চোখের জলে ভেসে শেষ শয্যায় এমপি লিটন

উত্তম সরকার ও আবু বক্কর সিদ্দিক, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে
| আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:২৪ | প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:৩৯

হাজারো মানুষকে কাঁদিয়ে চির বিদায় নিলেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। হত্যার দুই দিন পর নিজ এলাকা সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়নের সাহাবাজ (মাস্টারপাড়া) গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয় এই সংসদ সদস্যকে।

দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টরে করে লিটনের মরদেহ সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন সংলগ্ন একটি মাঠে নিয়ে আসা হয়। হেলিকপ্টরটি বামনডাঙ্গা আব্দুল হক কলেজ মাঠে নামানোর কথা থাকলেও ওই মাঠে অবতরণ করা যায়নি। পরে কলেজ মাঠ থেকে আধা কিলোমিটার দূরে রেল স্টেশনের পাশে একটি জমিতে টেলিকপ্টারটি অবতরণ করে। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বামনডাঙ্গায় শাহবাজ মাস্টারপাড়ায় নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয় লিটনের মরদেহ।

সোমবার বিকাল পাঁচটায় তার এই শেষকৃত্যে অংশ নেয় নির্বাচনী এলাকা ও দূর দূরান্ত থেকে আসা বিপুল পরিমাণ মানুষ। এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির তৈরি হয়।

গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে নিজ বাজির অভ্যর্থনাকক্ষে লিটনকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। বরিবার লিটনের মরদেহ আনা হয় ঢাকায়। সোমবার সকালে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

এই আনুষ্ঠানিকতার পর লিটনকে নেয়া হয় তার নিজ জন্মস্থানে। আছরের নামাজের পর বামনডাঙ্গাস্থ শাহবাজ মাস্টারপাড়ায় নিজ বাসভবনে উঠানে হয় সবশেষ জানাজা। এতে ইমামমতি করেন কাঠগড়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম জামাল উদ্দিন।

এর আগে লিটনের মরদেহ এলাকায় নেয়া হলে বিপুল সংখ্যক মানুষ এই নেতাকে শেষবারের মতো দেখতে সেখানে যায়। লিটনের বাড়ির উঠোনে তার প্রিয় গাবগাছ তলায় শায়িত লিটনকে শ্রদ্ধা জানায় দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনতা। মরদেহ নামানোর সময় উপস্থিত জনতাদের মধ্যে শোকের মাতম সৃষ্টি হয়।

এ সময় গাইবান্ধার আরেক সংসদ সদস্য ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, লিটনের খুনি জামায়াত-শিবির জঙ্গি গোষ্ঠীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

আওয়ামী লীগের পক্ষে লিটনের কফিনে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় মৌলবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল যার প্রতিবাদ করেছিলেন লিটন। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে। আমরা পরিস্কারভাবে বলতে চাই এই অপশক্তির বিষদাঁত ভেঙে দেয়া হবে।’

গাইবান্ধা সদর আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিণি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ শামস-উল-আযম হিরুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আরও নয় জন আটক এই জনপ্রতিনিধিকে হত্যার ঘটনায় রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত আরও ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রথম দফায় আটক ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জনকে এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি তিন জনকে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সুন্দরগঞ্জে আধা বেলা হরতাল পালিত লিটন হত্যার প্রতিবাদ ও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রবিবারের ধারাবাহিকতায় সোমবারও বিক্ষোভ হয় সুন্দরগঞ্জে। বেলা ১২টা পর্যন্ত আধা বেলা হরতাল পালন করে বিক্ষোভকারীরা। হরতাল চলাকালে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ থাকে। সোমবার সকাল সাতটায় লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে আসা সান্তাহারগামী লোকাল ট্রেনটিকে বামনডাঙ্গা রেল স্টেশনে আটক করে রাখা হয়।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী জঙ্গি চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কারণেই এমপি লিটনকে হত্যা করা হয়েছে। তারা বলেন, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গোটা সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় দুই দিনব্যাপী তা-ব চালায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এসময় রেল লাইন উপড়ে ফেলা, সুন্দরগঞ্জ থানা ও বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে চার পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। এছাড়া একজন রিক্সা চালক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে হত্যা করে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। এসব সন্ত্রাসী তৎপরতার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় জঙ্গিবাদী সাম্প্রদায়িক চক্র অত্যান্ত পরিকল্পিতভাবে লিটনকে হত্যা করেছে বলে তারা দাবি করে।

ট্রেনের নিচে বোমা সদৃশ বস্তু হরতালের কারণে বামনডাঙ্গা স্টেশনে আটক লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে আসা সান্তাহারগামী ওই লোকাল ট্রেনটির চাকার নিচে একটি বোমা সদৃশ বস্তু দেখা যায়। এসময় ওই বস্তু দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে হয়ে পড়ে এলাকার মানুষ। পরে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলে পুলিশ ট্রেন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে নেয়। রংপুর থেকে বোমা বিশেষজ্ঞ দল না আসায় হরতাল প্রত্যাহার করা হলেও ট্রেনটি বামনডাঙ্গা স্টেশনেই আটক থাকে। ফলে লালমনিরহাট-বোনারপাড়া-সান্তাহার রেল সেকশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

(ঢাকাটাইমস/০২জানুয়ারি/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :