জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষ
মাদারীপুর জেলার শিবচরের আড়িয়াল খাঁ নদে খাঁচায় করে মাছ চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। জলাশয়ে অল্প জায়গায় খাঁচা করে করে ভাগ্য বদল করছে অনেক যুবক। শিবচরে এ খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রচলন করেন মৎস চাষী তানজিল আহমেদ। আড়িয়াল খাঁ নদের এক শাখা নদী শিবচরের কোল ঘেঁষে পুলিয়া নামক এলাকার জলাভূমিতে দীর্ঘদিন ধরেই এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার এ পদ্ধতি দেখে অনেকেই খাঁচা করে মাছ চাষ শুরু করেছেন। আর এই চাষ করা মাছ দিয়ে স্থানীয়দের মাছের চাহিদা অনেকাংশেই মেটানো হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজী শরিয়তউল্লাহ সেতুর উত্তর-পশ্চিমে শিবচরের শেষ সীমানায় আড়িয়াল খাঁ নদের শাখা নদী। এটি আগে মূল নদীই ছিল। বর্তমানে স্থানীয়দের কাছে মরা নদী বলে খ্যাত এই নদে চলছে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ। শিবচরের তানজিল আহমেদ প্রথমে মাছ চাষ শুরু করলেও বর্তমানে স্থানীয় অনেক যুবকই শুরু করেছে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ। ফলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে অনেক যুবকই এখন মুক্ত বলে মাছ চাষী যুবকেরা জানান।
১৪ থেকে ১৫ বছর আগে চর পড়ে আলাদা একটি নদী হয়ে যায় আড়িয়াল খাঁ নদের একটি অংশ। তবে আলাদা নদ হলেও মূল নদীর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ নেই এর। শুধু বর্ষা মৌসুমে মূল নদী থেকে পানি আসে এই মরা নদে।
শিবচরের কোল ঘেঁষে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পুলিয়া ও চান্দ্রা এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন শিবচরের তানজিল আহমেদ নামের এক যুবক। প্রায় ছয় বছর ধরে নদীর এই অংশে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন তিনি।
এছাড়াও তারই পরামর্শে শিবচরের উৎরাইল এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদে গত এক বছর ধরে চলছে খাঁচায় মাছের চাষ। এখন এখানে বড় আকারের দুটি খাঁচা রয়েছে।
জানতে চাইলে তানজিল আহমেদ জানান, টেলিভিশনের একটি প্রোগ্রাম দেখে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের চিন্তা আমার মাথায় আসে। ঠিকাদারি ব্যবসা ছেড়ে চাঁদপুরের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ নেই। নিজ এলাকায় ফিরে মাছ চাষের উপযুক্ত স্থানও পেয়ে যাই।
চাষ পদ্ধতি
খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তানজিল বলেন, প্রথমে আট লাখ টাকা বিনিয়োগ করে একটি ফ্রেমে ত্রিশটি খাঁচা তৈরি করি। প্রতিটি খাঁচার গভীরতায় ৬ ফুট, পাশে ১০ এবং লম্বায় ২০ ফুট। প্রতিটি খাঁচাতে তিনি মনোসেক্স তেলাপিয়া জাতের মাছ চাষ করছেন। বছরের জুলাই মাসে ০.২ মি.মি. সাইজের পোনা মাছ কিনে খাঁচার মধ্যে লালন করতে শুরু করেন। পাঁচ মাসের মধ্যেই মাছ বিক্রির উপযুক্ত হয়। সাধারণত ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম হলেই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেন। স্থানীয় বাজারে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা খুচরা মূল্যে কেজি দরে বিক্রি হয় এ মাছ।
খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের সুবিধা জানতে চাইলে তিনি জানান, খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পুকুরের প্রয়োজন হয় না। এ ধরনের জলাশয়ে একাধিক খাঁচা করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। তাছাড়া বড় ধরনের বিনিয়োগ মূলত একবারেই করতে হয়। সাধারণত খাঁচা তৈরি করতেই খরচ বেশি পড়ে যায়। তবে খাঁচা তৈরির পরে দীর্ঘদিন এই একই খাঁচা ব্যবহার করা যায়। ত্রিশটি খাঁচার মাছের জন্য প্রতিদিন এক বস্তা করে খাবার লাগে বলে তিনি জানান।
তবে এক্ষেত্রে সহজ শর্তে ব্যাংক লোনের সুবিধা থাকলে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে অনেক যুবকই স্বাবলম্বী হতে পারবে বলে মনে করেন তানজিল।
শিবচর উপজেলা মৎস্য অফিস জানায়, খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষে অনেক সুবিধা। এতে অল্প জায়গায় অনেক মাছ চাষ করা সম্ভব। এ মাছের চাহিদাও স্থানীয় বাজারে ব্যাপক। এতে চাষীরা সফল হচ্ছে। তাছাড়া উপজেলা মৎস অফিস এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহীদের সহযোগিতাও করে থাকে।
(ঢাকাটাইমস/২৮ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএ)