আইভী’র উপস্থিতিতে গণভবনে উৎসব
দলীয় নানা মত দূরে ঠেলে শেখ হাসিনা যেদিন সেলিনা হায়াৎ আইভী’র হাতে নৌকার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন সেদিন নিশ্চয় তাঁর মনে আশার সাথে আশংকাও কম ছিল না। সব আশঙ্কা দূর করে আইভী নিজে জিতলেন, সাথে সাথে জেতালেন শেখ হাসিনাকেও। এক বিজয়ে সরকার, দল ও ব্যক্তি শেখ হাসিনা, সব সত্তা মিলেমিশে একাকার!
প্রশাসনের প্রতি কড়া নির্দেশ ছিল, জয়-পরাজয় যাই হোক, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু হতে হবে। একদিকে সহিংসতা এড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, অন্যদিকে ভোটারদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ধরে রেখে তাদেরকে ভোটকেন্দ্রে আনা। এমন কঠিন চ্যালেঞ্জে উতরে গিয়ে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী হতে দেখার আনন্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবন শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিণত হয়েছিল যেন উৎসবের হাভেলিতে ।
বহুল আকাঙ্ক্ষিত একটি রাজনৈতিক বিজয় কীভাবে নির্মল আনন্দের উপলক্ষ হতে পারে, গণভবনে শুক্রবারের সন্ধ্যা তার সাক্ষী হয়ে রইল। আইভী গণভবনে ছিলেন ঘণ্টাখানেকের মতো। তাতে কী? ঘণ্টাতেই যেন দূর করেছেন গত কয়েক মাসের যাবতীয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা’র আবহকে। শুধু কি তাই? নীল পাড় আর সাদা জমিনের শাড়িতে যেন ধারণ করে এনেছিলেন নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের শান্তি আর সুষ্ঠুতার সৌন্দর্যকেও।
গণভবনের লবিতে দেখা হওয়া মাত্র সালাম জানিয়ে শেখ হাসিনার পা ছুঁয়ে কদমবুসি করে আইভী সোজা হওয়া মাত্রই হাসিনা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে যে হাসি দিলেন তার মর্মার্থ বুঝতে উপস্থিত অসুবিধা হয়নি কারোরই । হাসির বার্তায় শেখ হাসিনা বুঝিয়ে দিলেন কতটা খুশি আর নির্ভার তিনি!
যাকে তিনি নৌকার দায়িত্ব সপে দিয়েছিলেন, সেই সেলিনা হায়াৎ আইভীও পাল্টা হাসিতে গর্বিত বিজয়ীর মনোভঙ্গি প্রকাশ করলেন। পাল্টা হাসিতে আইভীও বুঝিয়ে দিলেন, অর্পিত দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করতে পেরে তিনিও গর্বিত, আগের থেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসীতো বটেই।
গণভবনের বড় বৈঠকখানার সুসজ্জিত মঞ্চে আইভী যখন গোলাপ-রজনীগন্ধার নৌকা শেখ হাসিনাকে তুলে দিলেন তখন হাততালিতে ফেটে পড়ল হল রুমে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও। এ বিজয়ে যে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিরও অনেক অবদান। তারাও তো মহানগর আওয়ামী লীগের সাথে কম পরিশ্রম করেননি।
১৮ তারিখ আইভী’র হাতে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন তুলে দিয়েছিলেন হাসিনা। ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গণভবনে শেখা হাসিনার হাতে যেন তারই ফুলেল প্রতিদান দিলেন আইভী।
আইভী একা আসেননি। সাথে করে এনেছিলেন নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নানা পদের মিষ্টি। সেই মিষ্টি না খেয়ে কেউ বের হননি গণভবন থেকে। আনুষ্ঠানিকতার পরও শেখ হাসিনার সঙ্গ ছাড়লেন না আইভী। প্রধানমন্ত্রীর সাথে হেঁটে ঢুকে পড়লেন তাঁর ব্যক্তিগত অফিস কক্ষে। সেখানেও খানিকসময় একান্তে কথা বললেন দুজন।
এ সুযোগে আইভী নিশ্চয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন’র নানা সম্ভাবনা আর সমস্যার কথা ভুলেননি। নিশ্চয় তুলে ধরেছেন নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সম্ভাব্য নানা চ্যালেঞ্জের কথা। আর প্রধানমন্ত্রীতো হলরুমের প্রকাশ্য ভাষণেই বলে দিলেন, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে তার সরকারের সহযোগিতার হাত কখনো ছোট হবে না। সাথে এটাও বললেন যে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হওয়াতে উন্নয়ন নতুন গতি পাবে। কারণ ‘বিএনপির যে লুটপাটের ইতিহাস রয়েছে!’
১৮ নভেম্বর মনোনয়ন দিলেন। ২২ নভেম্বর আবার গণভবনে আইভীকে নিয়ে বসতে হলো শেখ হাসিনার। সাথে আসতে বলা হলো নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের প্রভাবশালী সন্তান শামীম ওসমানকেও। কয়েকদিন ধরেই পত্র-পত্রিকায় খবর আসছিল শামীম ওসমান সহযোগিতা করছেন না আইভীকে! শামীম ওসমানের অসহযোগিতা মানেতো বিরাট সংকট। শেষ পর্যন্ত দলীয় কোন্দলে হেরে যাবেন আইভী! তাই তাদেরকে নিয়ে দলীয় সভানেত্রী হিসেবে বসলেন শেখ হাসিনা। সবাইকে বলে দিয়েছিলেন, আইভীকে সমর্থন দিয়ে সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনতে।
শামীম ওসমানও বাইরে এসে সংবাদ মাধ্যমকে বললেন, শেখ হাসিনার প্রার্থী মানে তার প্রার্থী, অসহযোগিতা করার সাওয়ালই উঠে না। এমনকি সংসদ সদস্য পদ বিসর্জন দিয়ে হলেও তিনি আইভীর জন্য কাজ করার ঘোষণা দিলেন। ২২ নভেম্বর এবং ২৪ ডিসেম্বর; এই দুই দিনের ছবিগুলো মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে কত বড় শঙ্কা দূর হয়েছে আওয়ামী লীগের।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নমিনেশন চূড়ান্ত করার ক্ষণে, শেখ হাসিনা নাকি বলেছিলেন, ‘আমার বাছাই ভুল হতে পারে না। জনগণের ওপর আমার আস্থা আছে।’ আইভী জিতে যেমন শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করলেন তেমনি জনগণও তাঁর আস্থার প্রতিদান দিলেন নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করে।
(ঢাকাটাইমস/২৩ডিসেম্বর/এসএএফ/জেবি)