পরচুলা তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের নারীরা

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও
| আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:৩১ | প্রকাশিত : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:২০

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের অভাবগ্রস্ত গ্রাম ভালুকাই।এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বাস করতেন। পুরুষরা অন্যের জমিতে কাজ করলেও নারীরা সারাবছর বাড়িতে বসে সময় কাটাতেন। অভাবী পরিবারের এসব মহিলা পরচুলা তৈরির কারখানায় কাজ পেয়ে বদলে গেছে জীবনচিত্র।

স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা ও অসহায় দরিদ্র নারীরা নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছেন। সেই সাথে বদলে দিয়েছেন ভালুকাই গ্রামের অর্থনীতির চাকা।

আর এই পরিবর্তনের মূল উদ্যোক্তা হলেন কনিকা বেগম নামে একজন নারী। বিয়ে হওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে ঢাকার টঙ্গী এলাকার একটি হেয়ার ফ্যাশন কারখানায় কাজ নেয়। সেখানে কাজ করতে করতে সবকিছু আয়ত্বে নিয়ে আসেন কনিকা। বিয়ের পর স্বামী সঙ্গেও ওই কাজ করতে থাকেন। তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ভালুকাই গ্রামে ফিরে আসেন এবং স্বামীর বাড়ির ওঠানে স্থাপন করেন টাক মাথাওয়ালাদের মাথা ঢাকার বিকল্প চুলের ক্যাপ পরচুলা তৈরির কারখানা। বিভিন্ন বিউটি পার্লার থেকে সংগ্রহ করেন নারীদের মাথার চুল। ওই চুল দিয়ে তৈরি করছেন টুপি বা ক্যাপ। সাড়ে ৩ বছর আগে শুরু করা হয় ক্ষুদ্র এই শিল্পটি। তার উৎপাদিত চুলের টুপি রাজধানী ঢাকা ঘুরে ভারতসহ চলে যাচ্ছে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

কঠোর পরিশ্রমী ও আত্মপ্রত্যয়ী এই নারী চুলের টুপি তৈরি করে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সেই সাথে ভালুকাই গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা, অসহায় নারীদের। শুধু তাই নয়, সংসারের অভাবের কারণে যেসব মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছিল, তাদেরও তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছেন তার কারখানায় কাজ দিয়ে। তার হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামীণ জনপদের শতাধিক পরিবার।

ওই গ্রামের জনিফা বেগম, রোকসানা বেগম, রোমা ও সোহানা চকমিল দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি কনিকার পরচুলা কারখানায় কাজ করে মাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় করছেন। তারা নিজেদের লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবা-মাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের কনিকা চুলের টুপি (পরচুলা) তৈরি করে নিজে স্বাবলম্বী হন, এলাকার মেয়েদেরও রোজগারের পথ খুলে দেন। এখানে কাজ করে অনেকে শক্ত হাতে হাল ধরেছেন স্বামীর সংসারের।

কনিকা বেগম বলেন, বিভিন্ন বিউটি পার্লার থেকে চুল সংগ্রহ করে চুলের টুপি তৈরি করি। এজন্য প্রতিজনকে মজুরি দেয়া হয় ৩শ টাকা।

তিনি আরো জানান, এক সময় আমি একাই এই কাজ করতাম। পরে গ্রামের অন্যন্য মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলি। প্রায় ৭০ জন মহিলা কারখানায় কাজ করে। আর আমি কাজের অর্ডার গ্রহণ ও মালামাল সরবরাহ করি। এতে আমার মাসিক আয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

ওই গ্রামের গৃহবধূ লাভলী বেগম, শাহিনা বেগম জানান, আগে ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা কখনও ছুঁয়েও দেখতে পারতাম না। স্বামীরা টাকা এনে ড্রয়ারে তালা দিয়ে রাখতেন। এখন কনিকা আপার সহযোগিতায় আমরা কাজ করে সবসময় ২/৪ হাজার টাকা আমাদের কাছে রাখতে পারি। ওই টাকা দিয়ে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেদের যে কোন শখের কেনাকাটা করতে পারি। প্রসাধনী কিনতে পারি। স্বামীকে বাজার খরচে সহযোগিতা করতে পারি। অভাবের কারণে আগে সামান্য কারণে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ হতো। এখন আর ঝগড়া বিবাদ হয় না। স্বামীকে সহযোগিতা করতে পারায় সংসারে এখন আমাদের মূল্যায়ন বেড়ে গেছে।

এ ব্যপারে জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মোর্শেদ আলী খান বলেন, সদর উপজেলার ভালুকাই গ্রামের কনিকা এখন সফল একজন নারী উদ্যোক্তা। তার মাধ্যমে আরো শতাধিক নারী চরম অভাবের অন্ধকারে বেঁচে থাকার প্রেরণা পেয়েছে। স্বাবলম্বী এই নারী উদ্যোক্তাকে জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মানসিক সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৭ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :