আচরণবিধি ভেঙে জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারে দুর্জয়

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ২০:৫৩ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ২২:১১

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ থেকে

জেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে বলা আছে তফসিল ঘোষণার পর কোনো সংসদ সদস্য প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে পারবেন না। অথচ মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ঘরোয়া সভা করে ভোট চাচ্ছেন মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়।

ঘিওর, শিবালয় ও দৌলতপুরের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম মহিউদ্দীনের পক্ষে ঘরোয়া সভা করেছেন। সেসব অনুষ্ঠানের ছবি ফেসবুকে আপলোডও দিয়েছেন তার অনুসারীরা।  

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলছেন একজন সংসদ সদস্য হয়ে তিনি এটি করতে পারেন না। এমন অভিযোগ পেলে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সাংসদ দুর্জয় ঢাকাটাইমসের কাছে দাবি করেছেন, তিনি প্রচারের জন্য কোথাও যাননি। তিনি বলেন, ‘আমি যাওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আসেন। আমি কোনো প্রচার চালাতে সেখানে যাইনি।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাংসদ নাঈমুর রহমান দুর্জয় সোমবার দুপুরে শিবালয় উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী সদস্য ও সদস্যদের নিয়ে মানিকগঞ্জের নিজ বাড়ির ওঠানে ঘরোয়া সমাবেশ করেন। এ সময় ভোটারদের কাছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট গোলাম মহিদ্দীনের পক্ষে ভোট চান। তিনি ভোটারদের বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দীন নির্বাচিত হলে শিবালয় উপজেলার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এরপর রাতে ঘিওর উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, নারী সদস্য ও সদস্যদের নিয়ে একই জায়গায় ঘরোয়া সমাবেশ করেন। রাত ৯টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়।

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়রম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দীন জেলা পরিষদের প্রশাসক থাকা অবস্থায় যত উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন এর ফিরিস্তি তুলে ধরেন সাংসদ দুর্জয়। গোলাম মহিউদ্দীনের পক্ষে উন্নয়নের কথা বলে তাকে ভোট দিতে অনুরোধ করেন বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এর আগে গত রবিবার দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর ইউনিয়নের আমতলী বাজারে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী সদস্য ও সদস্যদের নিয়ে ঘরোয়া সভা করেছেন সাংসদ দুর্জয়। এ সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দীন তার সঙ্গে ছিলেন। একই দিন ঘিওর উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী ও সদস্যদের নিয়েও ঘরোয়া সভা

মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. রমজান আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একজন দুর্নীতিবাজ সংসদ সদস্য হয়ে আরেকজন দুর্নীতিবাজ প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালিয়ে নির্বাচনী আরচণবিধি লঙ্ঘন করছেন। এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’

আপনি বিষয়টি জেনেও কেন নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিচ্ছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযোগ রেডি করেছি। আগামীকাল বুধবার জমা দেব।’

মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও গণফোরাম নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তার মতে, এ ব্যাপারে মন্তব্য করে তিনি কোনো ঝামেলায় পড়তে চান না।

মানিকগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য হয়ে এভাবে সভা করে ভোট চাওয়া আরচণবিধি লঙ্ঘন। এটি তিনি করতে পারেন না। বিষয়টি তদন্ত করে অথবা এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

এ ব্যাপারে কথা বলতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রাশিদা ফেরদৌসের মোবাইল ফোনে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

(ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)