উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ

রাজু আলীম
 | প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:৫৫

পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা। ইতোমধ্যে কাজের ৩৯ ভাগ শেষ হয়েছে। দুই থেকে তিন মাসের ভেতর প্রথম স্প্যানটি পিলারের ওপর বসবে। এরপর ১৫ দিন অন্তর একেকটি স্প্যান বসবে। এ সেতুর ইতিহাসে স্থানীয়দের ত্যাগ সব সময় মিশে থাকবে।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। পদ্মা নদীর কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট শিগগির কাঠালবাড়ি স্থানাস্তর করা হচ্ছে। এতে করে ১৩ কিলোমিটার কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া নৌ পথের দূরত্ব কমে যাবে ছয় কিলোমিটার। ফলে ৪০ মিনিটেই পদ্মা নদী পাড়ি দেয়া সম্ভব হবে।

পদ্মাসেতুর সঙ্গে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সম্মান জড়িয়ে আছে। এই সেতুকে সরকার অতি গুরুত্ব দিয়ে নীরবে ২৪ ঘণ্টা কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ পরিদর্শনে আসেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক চলে যাওয়ার পর পদ্মা সেতু সংশয় ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসিম সাহসী সিদ্ধান্তে পদ্মা সেতু বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে এবং এর কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে পদ্মা সেতুর সঙ্গে বিশ্বে আমাদের জাতির সন্মান জড়িয়ে আছে।

পদ্মাসেতুর পাশাপাশি আরও একটি সুখবর আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে দেশবাসীর মধ্যে। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে রাজধানীর হাতিরঝিলে আলোক উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। বাংলাদেশের দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তিন হাজার থেকে ১৫ হাজারে উন্নীত করায় এ বিশেষ আয়োজন।

২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সেই সময় দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। বিগত সাত বছরের বিদ্যুৎ খাতের ধারাবাহিক উন্নয়নের ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

এই খবর জনগণকে জানানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে হাতিরঝিলে এ আলোক উৎসবের আয়োজন করা হয়। আতশবাজি, আলোকচ্ছটা, এলইডি নৃত্য এবং বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়নের ওপর একটি অ্যানিমেশন প্রদর্শন করা হয়। অন্ধকারের মাঝে হঠাৎ সশব্দে লাল, নীল, হলুদ আলোর ঝলকানিতে রঙিন হয়ে উঠে হাতিরঝিল। আলোর ঝলকানিতে রাজধানীর হাতিরঝিলের সৌন্দর্য অন্য রূ ধারণ করে।

বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা ১০ হাজার মেগাওয়াট হওয়া উপলক্ষে ২০১৩ সালের নভেম্বরের শুরুতে বর্ণিল আয়োজন হয়েছিল হাতিরঝিলে। তিন বছরের ব্যবধানে সেই উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে হয়েছে দেড়গুণ। তিন বছরের সেই জমকালো উৎসবও এবার আগের চেয়ে আরও বর্ণিল হয়ে উঠে।

ইতিমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেল প্রকল্প। এর মধ্য দিয়ে ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেলো। সম্প্রতি অর্থ সংস্থানের জটিলতা কেটে যাওয়ায় একনেকে অনুমোদন পেয়েছে এ প্রকল্প। সম্প্রতি জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় অর্থ সংস্থান নিয়ে দীর্ঘদিনের জটিলতার প্রাথমিক অবসান হয়। এ প্রেক্ষিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থা অপ্রতুল। ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বমানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে যানজট কমে যাবে।

পরিকল্পনা কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, মেট্রোরেল প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শেষ হবে। উত্তরা থেকে পল্লবী, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল পর্যন্ত যাবে। পথে স্টেশন থাকবে মোট ১৬টি। মেট্রোরেল ঘণ্টায় গড়ে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে।

তিনটি পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ২০১৯ সালের মধ্যে পল্লবী থেকে সোনারগাঁও পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার চালু করা হবে। এর পরের বছরে হোটেল সোনারগাঁও হতে মতিঝিল এবং ২০২১ সাল নাগাদ উত্তরা হতে পল্লবী অংশে ট্রেন চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

মেট্রোরেলের পাশাপাশি রাজধানীতে বেশ কয়েকটি উড়ালসেতু নির্মাণ করে সরকার রাজধানীর চেহারা পাল্টে দিয়েছে। বনানী রেলক্রসিং এলাকায় উড়ালসড়কটি মিরপুরের মাটিকাটা থেকে শুরু হয়ে বিমানবন্দর সড়কে জিয়া কলোনিসংলগ্ন শেষ হয়েছে। এর ফলে মিরপুরের সঙ্গে রাজধানীর উত্তরা ও পশ্চিম অংশের যোগযোগ সগজ হয়েছে।

সরকার রাজধানীতে আরও কয়েকটি উড়াল সড়ক নির্মাণে কাজ করছে। নির্মাণ শুরু হয়ে গেছে উত্তরা থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজও। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সত্যিই অন্য রকম এক ঢাকা দেখতে পাবেন রাজধানীবাসী।

ঢাকাকে সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ফুটওভারব্রিজগুলোর ওপর লাগানো হচ্ছে ফুলের গাছ। উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এবং সাঈদ খোকনের নির্বাচনী প্রতিশ্রতি অনুযায়ী ‘ক্লিন ঢাকা গ্রিণ ঢাকা’ পূরণের লক্ষ্যে এ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

উত্তর সিটি করপোরেশন ফার্মগেট থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত মোট ৫২টি ওভারব্রিজের ওপর গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন, সবুজ ঢাকা করার লক্ষ্যে আমরা ফুটওভারব্রিজগুলোতে গাছ লাগানো শুরু করেছি। এরই মধ্যে ফার্মগেট, কাকলী, চেয়ারম্যানবাড়ী, বনানী, উত্তরা হাউজ বিল্ডিং মোড়সহ ১২টি ওভারব্রিজে গাছ লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিহাবউল্লাহ বলেন, দক্ষিণে মোট ৩০টি ফুট ওভারব্রিজের ওপর গাছ লাগানোর কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারটির কাজ শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোর কাজ সম্পন্ন করা হবে। তিনি বলেন, সবুজায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী ছয় মাসের মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একটি পরিবর্তন দেখতে পাবেন নগরবাসী।

সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু, ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত, মেট্টোরেল, ফ্লাইওভার, গ্রিন ঢাকা এবং সরকারের নানা উদ্যোগে সত্যিকারভাবেই উন্নয়নের মহাসড়কে এখন বাংলাদেশ।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :