বস্তি থেকে হলিক্রসে, ১৩ জিপিএ-৫

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৩:৩৯ | প্রকাশিত : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৮:২০

দারিদ্র, জীবন-সংগ্রাম কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি আল-আমিন হোসেন ও হাসিনা আক্তারের ছোট্ট জীবনে। কাঁচামালের দোকান চালিয়েও এরা দুজন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। বিস্ময়কর এই সাফল্যগাঁথা সৃষ্টির পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে দেশের খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের বৈকালিক লেখাপড়া কর্মসূচি। আল-আমিন ও হাসিনার মতো আরো ১১ জন অর্থাৎ এই কর্মসূচি থেকে মোট ১৩ জন শিক্ষার্থী এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার স্কুলের নোটিশ বোর্ডে রেজাল্ট দেখে তেজগাঁও বস্তির বাসিন্দা আল-আমিন ও হাসিনা আক্তার যখন উল্লাসে ফেটে পড়ছিল, তখন বিস্ময় ছড়িয়েছিল আশপাশের অনেকের মাঝে। এমন ঘটনায় বিস্মিত না হয়ে উপায় আছে? কে, কবে ভেবেছিল, রাজধানীর অভিজাতদের একটি স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পাবে হতদরিদ্র বস্তির এই ছেলেমেয়েরা!

তাদের হাসি যেন আভা ছড়িয়ে দিচ্ছিল চারদিকে। মুখে দারিদ্র্যের ছাপ, কিন্তু চোখে জ্বলজ্বল উজ্জ্বল আগামীর ইঙ্গিত। চোখে-মুখে এক বিরল আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলল আল-আমিন।

আল-আমিন শোনাল তাঁর সাধারণ জীবনের অসাধারণ গল্প। সে জানাল, তেজগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে কাঁচামালের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে সে। যা আয় হয় তা দিয়ে তাঁর লেখাপড়ার খরচ চলে যায়, বাকি টাকা পরিবারকে দেয় সে।

এই ছোট্ট বয়সে ঢাকায় জীবনযুদ্ধ! পড়াশুনা করল কীভাবে? আবার রেজাল্টও করল শীর্ষ পর্যায়ের! আল-আমিনের মুখ থেকেই শোনা যাক এই অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প।

সে বলল, “আমি সকাল ৭টায় দোকান খোলে বসি। বেলা বারোটা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ব্যবসা করে দুপুর একটায় স্কুলে গিয়ে পাঁচটা পর্যন্ত ক্লাস করতাম। ক্লাস থেকে ফিরে এসে আবার দোকান খুলতাম। দোকান চলত রাত ১২টা পর্যন্ত। দোকান করার ফাঁকে ফাঁকেই পড়াশুনা করতাম। কোনো বিষয় না বুঝলে আশ-পাশের কাউকে জিজ্ঞাস করে বুঝে নিতাম”।

আল-আমিনের ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। বিত্তবানের সন্তানেরাই যখন পথ হারিয়ে নিজেদের জীবনে অনিশ্চয়তা ডেকে আনে, সেখানে বস্তিবাসী এই ছেলে-মেয়েদের স্বপ্ন আদৌ কি বাস্তবায়ন সম্ভব? ইতোমধ্যেই অনিশ্চয়তার আশঙ্কা যেন কঠিন সত্য হয়ে দেখা দিতে শুরু করেছে এদের জীবনে।

ঢাকার স্কুলগুলো ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম। আল-আমিন দুটি স্কুলে চেষ্টা করেছিল ভর্তি হতে। ব্যর্থ হয়েছে সে। তরকারি বিক্রেতা বাবা, কর্মজীবী মা আর চার ভাইবোনকে নিয়ে আল-আমিনদের সংসার। ভালো রেজাল্ট করায় তাঁকে নিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে পরিবারও। কিন্তু সামনের রাস্তার মোড়ে মোড়ে যে অনিশ্চয়তার হাতছানি।

আল-আমিনের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশেই ছিল আরেক বিস্ময় হাসিনা বানু। সে জানাল, আল- আমিনের সঙ্গে তাঁর গল্পের তেমন কোনো অমিল নেই। একই অর্থনৈতিক অবস্থা। জীবনের মৌলিক চাহিদা কোনোমতে মিটিয়ে বেঁচে থাকার গল্প তাঁরও।

হাসিনা জানাল, আল-আমিন এবং সে একই জায়গায় কাঁচামালের ব্যবসা করে। পড়ালেখা করে অনেক দূরে যাওয়ার ইচ্ছে তাঁর।

বলল, পড়ালেখা করে দারিদ্র্যকে জয় করতে চায় সে। হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজের কথা উল্লেখ করে হাসিনা জানাল, এখানে পড়াশুনায় তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হত না।

“হলিক্রস স্কুলের জন্যই আমরা পড়াশুনা করতে পেরেছি। এমন বিনা পয়সায় কি আমরা আর কোথাও পড়তে পারবো?।

এ বিষয়ে ঢাকাটাইমস কথা বলেছিল, হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক শ্রীমন্ত পিউস রড্রিক্স’র সঙ্গে। তিনি জানালেন, স্কুলের বিকালের লেখাপড়া কর্মসূচির আওতায় এবার ১৭ জন পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একজন পরীক্ষা দিতে পারেনি। যে ১৬ জন পরীক্ষা দিয়েছে তারা সবাই ভালো রেজাল্ট করেছে। তাদের মধ্যে ১৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

তিনি বলেন, “বিকালে লেখাপড়া কর্মসূচির সঙ্গে মূল স্কুলের পড়ালেখার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিকালের লেখাপড়া কর্মসূচির চালানোর জন্য আমরা সাতজন টিচারকে নিয়োগ দিয়েছি।

এখানে যারা পড়ে তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। দুপুর একটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তাদের ক্লাশ নেওয়া হতো। মূলত হতদরিদ্র, বস্তিতে থাকে এমন শিশুরাই এখানে পড়ে”।

হলিক্রস স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এ কর্মসূচি পরিচালনা করা হয় বলে জানান তিনি।

কবে শুরু হয়েছিল হলিক্রসের এমন কর্মসূচি? পিউস রড্রিক্স জানালেন, সম্ভবত ১৯৯৪-১৯৯৫ সেশনে শুরু হয়েছিল বিকালের স্কুল। সেই থেকে হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের এই কর্মসূচি শুধুমাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অদ্যাবধি চলছে।

হলিক্রসের এই শিক্ষক বললেন, দেশের প্রতিটি স্কুলেরই এমন কর্মসূচি হাতে নেওয়া উচিত যাতে করে সুবিধা বঞ্চিত শিশুরাও পড়ালেখা করতে পারে।

হলিক্রস নিজেদের সাধ্যের মধ্যে থেকে এই গরিব ছেলে-মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পার করতে সফল হয়েছে। কিন্তু বাকি পথ কীভাবে যাবে এরা? রাষ্ট্র, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি ব্যক্তি উদ্যোগও পারে আল-আমিন কিংবা হাসিনার মতো আর্থিকভাবে গরিব ছেলে-মেয়েদের বাকি পথটুকু মসৃণ করতে।

(ঢাকাটাইমস/৩০ডিসেম্বর/জেআর/এসএএফ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

কুবির তিন দপ্তরে শিক্ষক সমিতির তালা

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন

ববির মেডিকেলে  চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলা, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

ইউনিভার্সিটি অফ স্কলার্সের বিবিএ ১৫তম ব্যাচের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত

এবার কুবির আরেক সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ

গুচ্ছের হাবিপ্রবি কেন্দ্রে তিন ইউনিটে পরীক্ষার্থী ১২৩৪১ জন

জাবি অধ্যাপক তারেক চৌধুরীর গবেষণা জালিয়াতিতে তদন্ত কমিটি

বিএসএমএমইউর ১২৪ শিক্ষক-চিকিৎসক ‘গবেষণা অনুদান’ পেলেন সাড়ে ৪ কোটি টাকা

ঢাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থীর মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন

বুয়েটে রাজনীতি: হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার পর আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :