প্রধানমন্ত্রীর সই নকল করে প্রতারণার নতুন জাল

প্রকাশ | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১২:২৯ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:৫০

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস

নতুন ধরনের প্রতারণার চেষ্টা চলছে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে। সাইফুল আলম চৌধুরী টিটো নামে একজন নিজেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দাবি করে একটি পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন। এতে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের সইও আছে।

বাংলাদেশে বরাবর ক্ষমতাসীন দলের নাম বা পরিচয় ব্যবহার করে নানা সময় নানা ধরনের প্রতারণার চেষ্টা হয়ে থাকে। নানা সময় দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, দখলবাজি বা অন্য প্রতারণার চেষ্টা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত দলের শীর্ষ নেতাদের নামে পরিচয়পত্র খোলার তথ্য পাওয়া যায়নি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা একে নতুন ধরনের প্রতারণার চেষ্টা হিসেবেই দেখছেন। ঢাকাটাইমসকে একাধিক নেতা বলছেন,  কেন্দ্রীয় বা কোনো পর্যায়ের নেতাদের দলীয় পরিচয়পত্র নেই। ওই ব্যক্তি নিশ্চিতভাবেই প্রতারণা করতে বা ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করতে এমনটি করেছেন।

পরিচয়পত্রে যা যা আছে

ওই পরিচয়পত্র অনুযায়ী জনাব টিটোর বাবার নাম মৃত নুরুল আলম চৌধুরী এবং মায়ের নাম নুরজাহান বেগম চৌধুরী। তার বাড়ির ঠিকানা দেয়া আছে, চৌধুরী ভিলা, ১৬৯৪ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।

পরিচয়পত্রের ওপরে আওয়ামী লীগের স্লোগান ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান আছে। বড় করে লেখা আছে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।’ ইংরেজিতে লেখা আছে, ‘আইডেনটিটি কার্ড, অনলি ইউজ ফর সেন্ট্রাল লিডার’।

পরিচয়পত্রে আইডি নম্বরও দেয়া আছে। এই নম্বর হলো: ১৫৯২৮২৪০৪৮৩৮। বি. সি নম্বর নামে আরও একটি নম্বর আছে। এটি হলো: ১৯৯০১৫৯২৮২৪০৭০৭১১।

দলে যোগদানের তারিখও আছে এই পরিচয়পত্রে। এই তারিখ হলো ২৩ মার্চ ২০১৪। আর এর মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ।

পরিচয়পত্রের নিচের বাম মাসে ‘সংগ্রামী শুভেচ্ছাসহ’ কথা লিখে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সই এবং ডান পাশে একই ভাবে ‘সংগ্রামী শুভেচ্ছাসহ’ কথা লিখে দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এর সই আছে।

ওই পরিচয়পত্রে দুটি মোবাইল নম্বরও দেয়া আছে। এগুলো হলো ০১৭১৫-৯০২৬৩২ এবং ০১৮১৪-৩৪৬৭০৮।

গ্রামীণ নম্বরটি চালু আছে। ওই নম্বরে কল হলা হলে টিটো নামধারী ওই লোক ফোন ধরেন। এটা কি সাইফুল আলম চৌধুরী টিটোর নম্বর? জানতে চাইলে ওই প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘হ্যাঁ, ঠিক আছে।’ এরপর তিনি জানতে চান, ‘আপনি কে বলছেন’, সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি ফোন কেটে দেন।

এরপর অন্য একটি নম্বর থেকে ফোন দেয়া হলে ওই ব্যক্তি আর ফোন ধরেননি।

কেন্দ্রীয় নেতারা যা বলছেন

যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই ভুয়া। কারণ, আওয়ামী লীগের এই ধরনের কোনো পরিচয়পত্র নেই।’

আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কেবল কেন্দ্রীয় নেতা নয়, কোনো পর্যায়ের নেতারই দলীয় কোনো পরিচয়পত্র নেই। আমাদের পদটাই দলীয় পরিচয়। ওই লোক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে জালিয়াতি করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমাদের দাবি, তাকে অতিসত্বর আটক করে আইনের আওতায় আনা হোক।

আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাড়ি চট্টগ্রাম শহরেই। আগ্রাবাদ এলাকায় সাইফুল আলম চৌধুরী টিটো নামে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা আছেন বলে জানেন না তিনি। ঢাকাটাইমসকে জনাব নওফেল বলেন, ‘এটা একটা বড় অপরাধ। সরকারপ্রধানের সই জাল করে দিব্বি একটা মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইন ও ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ‘

ঢাকাটাইমস/১৮ডিসেম্বর/টিএ/ডব্লিউবি