছিনতাই করে নিচ্ছে। এ বেনিয়ারা মানুষের কষ্টের টাকা লুটপাট করে নিজেদের পকেট ভারী করছে। আমি অভিভাবকদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে বলব এবং সরকারের পক্ষ থেকেও আমরা এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেব।’

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদরা ‘ছায়া শিক্ষা’র ছদ্মবেশে কোচিং-টিউশনিকে বৈধতা দেওয়ার সরকারের এ অপকৌশলের তীব্র সমালোচনা করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কোচিং-টিউশনির ব্যাপারে যদি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তবে শিক্ষাক্ষেত্র এক অশুভ শক্তির কবলে পড়বে, যা কারোরই কাম্য হতে পারে না।

অন্যদিকে, শিশুদের স্কুল ব্যাগের ওজন নিয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ২০১৪ সালে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। নির্দেশনাটি যথাযথভাবে কেউই মানছিলেন না। সর্বশেষ প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শরীরের ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ করতে ছয় মাসের মধ্যে আইন প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত এ ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন করলে শিশুদের শরীরে ইনজুরি হয়, যেটা সারা জীবন বহন করতে হয়। তাই শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি হয়, এমন ওজনের ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ করতে ছয় মাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।’এ নির্দেশ সরকারের ইতিবাচক অনেক সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি বলে মনে করছেন শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোচিং-টিউশনি বন্ধে সরকারের সদিচ্ছা আছে। কিন্তু এটি রাতারাতি সম্ভব নয়। কারণ এ খাতে বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের বিষয়টি জড়িত। তারা মনে করেন, কোচিং-টিউশনি বাণিজ্য হয়ত একেবারে বন্ধ করে দেওয়া যাবে না তবে ইচ্ছে থাকলে সেটাও যে সম্ভব। তার অনেক প্রমাণ নিকট অতীতে প্রত্যক্ষ করা গেছে। তারা বলছেন, এক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একাই একশ। এখন তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে কী বলবেন, তা দেখার অপেক্ষায় আছে দেশের মানুষ।

মাহবুব রেজা : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/এমআর/টিএমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :