জাটিভাঙ্গার ৩০০ শহীদজায়া মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি চান

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও
| আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৮:৩৬ | প্রকাশিত : ২১ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৮:৩৩

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জাটিভাঙ্গায় পৈশাচিক গণহত্যার শিকার হয়েছিল তিন সহ¯্রাধিক মানুষ। এর মধ্যে তিন শতাধিক শহীদজায়া স্বামী-সন্তান ও সম্ভ্রম হারিয়ে আজ নিঃস্ব। তারা মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি করেছেন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো এ এলাকার মানুষও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাক বাহিনী নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুষ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে যখন সৃষ্টি করেছিল নারকীয় তা-ব তখন জগন্নাথপুর, চকহলদি, সিঙ্গিয়া, চন্ডিপুর, আলমপুর, বাসুদেবপুর, গৌরিপুর, মিলনপুর, খামারভোপলা, শুকানপুকুরী, ঢাবঢুবসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। ২৫-৩০ কিলোমিটার উত্তরে জাটিভাঙ্গায় সন্ধ্যা নেমে আসায় ক্লান্ত মানুষগুলো জাটিভাঙ্গায় রাতযাপন করে।

খবর পেয়ে পাক হানাদারদের এদেশীয় দোসররা সেনাদের খবর দেয়। সকালে দুই ট্রাক মিলিটারি আসে জাটিভাঙ্গায়। তারা জাটিভাঙ্গা মাঠে ওই মানুষগুলোকে লাইনে দাঁড় করিয়ে মেশিনগানের গুলিতে হত্যা করে। নারীদের সম্ভ্রম আর তাদের কাছে থেকে সোনাদানা লুট করে নেয় এ দেশীয় রাজাকারারা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ।

এখানে তিন হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়, যার স্মৃতি বহন করছে এই উপজেলার চকহলদি গ্রাম। ওই গ্রামের একটি পাড়ার নাম এখন ‘বিধবা পাড়া’। এক পাড়াতেই বাস করছেন ২০ জন বিধবা।

চকহলদি গ্রামের পবনশ্বরী, ফুলফুলি, শ্রীমতি ফুল, ভোটরী বেওয়া, চান্দুরী; জগন্নাথপুর গ্রামের সুকানী, বুধারী, ঝলমলি, বাতাসী, বালাশ্বরী সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে অনেকেই কেঁদে ফেলেন।

তারা জানান, যুদ্ধে হত্যা-নির্যাতনের খবর শুনে তারা নিরাপদে থাকার জন্য ভারতের উদ্দেশে রওনা দেন। পথে জাটিভাঙ্গা এলাকায় রাজাকাররা তাদের আটক করে। সকালে মিছিল করার কথা বলে পুরুষদের ডেকে নিয়ে যায় পাক বাহিনী। সেখানে নদীর পাড়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে হত্যা করে তাদের। স্বামী ও সন্তান হারিয়েই শেষ নয়। এরপর তাদের দিনের পর দিন আটকে রেখে পাকসেনারা চালায় যৌন নির্যাতন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেকে স্বামীর বাড়ি ফিরে আসেন। অনেকের স্থান হয় পিত্রালয়ে। সরকার যুদ্ধে সম্ভ্রমহারা নারীদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিচ্ছে জেনে জাটিভাংগার তিন শতাধিক শহীদজায়া মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দাবি করছেন।

জাটিভাঙ্গায় তিন শতাধিক শহীদজায়ার ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত জেলা কমান্ডার বদরুদ্দোজা বদর তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত বলে মনে করেন।

(ঢাকাটাইমস/২১ডিসেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :