সবজির আড়তে মহাসড়কে যানজট, নীরব পুলিশ
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গোলড়া বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে সবজি আড়ত বসিয়েছে স্থানীয় একটি প্রভাশালী চক্র। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি। কিন্তু আড়তের একশ গজ সামনে গোলড়া হাইওয়ে থানা থাকলেও মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কের দুই পাশে সকাল-বিকাল অবৈধ সবজি আড়ত বসার কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বছরদুয়েক আগে একটি মালবাহী ট্রাক অন্য আরেকটি পরিবহনকে সাইট দিতে গিয়ে দুই পথচারীকে চাপা দিলে তারা ঘটনাস্থলেই মারা যান বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গোলড়া হাইওয়ে থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশসনকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালীরা নির্বিঘ্নে এমন অবৈধ কাজ করছেন। তবে গোলড়া হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএনপি জোট সরকারের সময় গোলড়া এলাকায় বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত লিয়াকত আলী তার নিজস্ব জমিতে সবজি আড়ত বসিয়ে দেন। এরপর যখন আড়ত মোটামুটি দাঁড়িয়ে যায় তখন স্থানীয় ২৫ জনের কাছ থেকে ১০ হাজার করে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সবজি পাইকারদের সেই টাকার সিকিউরিটি দিয়ে তাদের আড়তে আসার আমন্ত্রণ জানান।
২০১০ সালের পর যখন তাদের আড়ত পুরোপুরি জমজমাট হয়ে যায় তখন অপর পার্টনারদের শেয়ারের টাকা ফেরত দিয়ে মূল ব্যক্তি লিয়াকত আলী নিজেই আড়ত চালাতে থাকেন। বর্তমানে মানিকগঞ্জের সদর ও সাটুরিয়া উপজেলার প্রায় বেশিরভাগ আবাদ করা সবজি সকাল-বিকাল এখান থেকেই ঢাকার বড় বড় পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। এই সবজি আড়তটি বর্তমানে এতই জমজমাট যে, আড়তের ছোট্ট নির্দিষ্ট জায়গা ছেড়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে বসানো হচ্ছে। এমনকি আড়তের নির্দিষ্ট জায়গায় চাষিরা সবজি না নিয়ে মহাসড়কের দুই পাশে রেখে ঢাকার পাইকারদের কাছে তা বিক্রি করলেও আড়কের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গোলড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের দুইপাশ দখল করে চাষিরা সবজি নিয়ে বসে আছেন। আবার কোনো কোনো সবজি চাষি তাদের সবজি ঢাকা থেকে আসা পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। এ সময় দেখা যায় বিক্রি করা সবজিগুলো রাস্তার পাশে রাখা ছোট ছোট ট্রলি, পিকআপে ভরছেন। রাস্তার পাশে বিভিন্ন ধরনের সবজির পরিবহন রাখার কারণে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে দূরপাল্লার পরিবহনগুলো ধীরগতিতে চলাচল করছে।
স্থানীয় কামতা গোলড়া এলাকার আব্দুল আজিজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আড়তের ভেতরে জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশে কপি নিয়ে বসেছি। আমার মতো আরও অনেকেই রাস্তার পাশে বসে মাল বিক্রি করেন। তিনি বলেন, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে মনের ভেতর সবসময় ভয় কাজ করে।
স্থানীয় মেঘ শিমুল এলাকার শমসের আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা আড়তের বাইরের মাল বিক্রি করি। এরপরও আড়তের মালিককে শতকরা পাঁচ টাকা হারে জমা দিতে হয়। এই টাকা দিতে অস্বীকার করলে আড়তের লোকজন আমাদের মারপিট করেন। মাল বিক্রি করতে দেন না।’
ধামরাই থেকে আসা সবজি পাইকার আব্দুল আজিজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি প্রতিদিন গোলড়া সবজি কিনতে আসি। কিন্তু এখানে গাড়ি রাখার মতো কোনো জায়গা নেই। এ কারণে রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে সবজি কিনি।’
ঢাকার উত্তরা থেকে আসার সবজি পাইকার রেজাউল করিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সাটুরিয়ার সবজির মান ভালো হওয়ায় আমরা সবজি নিতে আসি। কিন্তু এখানকার পরিবেশ ভালো না। রাস্তার পাশ থেকে সবজি কিনতে হয়। মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে সবজি কিনতে মনের ভেতর ভয় কাজ করে।’
সাটুরিয়া উপজেলার ধানকুরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মনোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘লিয়াকত আলী অবৈধভাবে স্কুলের জমি দখল করে সবজি আড়ত বসিয়েছেন। আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করেছেন। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না।’
ধানকুড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দীন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে অবৈধভাবে সবজি আড়ত বসানোর কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এর আগে একটি ট্রাক সাইট দিতে গিয়ে গাড়ির চাপায় দুইজন পথচারী মেড়ে ফেলেছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না।’
অবৈধভাবে চালানো আড়তের মালিক লিয়াকত আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই আড়ত চালানোর জন্য আমার একটি ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। এছাড়া আড়ত চালানোর জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আরেকটি লাইসেন্স করা হয়েছে।’ লাইসেন্সগুলো সর্বশেষ কবে নবায়ন করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, রাস্তায় পুলিশ থাকে। এ কারণে আড়তে আসা লোকজন রাস্তায় বসে না।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল আলম ঢাকাটাইসকে বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে আমরা কোনো সবজি বিক্রেতাকে দাঁড়াতে দিই না। একারণে আড়ত চলাকালে গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ মোতায়েন থাকে।’ তবে কর্মকর্তা স্বীকার করেন আড়তের কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী গাওছুল হাসান মারুফ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মহাসড়কের কোনো ধরনের বাজার বা আড়ত বসানো যাবে না। এ ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি। এমন ঘটনা ঘটলে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
সাটুরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ ফারজানা সিদ্দীকি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে আমরা বদ্ধ পরিকর। বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি সরেজমিন দেখে এমনটা ঘটলে আড়তদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’ এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আড়তদার যে লাইসেন্সের কথা বলেছেন জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে তা দেয়ার কথা নয়।’
(ঢাকাটাইমস/১৭ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)
মন্তব্য করুন