আমাদের শিল্প-সাহিত্যে মহান মুক্তিযুদ্ধ

সৈয়দ শিশির
 | প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৩:৫২

আমাদের জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধ এক আলোকিত অধ্যায়। আমাদের চেতনাজুড়ে ছড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এদেশের স্বাধীনতা। আমাদের শিল্প-সাহিত্য চর্চাকেও স্বাভাবিকভাবে প্রভাবিত করেছে মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর বাংলা সাহিত্যে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে গল্প, কবিতা, ছড়া, উপন্যাস আর নাটক লেখার পালা। গত ৪৫ বছরে আমরা তাই পেয়েছি অসংখ্য মননশীল সাহিত্যকর্ম।

উপন্যাস দিয়েই শুরু করা যাক। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে নানা যৌক্তিক কারণে বদলেছে আমাদের উপন্যাসের প্রেক্ষাপট, পটভূমি। সেইসঙ্গে বদলেছে চরিত্রের চিত্রায়ণের দৃশ্যপট। বলা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আমাদের ঔপন্যাসিকরা সন্ধান করেছেন এক নতুন শিল্পরীতির। যে রীতিতে তাঁরা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পাশাপাশি জনমানুষের আকাক্সক্ষার চিত্র তুলে ধরেছেন পাঠক সমীপে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসগুলোতে আমরা শুধু গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, নিরস্ত্র মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, অবরুদ্ধ মানুষের যন্ত্রণাদগ্ধ যাপিত জীবন, বন্দি শিবিরে অবর্ণনীয় নিপীড়ন, নারী ধর্ষণের বর্ণনাই পাই না। বরং মানুষের নতুনভাবে জেগে ওঠার বীজমন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতান্ত্রিক ও সমতাভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার বাস্তব চিত্রের সার্থক প্রতিফলনও দেখতে পাই। আমাদের উপন্যাসে এ ধারার উল্লেখযোগ্য সংযোজন হচ্ছে আনোয়ার পাশার ‘রাইফেল রোটি আওরাত’, আমজাদ হোসেনের ‘অবেলায় অসময়’, মাহমুদুল হকের ‘জীবন আমার বোন’, সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের ‘জীবনতরু’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘তিমি’, রিজিয়া রহমানের ‘একটি ফুলের জন্য’, শওকত আলীর ‘অবশেষে প্রপাত’ ও ‘যাত্রা’, রাহাত খানের ‘ছায়া দম্পতি’, শওকত ওসমানের ‘দুই সৈনিক’, ‘জাহান্নাম হইতে বিদায়’ ও ‘নেকড়ে অরণ্য’, রাবেয়া খাতুনের ‘ফেরারি সূর্য’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলে কোঠার সেপাই’, রশীদ হায়দারের ‘অন্ধকথা মালা’ ও ‘খাচায়’, শামসুর রাহমানের ‘অদ্ভুত আঁধার এক’, আহমদ ছফার ‘ওঙ্কার’, সেলিনা হোসেনের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘ঘেরাও’ ও ‘কালো ঘোড়া’, আনিসুল হকের ‘মা’ ইত্যাদি।

প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম লিখিত উপন্যাসের নাম আনোয়ার পাশার ‘রাইফেল রোটি আওরাত’। শওকত ওসমান ‘জাহান্নাম হইতে বিদায়’ উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধকালে লিখেছেন। ১৯৭১ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত এ উপন্যাসে ২৫ মার্চের গণহত্যার বিভীষিকাময় চিত্রও শৈল্পিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এটি কাহিনিনির্ভর নয়, চিত্রধর্মী একটি উপন্যাস। ‘যাত্রা’ উপন্যাস শওকত আলী মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকের সময়কালকে নির্ণয় করে রচিত। রশীদ হায়দার ‘খাচায়’ উপন্যাসে বিশাল ক্যানভাসে লিপিবদ্ধ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অবরুদ্ধ নগরজীবনের চিত্র। ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার ও নারী নির্যাতন, রাজাকার বাহিনীর অপতৎপরতা তুলে ধরেছেন সেলিনা হোসেন। ‘দেয়াল’ উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের ইতিবাচক দিকটি তুলে ধরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিষয়টিকে নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। আমজাদ হোসেনের ‘অবেলায় অসময়’ মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রাম, বাংলার সার্বিক চিত্র পাওয়া যায়। কিশোর উপন্যাস ‘আমার বন্ধু রাশেদ’-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষ কিভাবে দিন যাপন করেছেন তা তুলে ধরেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

নাটককে বলা হয়ে থাকে জীবনের আয়না। এই মাধ্যমটিতেও ওঠে এসেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। নাটকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের আগের ও পরের নানা আখ্যান ভাগ ওঠে এসেছে অত্যন্ত কুশলতার সঙ্গে। বিশেষ করে পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে আমাদের নাটক নানাভাবে ঐতিহাসিক সত্যগুলো ওঠে এসেছে শৈল্পিকভাবে। গত চার দশকে আঙ্গিক, বিষয়, পরিপ্রেক্ষিতÑ সবদিক থেকে নাটক অতিক্রম করেছে তার পথ। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হচ্ছেÑ মমতাজউদ্দিন আহমেদের ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, ‘এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ও ‘বর্ণচোর’, আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘নিঃশব্দ যাত্রা’ ও ‘নরকে লাল গোলাপ’, জিয়া হায়দারের ‘সাদা গোলাপে আগুন’, নীলিমা ইব্রাহিমের ‘যে অরণ্যে আলো নেই’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ ও ‘নূরলদীনের সারা জীবন’, কল্যাণ মিত্রের ‘জল্লাদের দরবার’, সাঈদ আহমদের ‘প্রতিদিন একদিন’, আল মনসুরের ‘হে জনতা আরেকবার’, রণেশ দাশগুপ্তের ‘ফেরী আসছে’ প্রভৃতি।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা, অনুষঙ্গ ও উপাদান ব্যবহার করে স্বাধীনতা-উত্তরকালে প্রচুর ছোটগল্প লেখা হয়েছে। তবে না বললেই নয়, ছোটগল্পের লেখকরাই তাদের উপন্যাসে একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পগুলোর মধ্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ ও ‘অপঘা, আবু জাফর শামসুদ্দীনের ‘কালিমদ্দি দফাদার’, আবু রুশদের ‘খালাস’, আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘স্মৃতি তোকে ভুলবো না’, আবু ইসহাকের ‘ময়না কেন কয় না কথা’, আবদুশ শাকুরের ‘ইশু’, বশীর আল হেলালের ‘প্রথম কৃষ্ণচূড়া’, আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনের ‘অল্পরী’, আমজাদ হোসেনের ‘কারবালার পানি’, জাহানারা ইমামের ‘রায়বাগিনী’, আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘ব্ল্যাক আউট’, আবুবকর সিদ্দিকের ‘ফজরালি হেঁটে যায়’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘লোকটি রাজাকার ছিল’, ইমতিয়ার শামীমের ‘মৃত্তিকা প্রাক-পুরাতান’, জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের ‘দিন ফুরানোর খেলা’ ও ‘আমৃত্যু’, নাসরীন জাহানের ‘বিশ্বাস খুনি’, পূরবী বসুর ‘দুঃসময়ের অ্যালবাম’, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের ‘মাধবপুরে’, বুলবুল চৌধুরীর ‘নদী জানে’, মাহমুদুল হকের ‘বেওয়ারিশ লাশ’, মোহাম্মদ রফিকের ‘গল্প, কিন্তু সত্য নয়’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শামসুল হকের ‘জলেশ্বরীর গল্পগুলো’, বশীর আল হেলালের ‘প্রথম কৃষ্ণচূড়া’, সৈয়দ শওকত ওসমানের ‘জন্ম যদি তবে বঙ্গে’, আবু জাফর শামসুদ্দীনের ‘রাজেন ঠাকুরের তীর্থযাত্রা’, আবুবকর সিদ্দিকের ‘মরে বাঁচার স্বাধীনতা’, সৈয়দ ইকবালের ’একদিন বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য গল্প’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘অপঘাত’, রাহাত খানের ‘মধ্যিখানের চর’, সেলিনা হোসেনের ‘আমিনা ও মদিনার গল্প’, হুমায়ূন আহমেদের ‘শীত’, ‘উনিশ শ একাত্তর’, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘কেয়া’, মাহমুদুল হকের ‘কালো মাফলার’, জহির রায়হানের ‘সময়ের প্রয়োজনে’, শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘পুঁই ডালিমের কাব্য’, আমজাদ হোসেনের ‘উজানে ফেরা’, সত্যেন সেনের ‘পরিবানুর কাহিনী’, মঞ্জু সরকারের ‘শান্তি বর্ষিত হোক’, শওকত আলীর ‘সোজা রাস্তা’, কায়েস আহমেদের ‘আসন্ন’, হুমায়ুন আজাদের ‘যাদুকরের মৃত্যু’, মামুন হুসাইনের ‘মৃত খড় ও বাঙাল একজন’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

আমাদের শিশুসাহিত্যেও মুক্তিযুদ্ধ ওঠে এসেছে নানাভাবে। শিশুসাহিত্যের পরিসর সমৃদ্ধ হয়েছে একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধে। বলতে হয়, ছড়া আমাদের শিশুসাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিশেষ করে ছড়ার মধ্য দিয়েই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ওঠে এসেছে শিশুসাহিত্যে। এক্ষেত্রে অগ্রণী ছড়াকারদের মধ্যে রয়েছেন সুকুমার বড়–য়া, আমীরুল ইসলাম, লুৎফুর রহমান রিটন প্রমুখ। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিশু-কিশোরদের জন্য লিখেছেনÑ সুকুমার বড়–য়া, এখলাস উদ্দিন আহমদ, আসাদ চৌধুরী, আখতার হুসেন, খালেক বিন জয়েন উদ্দীন, মাহমুদ উল্লাহ, আবু কায়সার, আবু সালেহ, ফারুক নওয়াজ, লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম, আসলাম সানী, ধ্রুব এষ, সারওয়ার-উল-ইসলাম, ওবায়দুল গনি চন্দন, আনজির লিটন প্রমুখ। প্রসঙ্গত, কিশোর গল্পেও পড়েছে মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ছায়া। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিশোর গল্প-উপন্যাস লিখেছেন আলী ইমাম, কাইজার চৌধুরী, শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুন, আবু সাঈদ জুবেরী, আমীরুল ইসলাম, ইমদাদুল হক মিলন, আশরাফুল আলম পিন্টু, রফিকুর রশীদ প্রমুখ।

গল্প, উপন্যাস, ছড়া, প্রবন্ধ, নাটকের মতো কবিতায়ও মুক্তিযুদ্ধ সমানভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এককথায়, কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলন ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। এ দেশের কবিরা তাদের কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা ও পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে কলম শাণিত রেখেছেন। দ্রোহ ও ঘৃণায় নরপশুদের কলঙ্কের বিরুদ্ধে কবিরা হাজারো পঙক্তি রচনা করেছেন। জসীমউদদীন, সুফিয়া কামাল, হাসান হাফিজুর রহমান, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, মহাদেব সাহা, রফিক আজাদ, শহীদ সাবের, নির্মলেন্দু গুণ, হুমায়ুন কবির, শহীদ কাদরী, আবুল হাসান, মুহাম্মদ নূরুল হুদা, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, শিকদার আমিনুল হক, অসীম সাহা, দাউদ হায়দার, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহসহ অসংখ্য কবির কবিতায় এসেছে মুক্তিযুদ্ধ।

চলচ্চিত্রের পর্দায়ও নানাভাবে জীবন্ত হয়ে ওঠেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। সেলুলয়েডের ফিতায় ধরা পড়েছে একাত্তর। খ্যাতিমান পরিচালকরা তাঁদের চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের বিস্তৃত অধ্যায়কে চিত্রায়িত করেছেন অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে। চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধকে ইঙ্গিতসহ আকারে ফুটিয়ে তুলেছেন যেসব চলচ্চিত্রকার তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনÑ জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, চাষী নজরুল ইসলাম, আলমগীর কবির, আবদুল্লাহ আল মামুন, আমজাদ হোসেন, সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকি, তানভীর মোকাম্মেল, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, শেখ নিয়ামত হোসেন ও তারেক মাসুদ।

চলচ্চিত্রের পাশাপাশি সংগীতের মাধ্যমেও মুক্তিযুদ্ধ সাধারণ মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকেই গান লিখেছেন, সুর করেছেন, কণ্ঠ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গোবিন্দ হালদার অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতারে সম্প্রচারিত তাঁর লেখা গানগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করত। গানের মাধ্যমে তিনি শিখিয়েছেন কীভাবে একটি ফুলকে বাঁচানোর জন্য যুদ্ধ করতে হয়, একটি মুখের হাসির জন্য কীভাবে অস্ত্র ধরতে হয়, কীভাবে যুদ্ধে যেতে হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন তাঁর গান বেজেছে, তেমনি যুদ্ধ শেষেও বেজে ওঠেছে তাঁর গান। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর পাওয়ার পরপরই ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রচারিত হয় তাঁর লেখা গান ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যাঁরা, আমরা তোমাদের ভুলব না।’

আমাদের চিত্রকলায়ও মুক্তিযুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, পটুয়া কামরুল হাসান, মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ সফিউদ্দিন, মুর্তজা বশীর, কাইয়ুম চৌধুরী, কালাম মাহমুদ, প্রাণেশ ম-ল, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, হামিদুর রহমান, নভেরা, রফিকুন নবী, হাশেম খান, মনিরুল ইসলাম, এমদাদ হোসেন, শাহাবুদ্দীন, কালিদাস কর্মকার, সৈয়দ লুৎফুল হক, বীরেন সোম, শিশির চক্রবর্তী, কাজী হাসান হাবিব, আফজাল হোসেন, মাসুক হেলাল, ধ্রুব এষ, উত্তম সেন প্রমুখ শিল্পী তাঁদের তুলিতে নানা বর্ণে, নানা মাত্রায় মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেছেন এক ভিন্ন উচ্চতায়।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক নিয়ে রচিত হয় বেশকিছু প্রবন্ধ-স্মৃতিকথা জাতীয় বই। মুক্তিযুদ্ধের ওপর সর্বাধিক মননশীল প্রবন্ধ, নিবন্ধ রচনা করেছেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। শাহরিয়ার কবিরও লিখেছেন অসংখ্য রচনা। তবে এম আর আখতার মুকুল, জাহানারা ইমামই প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যগ্রন্থ লিখে বিষয়টিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্য করে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ এম আর আখতার মুকুলের ‘আমি বিজয় দেখেছি’, শামসুল হুদা চৌধুরীর ‘একাত্তরের রণাঙ্গন’, জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’, সেলিনা হোসেনের ‘একাত্তরের ঢাকা’, এমএসএ ভূঁইয়ার ‘মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস’, মেজর রফিকুল ইসলামের ‘একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে’, রফিকুল ইসলামের (বীর-উত্তম) ‘লক্ষ প্রাণের বিনিমিয়ে’, কাজী জাকির হাসানের ‘মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি’, আসাদ চৌধুরীর ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’, হেদায়েত হোসেন মোরশেদের ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম,’ ‘ঢাকায় গেরিলা অপারেশন’ ও রশীদ হায়দার সম্পাদিত ‘১৯৭১ : ভয়াবহ অভিজ্ঞতা’ ।

সৈয়দ শিশির : কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক

[email protected]

ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/এসএস/টিএমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :