নিবন্ধন হারানোর ঝুঁকিতে বিএনপি

মোসাদ্দেক বশির, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:১৪ | প্রকাশিত : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৮:১৮

আইন মানলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’কে অংশগ্রহণ করতেই হবে। অংশগ্রহণ না করলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২ অনুযায়ী দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। শুধু বিএনপি নয়, দশম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি’র সাথে নির্বাচনে অংশ না নেয়া ২৭টি রাজনৈতিক দলকেও একই ভাগ্য বরণ করতে হবে যদি তারা আবারো একই পথে হাঁটেন।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (৯০ এইচ) (১) দফায় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের এ নির্দেশনা রয়েছে। ওই দফার (ই) উপ-দফায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত কোন রাজনৈতিক দল পর পর দুইবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নিবন্ধন বাতিল হবে।

তবে (৯০ এইচ) (২) দফায় বলা হয়েছে, শর্ত থাকে যে দফা (১) এর (সি), (ডি) ও (ই) এর অধীন নিবন্ধন বাতিলের পূর্বে নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে শুনানির সুযোগ প্রদান করবে।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ঢাকাটাইমস’কে বলেন, আইনে আছে পরপর দু’বার জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধন বাতিল হবে। এ বিষয়ে শুনানিরও প্রয়োজন হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমস’কে বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি। নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য একটি অনিবার্য পদক্ষেপ। আমরা নির্বাচন বিশ্বাস করি। নির্বাচন আমরা করবো। কিন্তু আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। যেখানে সকল দলের অংশগ্রহণ থাকবে”।

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১২ দল অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক ও জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে। বাকী ১০টি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অংশ হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নিবন্ধিত দলের পক্ষ থেকে অন্য দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট করা হয়েছে উচ্চ আদালতে। রিটটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে শুনানি হবে হাইকোর্টে। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করায় ওই রিটে জাসদ ও ওয়াকার্স পার্টির নিবন্ধন বাতিল চাওয়া হয়েছে। এ দুইটি দল দুইবার নিজেদের দলীয় প্রতীক মশাল ও কাস্তে বাদ দিয়ে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে।

বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটটির প্রাথমিক শুনানি শেষে মুলতবি রয়েছে।

রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ ঢাকাটাইমসকে বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ৯০এইচ(ই) অনুযায়ী পরপর দু’বার সংসদ নির্বাচন না করলে দালের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন। কাস্তে এবং মর্শাল দু’বার নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন করে। তাই আইন অনুযায়ী এই দু’দলের নিবন্ধন বাতিল হতে বাধ্য।

ওই রিট আবেদনে বলা হয়, আইনের ৯০(এ) ধারা অনুযায়ী রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন করতে হয়। আইনমতে নিজ নিজ দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে প্রার্থীরা। কিন্তু বিগত ৯ম ও ১০ম নির্বাচনে রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনু দুই বার ১৪ দল থেকে নৌকা মার্কায় নির্বাচন করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র ধানের শীষ নিয়ে ২০ দলের অন্যান্য দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। যা আরপিও ৯০(এ) ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে ৪১টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত রয়েছে। তবে ২০১৩ সালের বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামী’র নিবন্ধন হাইকোর্ট থেকে বাতিল করা হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে ওইদিনই আপিল করা হয়। তবে আপিলের এখনো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। এদিকে গত ১৪ ডিসেম্বর জামায়াতের দলীয় প্রতীক কোনো রাজনৈতিক দলকে না প্রদান করতে ইসিকে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩শ আসনের মধ্যে ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৫৩ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নির্বাচনে ১২টি দল অংশগ্রহণ করে। দলগুলো হলো: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি-জাপা, জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং গণতন্ত্রী পার্টি।

৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচনে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে।এগুলো হলো: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণফোরাম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।

(ঢাকাটাইমস/২৯ডিসেম্বর/এমএবি/এসএএফ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে: বিএনপির আরও ৫ নেতা বহিষ্কার

সরকারকে পরাজয় বরণ করতেই হবে: মির্জা ফখরুল

এমপি-মন্ত্রীর স্বজন কারা, সংজ্ঞা নিয়ে ধোঁয়াশায় আ.লীগ

মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও এক নেতা বহিষ্কার 

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল

মন্দিরে আগুন ও দুই শ্রমিক পিটিয়ে হত্যায় বিএনপির উদ্বেগ, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়: রিজভী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :