পাকিস্তান সম্পর্কে ভাসুর?

কাওসার শাকিল
| আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:৪৬ | প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:৩৩

১৯৭১ এ যুদ্ধটা কার বিরুদ্ধে হয়েছিলো? -পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।

১৯৭১ এর ডিসেম্বরে কারা আমাদের সূর্যসন্তানদের ধরে নিয়ে গিয়েছিলো? কারা তাদের চোখ, হাত-পা বেধে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলো?

-পাকিস্তানি হানাদারদের এদেশীয় দোসর আল-বদর, আল-শামস।

এই কথাগুলো বলা কি খুবই কঠিন? নাতো। এযে দিনের আলোর মতন সত্য। সত্য বলতে কষ্ট কেন হবে?

অথচ বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এ নামগুলো উচ্চারণ করতে পারলেন না। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে তিনি ২৫৩ শব্দের একটা বিবৃতি দিলেন। সেখানে একটা বারের জন্যও উচ্চারণ হয়নি এ শব্দগুলো- পাকিস্তান, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, যুদ্ধাপরাধী।

এর কারণ বোঝাটা খুব একটা শক্ত কিছু না। বিএনপি নামক দলটি তাদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে এদেশ, এদেশের মানুষকে জামায়াতে ইসলাম নামের ‘বিষ্ঠা’কে চীনা মাটির সুন্দর পাত্রে সাজিয়ে দিয়ে খেতে বাধ্য করেছে। লোকজন বুঝে হোক, আর না বুঝে হোক, সেই ‘বিষ্ঠা’ খেয়েও নিয়েছে। চোখে দেখেও দেখেনি, না দেখার ভান করেছে। এড়িয়ে গেছে। ফলে কোনো প্রশ্ন, কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই এদেশের মানুষ কুখ্যাত রাজাকারকে মন্ত্রিত্ব পেতে দেখেছে। তাদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দেখে মেনে নিয়েছে।

কিন্তু ‘বিষ্ঠা’ তো বেশিদিন খাওয়া যায় না। এক সময় না এক সময় নাকে গন্ধ গন্ধ লাগে। সময় লেগেছে, কিন্তু মানুষের চেতনা ফিরেছে। এখনকার মানুষের চিন্তা ভাবনা অন্যরকম, তারা চীনা মাটির সুন্দর পাত্র কেন, সোনার প্লেটে সাজিয়ে দিলেও ‘বিষ্ঠা’ খায় না। আর এই জিনিসটা বিএনপি এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি।

বিএনপি এখনো পাকিস্তান আর জামায়াতের সঙ্গে ‘ভাসুর ভাসুর’ সম্পর্ক ধরে রেখেছে। ভাসুরের নাম যেমন মুখে নেয়া যায় না, সেরকম বিএনপি পাকিস্তানের নাম মুখে আনে চায় না। জামায়াত যে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির শেষ আশ্রয়, সেটার নেতারা যে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এর নেতৃত্ব দিতো, এরাই যে দেশটাকে পঙ্গু করবার জন্য ৭১ এ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে- এ সত্যগুলো বিএনপি মুখ ফুটে স্বীকার করতে চায় না। জামায়াতের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিএনপি যে আদতে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিতে পাল্টে গেছে এটাও বিএনপি বুঝতে চায় না। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির এই ভাসুর সম্পর্কের মূল কারণ সেটাই। আর তারই প্রকাশ দেখতে পেলাম বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএনপি প্রধানের বক্তব্যে।

বেগম খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যর্থ্যতা তিনি এদেশের মানুষের টেম্পারমেন্টটা ধরতে পারছেন না। মানুষ পাকিস্তানকে ভালো চোখে দেখে না। পাকিস্তানের উদ্ধত্যে মানুষ ক্ষেপে যায়। বিএনপি এখনো বুঝতে পারছে না এক মুঠ ‘জাতীয়তাবাদ’ এর সঙ্গে তিন আঙুলের এক চিমটি ‘ধর্ম’ মিশিয়ে ঘুটা দিলেই রাজনীতি হয় না। মানুষ এ জিনিস আর খায় না। জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতি করতে করতে বিএনপি ক্রমশ হাস্যকর থেকে হাস্যকর একটা দলে পরিণত হয়েছে। নতুন চিন্তা ভাবনায় যুক্ত হতে না পারলে এ দলটি যদি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে, আমি খুব একটা অবাক হবো না।

লেখক: গণযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :