মনোহর মাস্টারের বাড়িতে হাজারো ‘অতিথি’

শিশির মুহাম্মদ মুনির
| আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৮:২৯ | প্রকাশিত : ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৮:০৯

প্রকৃতিতে জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। শীতের আগমনে প্রকৃতি সেজেছে নতুন আমেজে। প্রকৃতির এ রূপটাকে বাড়িয়ে দিতে প্রতিবছর সাইবেরিয়া, হিমালয় ও চীনের আশপাশের শীত প্রধান দেশ থেকে বাংলাদেশে আসে অতিথি পাখিরা। তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের অনেক হাওর। ব্যতিক্রম নয় মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাল্লা গ্রামের মনোহর আলী মাস্টারের পতিত বাড়িটিও। হাজারো অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাড়িটি।

শীত মৌসুম ছাড়াও মনোহর আলী মাস্টারের পতিত বাড়িটি

বছরজুড়েই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। দিনের প্রতিটি মুহূর্ত পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক। তবে শীত আসলে বাড়িটিতে পাখির সমাগম বৃদ্ধি পেতে থাকে। হাজারো পাখির আগমনে পুরো এলাকা পাখির রাজ্যে পরিণত হয়। পাখির কারণে বাড়িটি ‘পাখিবাড়ি’ নামে এলাকায় পরিচিত লাভ করে।

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে হাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বাড়িটি অবস্থিত।

স্থানীয়রা জানান, শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে আসে হাজারো অতিথি পাখি। দিনের বেলায় হাওরে বিচরণ শেষে রাতে হাল্লা গ্রামের মনোহর আলী মাস্টারের পতিত বাড়ির গাছ-গাছালিতে আশ্রয় নেয় হাজারো পাখি। রাত কাটানোর পর ভোরে আবারো খাবারের সন্ধানে তারা ছড়িয়ে পড়ে হাওরে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যা হওয়ার আগেই এসব পাখিরা উড়ে আসছে মনোহার মাস্টারের পতিত বাড়ির হিজল, করচ, জারুল বাগানে। পাখিদের চিউচিউ, কককক, টুকটুক, কিচিরমিচির বিচিত্র রকমের ছন্দমধুর ডাকে অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আশ্রয় নিতে আসা পাখির মধ্যে বকের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া নিশিবক, সাদাবক, লালবক, হাঁস, পানকৌড়ি, জলকুড়া, সরালি, চুটকি, ফুটকি, কোদালিসহ নানা প্রজাতির পাখির সংখ্যাও ছিল চোখে পড়ার মতো।

পাখি দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় করছে পাখিবাড়িতে। বিশেষ করে ছুটির দিনে পাখিপ্রেমীরা ভীড় চোখে পড়ার মতো।

বৃহস্পতিবার পরিবার নিয়ে পাখিবাড়িতে এসেছেন আসাদুজ্জামান নামে একজন। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বলেন, চাকরির কারণে কোথাও যাওয়া সম্ভব হয়না। আজ পাখিবাড়ি দেখতে মৌলভীবাজার থেকে পরিবার নিয়ে এখানে এসেছি। পাখির মেলা দেখে অনেক ভালো লাগছে। নানা প্রজাতির পাখি দেখতে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে।

পাশে দাঁড়ানো তার মেয়ে সুবর্না জানালেন,এখানে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে। বাড়িটিতে এতো সুন্দর পাখি আছে আমার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না।

তাদের মধ্যে অনেকে এসেছেন পাখিবাড়ি পরিদর্শনে। অনেকে মোবাইলে পাখির ছবি তুলছেন। আবার অনেকে সেলফি তুলছেন। তাদের সবার মধ্যে ছিল অনেক আগ্রহ।

কথা হয় মনোহর মাস্টারের ছেলে শিপুর সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের পতিত বাড়িটির আয়তন প্রায় এক একর। প্রায় ৪০ বছর ধরে বাড়িটিতে অতিথি পাখিরা আশ্রয় নেয়। পাখির বিষ্ঠায় দুর্গন্ধময় পরিবেশের সৃষ্টি হলেও তাদের ভালোবেসে কষ্ট করেও বসবাস করছি। দুর্গন্ধবিহীন পরিবেশ গড়ে তুলে বাড়িটি বসবাসের উপযোগী করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আশ্রয়ের জন্য আসা অতিথি পাখিদের নিধনে অনেকে মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে প্রতিবছরই অতিথি পাখির সমাগম হ্রাস পাচ্ছে। বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির

দেশি-বিদেশি পাখি। সেজন্য অতিথি পাখিদের এসব অভয়াশ্রম টিকিয়ে রাখতে পাখি শিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

(ঢাকাটাইমস/২৩ডিসেম্বর/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :