নতুন প্রজন্মে দেশপ্রেম জাগানো হোক বিজয়ের শপথ
বিজয়ের পঁয়তাল্লিশ বছর উদযাপন করছে বাংলাদেশ। এই বয়সী একজন মানুষ পরিপূর্ণ হবে, স্বাভাবিক চাওয়া এমনই। কিন্তু দেশের ক্ষেত্রে? একটা স্বাধীন দেশকে পুরোপুরি সক্ষম করে তুলতে সময়টা খুব বেশি তা নয়। তবে পিছিয়েও নেই বাংলাদেশ। এগিয়েছে অনেক। উন্নয়নের পথে হাঁটছে প্রিয় স্বদেশ।
এই পঁয়তাল্লিশ বছরে আত্মনির্ভরশীলতা বেড়েছে বাংলাদেশের। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশ্বের ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে এই সময়ে। নিম্নমধ্যম আয়ের বাংলাদেশের চোখ এখন মধ্যম আয়ের সারির দিকে। সামরিক সক্ষমতাও বেড়েছে অনেক।
স্বাধীনতা-পরবর্তী দীর্ঘ এই সময়ে নানা ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কম নয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বারবার প্রশংসিত হয়েছে ১৬ কোটি মানুষের এই ভূখণ্ড। খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থানসহ বেশকিছু খাতে আমাদের অর্জন অভাবনীয়, ঈর্ষণীয় বটে। তথ্যপ্রযুক্তির জোয়ার এখন বিশ্বজুড়ে। এর ঢেউ এসে আছড়ে পড়েছে বঙ্গীয় বদ্বীপে। মহাকাশের অজানাকে জানতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এখন সময়ের ব্যাপার।
বিজয়ের এই আনন্দক্ষণে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি একাত্তরের সেই বীর সেনানিদের, যাদের আত্মত্যাগে আজ আমরা স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক। স্মরণ করছি মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার আঙুলের ইশারায় সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি জীবন বাজি রেখে শত্রুর মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এক সাগর রক্ত পেরিয়ে স্বাধীন হয়েছে লাল-সবুজের বাংলাদেশ। তাই এই বিজয় আমাদের আনন্দ-বেদনার কাব্য।
মুক্তিযুদ্ধকালে যদি এ দেশের কিছু দোসর পাকিস্তানি হানাদারদের সহযোগিতা না করত, তাহলে হয়তো এত রক্ত ঝরাতে হতো না স্বাধীনতার স্বাদ পেতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সেই সব বিশ্বাসঘাতক রাজাকার-আলবদরের তালিকা হয়নি আজও। এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে চিহ্নিত করা যায়নি একাত্তরের ঘাতক-দালালদের। তবে এই কষ্টের মধ্যেও এতটুকু স্বস্তি যে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার হচ্ছে, দীর্ঘ সময় পরে হলেও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবল না থাকলে এটাও সম্ভব হতো না।
যে চেতনা ও মূল্যবোধ সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল তা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে? মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম এবং বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই চেতনাবোধ কিংবা দেশপ্রেম পুরোপুরি জাগিয়ে তোলা আজও সম্ভব হয়নি। ফলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি, অনিয়মের বিস্তার ঘটছে সমাজে। এই সুযোগে স্বাধীনতাবিরোধীরা ছক কষছে দূর-ভবিষ্যতের। তাদের লক্ষ্য তরুণসমাজ। এদের বিপথে টেনে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে চাইছে ষড়যন্ত্রকারীরা।
৪৫ বছরের এই গৌরবময় বিজয়ক্ষণে আমাদের শপথ নিতে হবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার। পরিবার থেকেই না হয় শুরু হোক এই উদ্যোগ।
সারা দেশে এখন চলছে বিজয়ের উৎসব। এই আনন্দক্ষণে ঢাকাটাইমসের পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
সম্পাদক: ঢাকাটাইমস ও সাপ্তাহিক এই সময়
মন্তব্য করুন