কর্মসংস্থানসহ আলোকিত সীমান্ত গড়ে তুলব

অনলাইন ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:১৮

মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে যোগ দেন গত ১৬ নভেম্বর। এর আগে তিনি রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯৮১ ব্যাচের ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের এই কর্মকর্তা এর আগেও সেক্টর কমান্ডার হিসেবে বিজিবিতে দায়িত্ব পালন করেছেন রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের দায়িত্ব পেয়ে বঙ্গভবনে আসার আগে তিনি সেনা সদর দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ এবং মিরপুরে সেনাবাহিনী পরিচালিত মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি গাজীপুরে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার কমান্ডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন

একসময় ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করা আবুল হোসেন কুয়েতে জাতিসংঘ শান্তি মিশনেও নেতৃত্বের পর্যায়ে কাজ করেন বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি পাওয়া এই সেনা কর্মকর্তা ব্যবসায় প্রশাসন ডিফেন্স স্টাডিজে মাস্টার্স করেছেন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন চীন, তুরস্ক, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে।

বিজিবি দিবসের আগে গত রবিবার বিজিবি সদর দপ্তরে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বাহিনীর উন্নয়ন, সীমান্ত সুরক্ষাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মহিউদ্দিন মাহী

ঢাকাটাইমস: এক মাস হলো বিজিবির ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিজিবিকে নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

আবুল হোসেন: বাংলাদেশের সীমান্তকে শতভাগ সুরক্ষা এবং আলোকিত সীমান্ত গড়াই আমার প্রধান লক্ষ্য। এ জন্য আধুনিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো সীমান্তে থার্মাল ইমেজার বসানো হবে। এর মাধ্যমে রাতের আঁধারেও কেউ সীমান্ত অবৈধভাবে অতিক্রম করলে তা ধরা পড়বে। শরীরে তাপ আছে এমন যেকোনো প্রাণী সীমান্ত অতিক্রম করলে তার অবস্থান নিরূপণ করা যাবে থার্মাল ইমেজারের মাধ্যমে। ভারত ও পাকিস্তান অনেক আগে তাদের সীমান্তে থার্মাল ইমেজারসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জাম বসিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তেও এ ধরনের সরঞ্জাম রয়েছে। এ ছাড়া সীমান্ত সুরক্ষিত করতে বিশেষ ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে।

ঢাকাটাইমস: সীমান্ত হত্যাসহ আরো যেসব সমস্যা রয়েছে, আধুনিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় কি সেগুলোর সমাধান হবে?

আবুল হোসেন: উন্নত দেশে যেভাবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা করা হয়, আমরা সেভাবে করার চেষ্টা করছি। এতে সীমান্ত সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। আমি বলব না সমস্যা একেবারে থাকবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর যেসব দেশ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সীমান্তে ব্যবহার করছে, সেসব দেশেও কিন্তু সীমান্তে সমস্যা আছে। তবে এটা বলা যায়, সমস্যা অনেকাংশে কেটে যাবে।

ঢাকাটাইমস: আপনার সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী?

আবুল হোসেন: সীমান্ত সড়ক নির্মাণ এবং সব সীমান্ত নজরদারির মধ্যে আনাই আমার প্রধান চ্যালেঞ্জ। ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত সড়ক রয়েছে। আমরা এখনো তা করতে পারিনি। এটি আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকভাবেই সীমান্তে নজরদারি করা যায়। ওয়াচ টাওয়ার, স্যাটেলাইট, থার্মাল ইমেজার, নাইটভিশন ব্যবহার করে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি করা যায়। আধুনিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয় সেগুলো আমরা ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছি। প্রথম দিকে যেসব 'ক্রিটিক্যাল' জায়গা রয়েছে, সেখানে আমরা এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করব। হিলিতে সম্প্রতি কিছু ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এটাও সীমান্ত ব্যবস্থাপনার অংশ।

ঢাকাটাইমস: সীমান্তে অবকাঠামো নির্মাণে কোনো পরিকল্পনা আপনার আছে?

আবুল হোসেন: সীমান্তে বিজিবির টহলের সুবিধার্থে ভারত সংলগ্ন সীমান্তে ৯৩৫ কিলোমিটার এবং মিয়ানমার সংলগ্ন সীমান্তে ২৮৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া বিজিবির দুটি কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে সীমান্ত সড়ক আমরা নিজেরা নির্মাণ করতে পারি। আমাদের 'রিভারাইন বর্ডার' রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে পাহারার জন্য জলযান আছে। আছে হেলিকপ্টার। বিজিবিকে বলা যায় দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক বাহিনী।

ঢাকাটাইমস: সীমান্ত অপরাধ কমাতে আপনার পরিকল্পনা কী?

আবুল হোসেন: দেখুন, মানুষের পেটে যখন ভাত থাকে না তখন সে বৈধ-অবৈধ যেকোনো পন্থায় অর্থ উপার্জনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। সেজন্য আমরা সীমান্ত ব্যাংকের মাধ্যমে কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি যাতে সীমান্ত কর্মসংস্থান করা যায়। সীমান্ত এলাকায় সড়ক নির্মাণ হলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে। পেটে ভাত থাকলে মানুষ আর অবৈধ কাজে জড়াবে না। সীমান্ত আলোকিত করার চেষ্টা চলছে। সীমান্ত ব্যাংকের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকার লোকজনকে সহযোগিতা করলে অপরাধ কমবে।

ঢাকাটাইমস: পিলখানা ট্র্যাজেডির পর বিজিবির পুনগর্ঠন কতটুকু সফল হয়েছে?

আবুল হোসেন: পিলখানা ট্র্যাজেডির পর বিজিবির পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। পুরো দেশকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এখন বিজিবির ১৬টি সেক্টর। নতুন ১৫টি ব্যাটালিয়ন গঠন করেছি। পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে বাহিনীর গতি বজায় রাখতে পেরেছি। আসলে গতিই বাহিনীর প্রাণ। ৫৩ হাজার সদস্যের এই বাহিনীর অর্ধেকের বেশি সদস্যকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ২৪ হাজার নতুন সদস্য নিতে পেরেছি। এটা আমাদের অর্জন। এতে বাহিনী সচল থাকবে।

ঢাকাটাইমস: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির‌্যাতনের মুখে রোহিঙ্গা মুসলিমরা পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে। এ বিষয়ে আপনাদের ভূমিকা কী?

আবুল হোসেন: মিয়ানমারের সঙ্গে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত আছে। এটা পুরোপুরি সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা হচ্ছে। অবৈধভাবে কেউ সীমানা পার হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে। সীমান্তে নানা ধরনের অপরাধী আছে। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা এসেছে। অনেককে পুশব্যাক করা হয়েছে। আগে প্রতিদিন অনেক বেশি রোহিঙ্গা আসত। অনেকে ফেরত যাচ্ছে। পরিস্থিতি এখন উদ্বেগজনক নয়।

ঢাকাটাইমস: আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও বিজিবির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

আবুল হোসেন: আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ইতিহাস ২২১ বছরের। বলতে পারেন উপমহাদেশের প্রথম প্যারামিলিটারি ফোর্স, যাদের অস্ত্র দেওয়া হয়েছিল। বিজিবি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তৎকালীন ইপিআরের (বর্তমান বিজিবি) ৮১৭ জন শহীদ হয়েছেন। এই বাহিনীতে দুজন বীরশ্রেষ্ঠ, আটজন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম, ৭৭ জন বীর প্রতীক রয়েছেন।

ঢাকাটাইমস: রক্তাক্ত বিদ্রোহের পর বিজিবি কী এখন সুসংগঠিত?

আবুল হোসেন: যেকোনো বাহিনী এবং মানুষের জীবনে ঘাত-প্রতিঘাত থাকে। ২০০৯ সালের দুঃখজনক ঘটনার পর বাহিনী পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। নতুন আইন হয়েছে। প্রায় সব ধরনের বিধি তৈরি করা হয়েছে। বাহিনীর কমান্ড চ্যানেলের বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে। বাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রমে দুর্বলতা ছিল। পরে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো করা হয়। উন্নত দেশে যেভাবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা করা হয়, আমরা সেভাবে করার চেষ্টা করছি। আমি মনে করি, বিজিবি এখন অনেকটা সুসংগঠিত।

ঢাকাটাইমস: বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় যারা সাজা খেটে বাড়িতে চলে গেছে, তাদের প্রতি নজরদারি আছে কি না।

আবুল হোসেন: পিলখানা হত্যা মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। পিলখানা হত্যার ঘটনায় যারা সাজা খেটে বিভিন্ন জায়গায় আছেন, তাদের ওপর নজরদারি রয়েছে।

ঢাকাটাইমস: আগের ডিজি বারবার বলেছেন, সীমান্ত হত্যার ৯৫ শতাংশ গরু চোরাচালানিকে কেন্দ্র করে হয়। গরু চোরাচালান বন্ধে আপনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে?

আবুল হোসেন: সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। গরু চোরাচালান এখন অনেক কমে গেছে। কারণ আমরা ভারত থেকে গরু আনা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) প্রধান বলেছেন, তারা সীমান্তে রাবার বুলেট ব্যবহার করবে। তিনি নিশ্চিত করেছেন, তাদের লোকজনের ওপর আঘাত না করলে তারা প্রাণঘাতী বুলেট ব্যবহার করবেন না। বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। যেকোনো ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিই।

ঢাকাটাইমস: বর্তমানে সীমান্তের কতটুকু অরক্ষিত আছে?

আবুল হোসেন: আমাদের ৬০০ কিলোমিটারের মতো সীমান্ত অরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে ৪৬৭ কিলোমিটার সংরক্ষিত করে ফেলেছি। ১১০ কিলোমিটার এখনো অরক্ষিত আছে। আশা করছি এটুকুও খুব শিগগিরই আমাদের সংরক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। পর্যায়ক্রমে অনেকগুলো বিওপি করা হচ্ছে। লজিস্টিক সাপোর্ট, ট্রেনিং, ইক্যুইপমেন্ট আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। ধীরে ধীরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।

ঢাকাটাইমস: বিজিবি সদস্যদের নিরাপত্তা ও সীমান্ত রক্ষায় উন্নত প্রশিক্ষণের কী ব্যবস্থা রয়েছে বাহিনীতে?

আবুল হোসেন: সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হয়। টেকনিক পরিবর্তন হয়। টেকনোলজিও পরিবর্তন হয়। সেসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। অস্ত্র, সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি আমরা। আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। জেসিওদের দেশের ভেতরে-বাইরে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন প্রমোশন ক্যাডারের ট্রেনিং দিয়ে তাদের আধুনিক করার চেষ্টা চলছে।

ঢাকাটাইমস: প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্ত বাহিনীর সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে বিজিবির কি আরো জনবল বাড়ানো উচিত?

আবুল হোসেন: আমাদের বিজিবির বিওপিগুলোর মধ্যকার দূরত্ব ভারত কিংবা মিয়ানমারের তুলনায় অনেক বেশি। এই ঘাটতি পূরণ করতে দরকার জনবল নিয়োগ। এই জনবল ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চলছে।

ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।

আবুল হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :